তদবিরে আটকে আছে চট্টগ্রামে দুই এডিসির নিয়োগ
এডিসি নিয়োগে কে ক্ষমতাবান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রভাবশালী মহলের পছন্দের কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনে।
এ কারণে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (এডিএম) মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা পদায়ন বিলম্বিত হচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, এ জেলায় এডিসি পদায়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শক্ত ভূমিকা রাখতে পারছে না।
সূত্র জানায়, ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগ দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি যোগ দেওয়ার দুদিন পর এডিসি (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বদলি হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পোস্টিং পান।
এর অনেক আগে ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ চা বোর্ডের সচিব পদে বদলি করা হয় এডিএম সুমনী আক্তারকে। কিন্তু অদ্যাবধি এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যে কারণে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রুটিনওয়ার্ক চালিয়ে নেওয়া হলেও জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেভাবে নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অনেক আগেই যথাসময়ে এ দুটি পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব ছিল এবং যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তাও রয়েছেন। কিন্তু মহলবিশেষ তাদের পছন্দমাফিক কর্মকর্তাকে সেখানে নিয়োগ দিতে মরিয়া। যারা বিশেষ উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি দপ্তরের উপ-পরিচালক পদে কর্মরত ৩১ ব্যাচের একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে চান এডিসি (রাজস্ব) পদে। এডিএম পদেও নিতে চান পছন্দের আর এক কর্মকর্তাকে। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এককভাবে ওই কর্মকর্তার পছন্দের কর্মকর্তাকে দিতে চায় না। অলিখিত এই দ্বন্দ্বের কারণে পোস্টিং আটকে আছে। অথচ ৪ ডিসেম্বর এডিসি পদে বিভিন্ন জেলায় ১৬ জন এবং ২৭ ডিসেম্বর আরও ৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু চট্টগ্রামের এডিসি (রাজস্ব) এবং এডিএম পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পছন্দের কর্মকর্তা পেতে বিলম্ব হওয়ায় বদলি হওয়া এডিএমকে রিলিজ দিতে এক মাসের বেশি সময় নেওয়া হয়। রিলিজ দেওয়ার পর অন্য এডিসিকে অতিরিক্ত দিয়ে রুটিন কাজ চালানো হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের বক্তব্য : এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (এডিএম) বদলি অনেক আগে হলেও তাকে ২৭ ডিসেম্বর রিলিজ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবু রায়হান দোলন এডিএমের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। একইভাবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সপ্তাহখানেক আগে বদলি হয়েছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামালকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই বদলির কারণে কাজের কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না। আমাদের অফিসাররা দিন-রাত কাজ করছেন। তবে আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে আছি বদলিজনিত কারণে শূন্য হওয়া পদে নতুন কর্মকর্তা পদায়নের জন্য।’ পদায়ন বিলম্বে তার কোনো ভূমিকা নেই বলেও তিনি দাবি করেন।
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘অবশ্যই এডিসি নিয়োগের পূর্ণ এখতিয়ার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। আসলে ব্যস্ততার কারণে বিষয়টি নিয়ে বসা হয়নি। তবে শিগগির নিয়োগ দেওয়া হবে।’
তবে অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সত্য কথা সাহস করে কেউ বলবেন না। কারণ এই প্রভাব বিস্তারের সঙ্গে যুক্ত জুনিয়র গ্রুপের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের খুঁটির জোর অনেক বেশি। তাদের কেউ ঘাঁটাতে চায় না। এটাই হলো বাস্তবতা এবং দুর্ভাগ্য।’
