Logo
Logo
×

শেষ পাতা

হাজারো মানুষের দুর্ভোগস্থল লেবুখালী ফেরিঘাট

জোয়ারে ডুবে যায় গ্যাংওয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

Icon

সাইদুর রহমান পান্থ, বরিশাল

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হাজারো মানুষের দুর্ভোগস্থল লেবুখালী ফেরিঘাট

হাজারো মানুষের দুর্ভোগস্থল দেশের তৃতীয় ব্যস্ততম ফেরিঘাট লেবুখালী। পাটুরিয়া ও শিমুলিয়ার পর দেশের ব্যস্ততম ফেরিঘাট এটি। নদীর ৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে যাত্রী ও দুই প্রান্তের শত শত যানবাহনকে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এই দুর্ভোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি। ফলে দুই প্রান্তের ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে ডুবে থাকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে শত শত যানবাহনকে। তবে এ দুর্ভোগ সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাটছে না বলে দাবি সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ)।

জানা গেছে, লেবুখালীতে প্রতিদিন পারাপার হয় প্রায় ১৫শ যানবাহন। ইউটিলিটি টাইপ ফেরি দিয়ে অভ্যন্তরীণ ছোট নদী পারাপারে এত বেশি যানবাহনের চাপই বলে দেয় এ ফেরিঘাটের ব্যস্ততা। পায়রা নদীতে থাকা এ ফেরি পার হয়ে পৌঁছাতে হয় পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ও সমুদ্রবন্দর পায়রায়। এছাড়া পটুয়াখালী ও বরগুনার সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে লেবুখালী ফেরি। এখানেই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পর্যটকসহ হাজার হাজার মানুষ। প্রতিদিন এখন জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভর করতে হয় যাত্রী বা পর্যটকদের। জোয়ারের পানি বেশি থাকলে কোনো কোনো সময় যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। যার কারণে ঘাট থেকে পাগলার মোড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের সারির পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স।

সরেজমিন ফেরিঘাট পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা রুটের লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর উভয় পাশে ফেরিঘাট থেকে দেড় কিলোমিটারজুড়ে জায়গা কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে। হাঁটু সমান কাদা পেরিয়ে যানবাহনে চড়ে যাত্রীদের ঘাটে পৌঁছে ফেরি পারাপার হতে হয়। এ সময় নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় যানবাহন ও যাত্রীদের। বিশেষত হেঁটে চলা পথচারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের কষ্ট বেড়েছে কয়েকগুণ। পটুয়াখালীর দুমকির লেবুখালী ফেরিঘাটের সড়ক হাঁটু সমান কাদায় একাকার। টানা বৃষ্টিতে ফেরিঘাট এলাকায় এমন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। দূরপাল্লার বাস ও অটোরিকশা, মোটরবাইক ও পথচারীদের চলাচলে অন্তহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। এর পর পড়ছে জোয়ারের পানি নিয়ে বিড়ম্বনায়।

বরগুনার যাত্রীবাহী বাসের চালক বেল্লাল খলিফা জানান, কোনো কোনো সময় দেড় থেকে আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এই ঘাটে। আর এই সময়ের মধ্যে আমরা গন্তব্যে চলে যেতে পারি। কলাপাড়া থেকে বরিশালগামী বাসের যাত্রী রাহেলা বেগম বলেন, বাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা খুবই বিরক্তিকর। প্রচণ্ড গরমে বাচ্চারা হাঁসফাঁস করে। শুনেছি জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারণে বাস চলাচল করতে বিলম্ব হচ্ছে। কিন্তু নির্মাণাধীন ব্রিজটি চালু হলে এই দুর্ভোগে আমাদের পড়তে হতো না।

আরেক যাত্রী মো. সুমন জানান, শুনেছিলাম ২০২১ সালের মধ্যে এই ব্রিজ উন্মুক্ত হবে। কিন্তু কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। এই ব্রিজটি হলে মানুষ ১ মিনিটের মধ্যে পার হতে পারবে। ঘাটের লেবুখালী প্রান্তের ব্যবসায়ী মো. মাসুম বলেন, যাত্রীরা ঘাটে নামতে না পারায় দুই প্রান্তের ব্যবসায়ীদের বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। খাবার হোটেল মালিকরা খুবই দুরবস্থার মধ্যে পড়েছেন। তিনি বলেন, সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য মাটি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ঘাটের এমন দুরবস্থা। আর বড় দুর্ভোগের সৃষ্টি করছে পায়রা নদীর জোয়ারের পানি। অপর এক ব্যবসায়ী শামিম জানান, শুধু সংযোগ সড়কে কাদার দুর্ভোগই নয়, নদীতে পানি বাড়লে ঘাটের উভয় প্রান্তের গ্যাংওয়ে ডুবে যায় এবং যানজট লেগে থাকে।

ফেরির ইজারাদারদের সুপারভাইজার ফাইজুল হক বলেন, এখানে থাকা ৬টি ফেরির মধ্যে দুই একটি সব সময়ই বিকল থাকে। এছাড়া ২টি অত্যন্ত পুরোনো। এর মধ্যে জোয়ারের পানির কারণে প্রতিদিনই আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

পটুয়াখালী ফেরি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, জোয়ারের পানির জন্য অ্যাপ্রোচ সড়ক ও গ্যাংওয়ে ডুবে যায়। ঘাট তো ঠিকই আছে। কিছু দিনের জন্য এমনটা হচ্ছে। আবার ঠিক হয়ে যাবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম