প্রেমে ব্যর্থ হয়ে পলাশে প্রেমিককে খুন
পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নরসিংদীর পলাশে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রেমিককে খুন করেছেন প্রেমিকা। বিয়ের কথা জানতে পেরে কৌশলে প্রেমিক মীরকে ডেকে নিয়ে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশের পর গলায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন প্রেমিকা ইসরাত জাহান মীম (২০)। শনিবার সন্ধ্যায় মীমকে আটক করেছে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে মীমের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পলাশ থানার ওসি মো. ইলিয়াছ জানান, মীর বিয়ে করেছেন-একথা জানতে পেরে চেতনানাশক ইনজেকশন কেনেন মীম। এরপর কৌশলে মীরকে তার কর্মস্থলে ডেকে নেন এবং কেন তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করা হলো না, সেটা জানতে চান। একপর্যায়ে মীরের ঘাড়ে ইনজেকশন পুশ করেন মীম। দু-তিন মিনিটের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। এরপর ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করে মীরের মৃত্যু নিশ্চিত করে তালা মেরে পালিয়ে যান মীম।
মীমের ভাষ্য, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে চাকরি করায় চেতনানাশক ইনজেকশন ও তা দ্রুত পুশ করার ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতা ছিল। ১০-১২ মিনিটের মধ্যে হত্যা মিশন শেষ করেন তিনি। এরপর ছুরি, মোবাইল ও সিরিঞ্জ ঘোড়াশাল এলাকার নিকটবর্তী নদীতে ফেলে দেন।
জানা যায়, মীম ও মীর একই এলাকার বাসিন্দা। দুজন স্থানীয় মুসা বিন হাকিম কলেজে একসঙ্গে পড়তেন। সে সময় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে সম্পর্কে ফাটল ধরে। গত বছরের মাঝামাঝি মীম আরেক ছেলেকে বিয়ে করেন। ৩ মাস পর সেই বিয়ে ভেঙে যায়। এরপর আবার মীরের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্ক জোড়া লাগে মীমের। কিন্তু এরই মাঝে শ্রাবন্তী নামের এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান মীর। পরিবারকে না জানিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রাবন্তীকে বিয়ে করেন পেশায় দন্ত চিকিৎসকের সহকারী মীর। বাড়ির অদূরে নিজের প্রতিষ্ঠান ‘টুথ অফিস’ নামে ডেন্টাল ক্লিনিকে যাচ্ছেন জানিয়ে বৃহস্পতিবার বাসা থেকে বের হন তিনি। রাতে বাড়িতে ফিরে না এলে স্ত্রী ও স্বজনরা কল করে মোবাইল ফোন বন্ধ পান। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে সন্ধান না পাওয়ায় স্থানীয় কমিশনারকে তারা বিষয়টি জানান। কমিশনার ঘটনাটি পুলিশকে অবহিত করতে পরামর্শ দেন। শুক্রবার সকালে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। মীরের স্ত্রী পুলিশের কাছে তার সন্দেহের কথা জানিয়ে বলেন, পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করায় বাবা ও ফুফা তার স্বামীর ক্ষতি করতে পারেন। এরপর পুলিশ নানামুখী তদন্ত শুরু করে। মীরের কর্মস্থলেও খোঁজ নেয়। তবে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ থাকায় ক্লিনিকের ভেতরে কেউ থাকতে পারেন এমন কোনো সন্দেহ পুলিশের ছিল না। কার কার সঙ্গে মীরের যোগাযোগ ছিল স্থানীয় ও স্বজনদের কাছ থেকে সেই তথ্য নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর জানা যায়, একই এলাকার তরুণী মীমের সঙ্গে মীরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তখন ওই মেয়ের বাড়িতে যায় পুলিশ। মীম পুলিশকে জানান, মীরের কোনো তথ্য তার কাছে নেই। যদিও প্রযুক্তিগত তদন্তে মীরের সঙ্গে মীমের একাধিক দফায় কথা বলার তথ্য পাওয়া যায়। তবে ঘটনার মোড় নেয় শনিবার বিকাল ৪টার পর। ডেন্টাল চিকিৎসক সিহাবুল হক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তালা খোলার পর অভ্যর্থনা কক্ষে মীরকে গলা কাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। হতচকিত হয়ে তিনি দ্রুত পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এরপরই মীমকে আটক করা হয়।
