ঘন কুয়াশার দাপট
বরিশালে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবি, নিখোঁজ ২
বিক্ষুব্ধ জেলেদের হামলা, ভাঙচুর, লুট * দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় সোয়া ১১ ঘণ্টা ফেরি বন্ধ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বরিশালের কালাবদর নদে ঘন কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারানো লঞ্চের ধাক্কায় চারটি জেলে নৌকা ডুবে গেছে। এতে দুই জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। পরে বিক্ষুব্ধ জেলে ও স্থানীয়রা লঞ্চটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এছাড়া লঞ্চের কর্মচারীদের মারধর, মালামাল ও টাকা লুট করেছে বলে অভিযোগ করেন এমভি প্রিন্স অব রাসেল-৫ লঞ্চের সুপারভাইজার। সোমবার ভোরে মেহেন্দিগঞ্জের চর শেফালী লঞ্চঘাটে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঘন কুয়াশায় সোয়া ১১ ঘণ্টা বন্ধ ছিল ফেরি চলাচল। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকরা। ব্যুরো ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর-
বরিশাল : লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ জেলেরা হলেন-হিজলা উপজেলার বরজালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. বাকীউল্লাহ সিকদার (৪০) ও একই ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাকের মৃধা (৩৫)।
উলানিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চটি চর শেফালী ঘাটে নোঙ্গর করতে গিয়ে মাছ ধরার ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ধাক্কা দেয়। এতে পাঁচটি নৌকা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ডুবে যায়। এসব নৌকার জেলেরা লাফিয়ে নদে পড়ে রক্ষা পেয়েছে। তবে দুই জেলে নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা চেষ্টা করছে।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা লঞ্চের কর্মচারীদের মারধর, ভাঙচুর ও লুট করেছে। মেহেন্দিগঞ্জ থানার পুলিশের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করেছে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান এসে জনতাকে শান্ত করে। বর্তমানে লঞ্চ তাদের হেফাজতে রয়েছে। যাত্রীদের বিকল্প নৌযানে গন্তব্যে পাঠানো হয়েছে।
মেহেন্দিগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাদের ফরাজী বলেন, লঞ্চের ধাক্কায় কয়েকটি জেলে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুজন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারে ডুবুরিরা তল্লাশি করছে।
লঞ্চের সুপারভাইজার সাইদুর রহমান বলেন, রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ভোলার বোরহানউদ্দিনের উদ্দেশে রওনা দিই। সোমবার ভোর ৩টার দিকে কালাবদর নদে পৌঁছলে ঘন কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তখন চরশেফালী লঞ্চ ঘাটে ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় মাস্টার। লঞ্চ ঘাটের চারপাশে জাল ফেলে জেলেরা পন্টুনের পাশে ছিল। এ সময় লঞ্চ জেলে নৌকার ওপর উঠে যায়। এতে কয়েকটি নৌকা ক্ষতিগ্রস্তু হয়।
সাইদুর অভিযোগ করেন, এরপর ৩০-৪০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে ল?ঞ্চে উঠে মাস্টার মজিবর রহমানকে পেটায়। এছাড়া লঞ্চে ব্যাপক ভাঙচুর করে। মাস্টারকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে স্টাফ মাসুদ ও ইলিয়াসকে বেধরকভাবে মারধর করে। এক পর্যায়ে তাকেও (সুপারভাইজার) নামিয়ে একটি খেতের মধ্যে নিয়ে পিটিয়েছে। এছাড়া ৫ লাখ টাকা না দিলে তাকে জবাই করারও হুমকি দিয়েছে। লঞ্চের যাত্রীরা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। তিনি বর্তমানে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পরে এলাকার আরও শতাধিক লোক জড়ো হয়ে লঞ্চে তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা লঞ্চের সব গ্যাস ভাঙচুর করেছে। দেড়শ কাটন ফল, নগদ ২০ হাজার টাকা, দুই ব্যারেল ডিজেল লুট করেছে। লঞ্চের তেলের লাইন ভেঙে ফেলেছে। এতে বিপুল পরিমাণ তেল নদে ভেসে গেছে।
রাজবাড়ী, গোয়ালন্দ ও মানিকগঞ্জ : দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের বিআইডব্লিটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, রোববার রাত ১১টা ১৫ মিনিটে নৌরুটে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়ে যায়। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে কুয়াশা কেটে গেলে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জানা গেছে, এ সময় ঘনকুয়াশায় দিক হারিয়ে মাঝপথে তিনটি ফেরি নোঙর করতে বাধ্য হয়। ফেরিগুলো হলো-বনলতা, হাসনাহেনা ও রজনীগন্ধা। দীর্ঘ সময় ধরে ফেরি বন্ধের কারণে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় মহাসড়কে প্রায় ৪ কিলোমিটার জুড়ে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। সোমবার সকালে ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জিরো পয়েন্ট থেকে দৌলতদিয়া ওয়াজেদ চৌধুরী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত পণ্য?বাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত গাড়িসহ প্রায় ৪ শতাধিক যানবাহন আটকে আছে।
যশোর থেকে ছেড়ে আসা কাঁচামালবাহী ট্রাক চালক রবিউল মীর বলেন, রোববার রাত থেকে ঘাটে আটকে আছি। সময়মতো ঢাকায় পৌঁছতে না পারলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
বেনাপোল থেকে আসা কাভার্ডভ্যান চালক তুহিন খান বলেন, ঘাটে শীতের মধ্যে সারা রাত আটকে ছিলাম। খাওয়া-দাওয়া ও প্রাকৃতিক কাজে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
