Logo
Logo
×

শেষ পাতা

টিকটক মডেল বানানোর ফাঁদে পাচার

আরেক নির্যাতিত তরুণীর ভিডিও ভাইরাল

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন 

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আরেক নির্যাতিত তরুণীর ভিডিও ভাইরাল

প্রতীকী ছবি

ভারতে নির্যাতনের শিকার এক তরুণীর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই আরও এক নির্যাতিত তরুণীর ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যায়, নির্যাতনের পর এ তরুণী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তার দুই পায়ে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখা গেছে। এতে বাংলায় কথোপকথন শোনা যাচ্ছিল। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা এ ভিডিওর ঘটনাস্থল ও ভুক্তভোগী তরুণী সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সাইবার বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করছেন। 

একাধিক সূত্র জানায়, শুধু এ তরুণীর ভাইরাল ভিডিও নয়, আরও ছয় তরুণীর নির্যাতনের ভিডিও পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারাও ভারতের কোনো কোনো গোপন আস্তানায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারাও বাংলাদেশি বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নতুন ভিডিও সম্পর্কে বলা হচ্ছে, আগের ভাইরাল ভিডিওতে নির্যাতনকারীদের মাধ্যমেই এ তরুণী নির্যাতিত হয়েছেন। তাকেও টিকটক মডেল বানানোর ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করা হয়েছে। তবে তিনি পাচারকারী চক্রের হাত থেকে কৌশলে পালিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, ভারতে নির্যাতনের শিকার তরুণীকে রাজধানীর মগবাজারের টিকটক হৃদয় বাবু ও তার সহযোগীরা পাচার করেছে। র‌্যাব বলছে, টিকটক হৃদয় বাবুর গুরু আশরাফুল ওরফে রাফি মণ্ডল। সে পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা। তার বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপার নাথপাড়ায়। তার বাবার নাম আইন উদ্দিন মণ্ডল। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তাদের হাতে আশরাফুলের বেশ কয়েকটি ভিডিও এসেছে। ওই ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, আশরাফুল ভারতে পাচার করা নারীদের জোর করে কোকেন সেবন করতে বাধ্য করছে। পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা এবং এ কাজে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে মাদক সেবন করাচ্ছে। 
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় ভারতে পাচার হওয়ার পর পালিয়ে কয়েকজন নারী দেশে ফিরেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, পাচারের পর ভারত থেকে পালিয়ে আসা ভুক্তভোগীদের নির্মম নির্যাতন করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেছিল চক্রের সদস্যরা। তাদের খুঁজে পাওয়া গেলে, চক্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। পাশাপাশি পাচারের রুটও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। 

এদিকে ভাইরাল হওয়া প্রথম ভিডিওতে নির্যাতনের শিকার তরুণীর বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। স্পর্শকাতর হওয়ার এসব তথ্য আরও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ওই তরুণীর পাচার হওয়ার ঘটনা তদন্তে অনেকদূর এগিয়েছে পুলিশ। এরই মধ্যে এ পাচারকারী চক্র সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।

কয়েক বছর আগেও প্রযুক্তিগত তদন্তে অনেক পিছিয়ে ছিল পুলিশ। তবে এখন পুলিশের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। এ ঘটনার তদন্তে নেমে, দ্রুততার সঙ্গে চক্র সম্পর্কে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই চাঞ্চল্যকর সব তথ্য মিলছে। শিগগিরই এ চক্রের সব সদস্যকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি জানান, ওই তরুণীকে উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ভারতীয় পুলিশ। অপরাধী চক্রের সঙ্গে তার কোনো যোগসাজস আছে কিনা সেটিও সে দেশের পুলিশ খতিয়ে দেখছে। এ চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করতে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে ডিএমপির কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকটি রাজ্যের অপরাধীরা মিলে পাচারকারী চক্র গড়ে তুলেছে। ভারতে গ্রেফতার ছয়জন পাচারকারী চক্রের সদস্য। তরুণ-তরুণীরা টিকটক করতে গিয়ে একটি ফেসবুকে যুক্ত হয়। এ গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্র। ওই গ্রুপ থেকে তরুণীদের টার্গেট করে ফাঁদে ফেলে পাচার করা হয়। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, টিকটকারদের ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিনসহ সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করতে প্রযুক্তিগত তদন্তের পাশাপাশি ম্যানুয়ালি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অনেককেই শনাক্ত করা গেছে। এদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তাদের আরও কোনো গ্রুপ আছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। 

পাচারের শিকার এক বাংলাদেশি তরুণীকে বীভৎস কায়দায় নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ২৩ বছর বয়সি ওই তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতনের পর দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়। ওই ভিডিওর সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার ছয়জনের ওই দলটিকে গ্রেফতার করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। গ্রেফতার সবাই একই গ্রুপের এবং তারা বাংলাদেশি।
 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম