Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মনোনয়ন দৌড়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির এক ডজন নেতা

Icon

জেহাদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মনোনয়ন দৌড়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির এক ডজন নেতা

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলা নিয়ে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা সমমনা নেতকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত।

যোগ দিচ্ছেন সমাবেশসহ নানা সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ডজনখানেক নেতা মাঠে সক্রিয়। তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ বেলকুচি ও যমুনাবিধৌত চৌহালীর ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসন ঘিরে একটি কথা চালু রয়েছে।

এ আসন থেকে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হন, সে দলই সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার পর থেকে এমনটিই হয়ে আসছে।

এ আসনে কোনো দলের একক আধিপত্য নেই। বিশেষ করে নব্বইয়ের পটপরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালে প্রথম জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির শহীদুল্লাহ খান। ১৯৯৬ সালে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আবদুল লতিফ বিশ্বাস।

২০০১ সালে বিজয়ী হন বিএনপি প্রার্থী বিচারপতি মোজাম্মেল হক। ২০০৮ সালে ফের বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আবদুল লতিফ বিশ্বাস। সবশেষ ২০১৪ সালে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আবদুল মজিদ মণ্ডল।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হচ্ছেন- এমপি আবদুল মজিদ মণ্ডল, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকন্দ, মীর মোশারফ হোসেন ও মুশফিকুর রহমান মোহন।

অপরদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- হুমায়ুন ইসলাম খান, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, গোলাম মওলা খান বাবলু ও রাকিবুল করিম পাপ্পু। এছাড়া জামায়াত নেতা আলী আলম এ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে।

এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিদ্যমান থাকায় এর ঢেউ গিয়ে লেগেছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যেও।

এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মণ্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান বর্তমান এমপি আবদুল মজিদ সজ্জন ব্যক্তি হলেও রাজনীতির মাঠে তিনি নতুন। তাছাড়া শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকা ছাড়াও গত সাড়ে চার বছরে তার কর্মকাণ্ডে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার প্রতি বিরক্ত।

ফলে অনেকেই তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে আবদুল মজিদ মণ্ডল তার ছেলেকে সামনে নিয়ে আসতে চাইছেন। স্থানীয় বেশ কয়েকটি সামাজিক অনুষ্ঠানে মণ্ডল গ্রুপের পরিচালক আবদুল মোমিন মণ্ডলকে ভিন্নভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলে মজিদ মণ্ডল ও তার ছেলে মোমিন মণ্ডল ফোন ধরেননি। পরে এমপির এপিএস তাজউদ্দিন জানান, এমপি অসুস্থ এবং মোমিন মণ্ডল অপরিচিত নম্বর ধরেন না।

কথা হয় আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থী দুইবারের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসের সঙ্গে। প্রথমে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ও পরে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হন। বর্তমানে তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

সাবেক মৎস্যমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস যুগান্তরের কাছে দলের ভেতর কোন্দলের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। মন্ত্রী থাকার সময় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছি।

আবারও মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করব। বেলকুচিকে আধুনিক উপজেলায় রূপ দেব। চৌহালীকে যমুনার গ্রাস থেকে রক্ষা করে নতুন করে গড়ে তুলব।

উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী আকন্দ সম্পর্কে তার সমর্থকরা জানান, দলকে তিনি সংগঠিত করার কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি হচ্ছেন আমাদের ভরসা ও আস্থার জায়গা।

তরুণ ও মেধাবী নেতা আলী আকন্দ বলেন, সততা দিয়ে সরকারের উন্নয়ন কাজ এবং রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জরিপে বেলকুচি উপজেলা সুনাম অর্জন করেছে।

জাইকার সমীক্ষায় ১০০টি উপজেলার মধ্যে বেলকুচি জায়গা করে নিয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয় এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হতে পারলে বিপুল উৎসাহে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারব।

রাজধানীর বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বেলকুচির সন্তান মীর মোশারফ হোসেন একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন। নির্বাচন সামনে রেখে তিনি অসহায়দের সাহায্য-সহযোগিতা করছেন নিয়মিত।

জানতে চাইলে মীর মোশারফ হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। তৃণমূলের সঙ্গে আমার নীরব সম্পর্ক রয়েছে। আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

কেন্দ্রীয় যুবলীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুশফিকুর রহমান মোহন বলেন, ২৫ বছর ধরে এলাকাবাসীর কল্যাণে কাজ করছি। মজিদ মণ্ডল অসুস্থ এবং সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাস বিতর্কিত। মানুষ নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছে। মনোনয়ন পেলে এলাকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে।

এদিকে বিএনপির মধ্যেও বিভেদ বিদ্যমান। আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জোরালো ভূমিকা না থাকলেও একে অপরের সমালোচনা নিয়েই যেন তারা বেশি ব্যস্ত।

বিশেষ করে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে তাদের বিশেষ কোনো ভূমিকা না থাকায় এ নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ রয়েছে। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম খান স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন।

হুমায়ুন ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ২০০৮ সালে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলের মধ্যে বিরোধ নিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি বড় দল। একাধিক প্রার্থী থাকতেই পারে। মনোনয়ন পেলে সবাইকে নিয়ে জয় নিশ্চিত করব।

বেলকুচি ডিগ্রি কলেজসহ একাধিক বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আবু কোরাইশীর ছেলে ও সাবেক এমপি শহিদুল্লাহ খানের ভাতিজা গোলাম মওলা খান বাবলু বেলকুচি উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা।

স্থানীয়রা তাকে সজ্জন ব্যক্তি হিসেবেই জানে। জানতে চাইলে গোলাম মওলা বলেন, দলের নেতাকর্মী ও হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। মনোনয়ন পেলে আসনটি সহজেই উদ্ধার করতে পারব।

অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সহসভাপতি রকিবুল করিম খান পাপ্পুর সমর্থকরা বলছেন, বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী তার সঙ্গে আছেন।

নির্বাচন নিয়ে কথা হলে রকিবুল করিম বলেন, দলের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব-বিভেদ নেই। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী উল্লেখ করে তিনি বলেন, দল মনোনয়ন দিলে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এ আসনের বিজয় নিশ্চিত করব।

নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে কথা হয় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঙ্গে।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, এলাকায় ঘরোয়া বৈঠক ও কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। নবগঠিত কেন্দ্রীয় বিএনপির এই সহপ্রচার সম্পাদক আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী।

তিনি বলেন, ২০০৫ সাল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। দেশনেত্রী মাঠের কর্মীদের মূল্যায়ন করবেন। বসে নেই জামায়াত। দলের নেতাকর্মীরা বেলকুচি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ আলী আলমকে নিয়ে কৌশলে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী আনাসর আলী সিদ্দিকীর ছেলে ও চৌহালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুন, চৌহালী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন ও অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

মনোনয়ন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম