Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সিলেটে জিঘাংসার বলি দুই ছাত্রনেতা

তানিম খুনে আসামি ২৮ ছাত্রলীগ ক্যাডার

Icon

সিলেট ব্যুরো

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সিলেটে নতুন বছরের শুরুতেই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ঝড়ে পড়ে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের তাজা দুটি প্রাণ। ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের আনন্দ মিছিলে ছুরিকাঘাতে খুন হন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসনাত শিমু। আর এ ঘটনার সপ্তাহ না পার হতেই গত রোববার অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বলি হন ছাত্রলীগকর্মী তানিম খান। দুটি ঘটনায় মামলা হলেও ঘাতকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে বাদীপক্ষকে হুমকি দিয়ে চলেছে।

ছাত্রলীগকর্মী তানিম খুনের ঘটনায় বুধবার রাতে ২৯ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ জন ছাত্রলীগ ক্যাডার। এছাড়া এ মামলায় আসামি করা হয়েছে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক উমেদুর রহমান উমেদকে। মামলায় প্রধান আসামি মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের ভাতিজা সাদিকুর রহমান আজলা। অন্য আসামিরা হলেন- নগরীর সাদিপুর হাতিম আলী রোডের গোলাম জিলানীর ছেলে শেখ মোতাছির আলী, রায়নগর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মাসুক মিয়ার ছেলে জয়নাল আবেদীন ডায়মন্ড, চালিবন্দরের জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে আলী আহমদ মাহিন, বোরহানবাগের কাদির আহমদের ছেলে রুহেল আহমদ, শিবগঞ্জের ময়না মিয়ার ছেলে আফজল মিয়া, রাজপাড়া সুরভী আবাসিকের সিরাজুল ইসলামের ছেলে জুনেদ আহমদ, খরাদিপাড়া বৈশাখী আবাসিকের মশরুর চৌধুরীর ছেলে দেওয়ান মুরাদ হাসান, শিবগঞ্জ লাকড়িপাড়ার জসিম উদ্দিনের ছেলে বদরুজ্জামান সাগর, ভাটাটিকরের সুভাষ আচার্য্যরে ছেলে সৌরভ আচার্য্য, একই এলাকার গুলজারের ছেলে রাহাত, মেজরটিলা শ্যামলী আবাসিকের শাহাব উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ, টিলাগড় রজপাড়া সুরভী আবাসিকের সিরাজুল ইসলামের ছেলে হাসান আহমদ, ভাটাটিকরের আফতাব আলীর ছেলে মিজানুর রহমান মিজান, মিরাপাড়ার বাবুল মিয়ার ছেলে রাহাত আহমদ, শিবগঞ্জ সাদিপুরের সুধির মজুমদারের ছেলে অনিরুদ্ধ মজুমদার পলাশ, শিবগঞ্জের লিটন মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া ওরফে পাখি সুমন, সোনারপাড়ার মৃত দুলু মিয়ার ছেলে উমেদ, টিলাগড় গোপালটিলার আরিফ আহমদ, একই এলাকার রঞ্জন দে, শাপলাবাগের বখতিয়ার আকরাম অনি, আখালিয়ার মিজানুর রহমানের ছেলে সজিবুর রহমান, রায়নগরের মাসুক মিয়ার ছেলে কাউসার জামাল, টিলাগড় মসজিদ কোয়ার্টারের এমদাদুল করিম ওমর, চালিবন্দরের আদি অয়ন, শাহজালাল উপশহরের জাকির হোসেন, গোপালটিলার সুবিধ দাসের ছেলে সুমন দাস, সাদিপুর ফেয়ার টাওয়ারের তারেক আহমদ, বালুচরের তজমুল আলীসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জন। এর মধ্যে রায়নগর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মাসুক মিয়ার ছেলে জয়নাল আবেদীন ডায়মন্ড ও বোরহানবাগের কাদির আহমদের ছেলে রুহেল আহমদ ঘটনার পরপরই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।

বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ছেলে হত্যার বিচারের ভার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন তানিমের বাবা ও আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাঈল খান। তিনি থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। এমতাবস্থায় বুধবার রাতে তানিমের বন্ধু ও এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন রাহী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার দু’জন আসামি গ্রেফতার হলেও অন্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের দাবি আসামিরা পলাতক। তবে তারা ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় তৎপর। এদিকে তানিমের খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে নগরীতে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

তানিম খুনের মামলায় আসামি করায় বিস্মিত মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক উমেদুর রহমান উমেদ। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন- ‘সত্য আড়াল করে আমাকে আসামি করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

তবে মামলার বাদীপক্ষের দাবি- ‘উমেদ নগরীর চিহ্নিত সন্ত্রাসী। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে এমসি কলেজের সংঘর্ষে তাকে ভাড়া করেছিল ছাত্রলীগের আজাদ বলয়। তানিম খুনের ঘটনায়ও উমেদ জড়িত।’

অপরদিকে ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দ মিছিলে ছুরিকাঘাতে খুন হন সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসনাত শিমু। এ ঘটনায় অপর সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাবিল রাজাকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে। নাবিল রাজা এখন ফেসবুক স্ট্যাটাসে মামলার সাক্ষী ছাত্রদল নেতা রাজু রহমানকে হুমকি দিচ্ছে। তার দাবি বিনাকারণে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। রাজু রহমানকে ছাড়বেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

নিহত ছাত্রদল নেতা শিমুর মামা তারেক লস্কর যুগান্তরকে বলেন, ‘খুনিরা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাদের খুঁজে পাচ্ছে না।’

আসামি গ্রেফতার না হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল ওয়াহাব যুগান্তরকে বলেন, ‘এগুলো থানা পুলিশের দায়িত্ব। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।’

শাহপরান থানার ওসি আক্তার হোসেন বলেন, ‘তানিম খুনের ঘটনায় ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে রুহেল ও ডায়মন্ডকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ কোতোয়ালি থানার ওসি গৌসুল হোসেন বলেন, শিমু খুনের মামলার আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে। তাদের খুঁজে বের করতে প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম