Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রাজধানীতে জলজট দুর্ভোগ

বিকালেই নেমে এলো ‘সন্ধ্যার আঁধার’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিকালেই নেমে এলো ‘সন্ধ্যার আঁধার’

ভারি বৃষ্টিতে শুক্রবার রাজধানীর দয়াগঞ্জে সড়কে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার মাঝে ভাসছে ময়লা-আবর্জনা। ভোগান্তি মাথায় নিয়ে রিকশায় গন্তব্যে যাচ্ছেন এক নারী -যুগান্তর

সকালের দিকে আকাশ ছিল পরিষ্কারই। কিছু সময় যেতেই উড়ন্ত মেঘগুলো জোড়া লেগে ধীরে ধীরে পুরো আকাশ ঢাকা পড়তে থাকে মেঘে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে থেকে শুরু হয় অঝোর ধারায় বৃষ্টি।

বিকাল ৪টার পর বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে গোটা আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢাকা পড়ে যায়। মুহূর্তেই দিনের আলো উধাও হয়ে নেমে আসে ‘সন্ধ্যার আঁধার’। প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণে নগরবাসীও কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সড়কের গাড়িগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হয়।

আষাঢ়ের এই তৃতীয় দিনে বেশ কিছু সময় চলে এই অবস্থা। পরে ধীরে ধীরে ‘সন্ধ্যার আঁধার’ কেটে যেতে থাকে। বৃষ্টির কারণে ঢাকার অনেক সড়কে সৃষ্টি হয় জলজট।

বিকাল ৪টার পর থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভারি বৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে সড়কে পানি জমে যায়। কোনো কোনো সড়কে হাঁটুসমান পানি উঠে যায়। জলজট থেকে বাদ যায়নি ঢাকার অভিজাত গুলশান, বনানী, বারিধারা, কুড়িল এলাকা। তবে ঢাকার দুই সিটিরই সম্প্রসারিত এলাকাগুলোয় জলজটের মাত্রা ছিল বেশি।

বিশেষ করে দক্ষিণখান, উত্তরখান, তুরাগ, ডেমরা এলাকার বিভিন্ন সড়কে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। হাঁটুসমান পানি ভেঙেই যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। ভুক্তভোগীদের অনেককেই জলজটের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে যায়। দক্ষিণখানের বাসিন্দা ইয়াছিন রানা ফেসবুকে লিখেছেন, দক্ষিণখান এলাকা সিটি করপোরেশনভুক্ত হয়ে কী লাভ হলো...।

এর নিচে তিনি তাদের বাসার গলি দিয়ে হাঁটুসমান পানি ঢেউ দেখালেন। পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের জমিদার গলি হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে যায়। এলাকাবাসীর ফেলে দেওয়া আবর্জনা আর ড্রেনের নোংরা পানি মাড়িয়েই স্থানীয়দের চলাচল করতে দেখা যায়।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা মুসতাক আহমদ বলেন, জমিদার গলির বাসিন্দারা কেউ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হননি। তিনি বলেন, শহরের অনেক উন্নতির কথা শুনছি, তাহলে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না কেন? বৃষ্টির কারণে মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, নতুন বাজার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে মানুষের দুর্ভোগের অন্ত ছিল না। গতকাল বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পরীক্ষা ছিল।

সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে ঢাকায় আসেন। তাদের অনেককে পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর বৃষ্টি, জলজট ও যানজটে নাকাল হতে দেখা গেছে। সিলেট থেকে আসা পরীক্ষার্থী মফিজুর রহমান বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে যাচ্ছে, এটা কোনো কথা হলো। সঙ্গে যানজটের দুর্ভোগ তো আছেই। পরীক্ষা যদি জেলা বা বিভাগ পর্যায়ে নেওয়া হতো, তাহলে বাইরে থেকে আসা মানুষের এ ধকল সইতে হতো না।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সকালে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে সিটি করপোরেশনের ‘কুইক রিসপন্স টিম’-এর সদস্যরা মাঠে নেমেছে। অর্থাৎ জলজট ও জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকার পানি সরাতে ৫ থেকে ৬ জন শ্রমিক কাজ করেছে।

আর এসব কার্যক্রম সরাসরি তদারক করেছে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরা। ঢাকার দুই সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে জলজট নিরসনে সিটি করপোরেশনের কুইক রিসপন্স টিমের সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। এরপরও বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলজট ও যানজটে নাকাল হয়েছে নগরবাসী।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ যুগান্তরকে বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় বেশ কিছু জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকা রয়েছে। সেগুলোতে জলজট হয়েছে। এই সংখ্যা ৬ থেকে ৭টি হবে। ওইসব এলাকার পানি নিষ্কাশনে কাজ করেছে ‘কুইক রিসপন্স টিমের সদস্যরা’।

তিনি বলেন, ডিএনসিসি এলাকায় প্রায় দেড়শ জলাবদ্ধতা প্রবণ স্পট রয়েছে। এর মধ্যে ১০৬টির উন্নয়নে কাজ করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। সর্বপরি বৃষ্টির এই মৌসুমে নগরবাসীকে জলজট, জলাবদ্ধতা ও যানজটের ধকল থেকে মুক্তি দিতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ডিএসসিসি।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা যুগান্তরকে বলেন, আজ তো (শুক্রবার) অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলজটের সৃষ্টি হয়। সেসব নিঃসরণ করতে ডিএনসিসির কুইক রিসপন্স টিম কাজ করছে। আশা করি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পানি সরে যাবে। নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে ডিএনসিসি নিরলসভাবে কাজ করছে।

আঁধার

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম