আক্রান্ত ৫ হাজার, বেড আছে মাত্র ৪৩০টি
চট্টগ্রামে ৯০ শতাংশ রোগী বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন
নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসায় শয্যা আছে মাত্র ৪৩০টি। এদিকে চাপ সৃষ্টির পরও করোনা চিকিৎসায় এগিয়ে আসছে না বেসরকারি হাসপাতালগুলো। আর যেসব হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেগুলোয়ও আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেনসহ চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যাপক সংকট রয়েছে। এ কারণে ৯০ শতাংশ করোনা রোগীকে বাধ্য হয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চসিক আড়াইশ’ শয্যার একটি আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তুলেছে। সেখানে ভেন্টিলেটর কিংবা আইসিইউ পাওয়া না গেলেও পাওয়া যাবে অক্সিজেন সাপোর্ট।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) ২৫ মার্চ নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। চট্টগ্রামে রোববার পর্যন্ত ৫ হাজার ৮৪ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৭১ জন। মারা গেছেন ১১৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মহানগরীতে ৩ হাজার ৫৬৭ জন এবং জেলায় ১ হাজার ৫১৭ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় মাত্র ২৯টি আইসিইউ, ১০টি ভেন্টিলেটর এবং ৪৩০টি বেড আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০টি আইসিইউসহ ১০০টি বেড, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি আইসিইউসহ ১০০ বেড, বিআইটিআইডিতে ৩০ বেড, ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ফিল্ড হাসপাতালে ১০টি ভেন্টিলেটরসহ ৫০ বেড, বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতালে ৪টি আইসিইউসহ ৫০ বেড এবং বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত ও সরকারি পরিচালনায় হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৫টি আইসিইউসহ ১০০ বেড রয়েছে। এছাড়া হালিশহরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার। ২-১ দিনের মধ্যে এখনে রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে।
চট্টগ্রামে নিবন্ধিত ছোট-বড় ৯১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ২০টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, যেগুলো সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা দিতে সক্ষম এবং পর্যাপ্ত আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেন সুবিধাসহ সব ধরনের সুবিধা রয়েছে। এ ধরনের ১২টি হাসপাতালকে প্রথমে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করেছিল চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য দফতর। পরে বেসরকারি ক্লিনিক মালিকরা পরিত্যক্ত হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালকে ১০ শয্যার আইসিইউসহ ১০০ শয্যার করোনা হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়। হাসপাতালটি বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালনার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাওয়ায় সরকারিভাবে এ হাসপাতাল পরিচালনা করতে হচ্ছে। সেখানে সরকারিভাবে ডাক্তার, নার্সসহ সব ধরনের জনবল নিয়োগের পাশাপাশি বরাদ্দ দেয়া হয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। এছাড়া হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে শুরু হয়েছে কোভিড-১৯ রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা।
তবে নামিদামি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে কোভিড রোগীর চিকিৎসায় নামাতে পারছে না প্রশাসন। রোববার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজ নিজ হাসপাতালে কোভিড রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে প্রশাসনের চোখে ধুলো দেয়ার চেষ্টা করছে।
জানা যায়, স্বাস্থ্য বিভাগ প্রথমে যে ১২টি বেসরকারি হাসপাতালকে পর্যায়ক্রমে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করেছিল সেগুলোয় ১৫০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। কিন্তু এসব আইসিইউতে সেবা পাচ্ছেন না কোভিড রোগীরা।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি যুগান্তরকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে করোনা রোগী বেড়েছে। সব রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। কেবল যেসব রোগীর শ্বাসকষ্টসহ জটিল লক্ষণ রয়েছে, তারাই হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন। বাকিরা বাড়িতেই চিকিৎসা নেবেন। করোনা চিকিৎসায় এখন শুধু বেসরকারি ১২টি হাসপাতালই নয়; সবকটি হাসপাতাল-ক্লিনিককে করোনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি করাতে হবে। হাসপাতালে প্রতিদিন চার্ট ঝুলিয়ে রাখতে হবে। কতজন কোভিড এবং কতজন নন কোভিড রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি করছে না- এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
