Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ইতালির কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে নির্যাতন

২২ লাখ টাকা দিয়েও নুরকে বাঁচানো গেল না

স্বজনদের আহাজারি * লাশ দেশে আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা

Icon

মো. শফিকুল ইসলাম, সালথা (ফরিদপুর)

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

২২ লাখ টাকা দিয়েও নুরকে বাঁচানো গেল না

উন্নত জীবনের আশায় নুর আলমের ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল। আর সেই স্বপ্ন পূরণে ইতালি যাওয়ার জন্য বছরখানেক আগে দালালচক্রের সঙ্গে ৮ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। টাকা নিয়ে দালালচক্রের বাংলাদেশের এজেন্টরা তাকে লিবিয়ায় পাঠায়। সেখানে একটি বাড়িতে আটকিয়ে আরও টাকার জন্য নির্যাতন শুরু করে। আর নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তবে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও নুরের জীবন রক্ষা করতে পারেনি পরিবার।

স্বজনরা জানান, ১২ ফেব্রুয়ারি নুর অলম হত্যার শিকার হয়। এরপর থেকে লিবিয়ার একটি মর্গে পড়ে আছে লাশ। এখন সেই লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পরিবার মরিয়া হয়ে তদবির করছে। কিন্তু কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। এমন অবস্থায় লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। নুর আলম ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামের আব্দুল হালিম মোল্যার ছেলে। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন।

নুর আলমের বড় ভাই মো. সিরাজ মোল্যা যুগান্তরকে বলেন, আমার ভাইকে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায় দালালচক্রের সদস্য পাশ্ববর্তী বাখারদিয়া গ্রামের মোকছেম মোল্যার ছেলে মোফিজ মোল্যা। তার সঙ্গে আছে একই গ্রামের লিটন মুন্সী, মাঝারদিয়া গ্রামের তোরাপ মোল্যা ও নগরকান্দার ধরনদী গ্রামের মিজান মোল্যা। তারা সবাই লিবিয়ায় থাকে।

তিনি আরও বলেন, গত এক বছর দুই মাস আগে ইতালি নেওয়ার জন্য দালালচক্রের সঙ্গে ৮ লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হয় নুর আলম। চুক্তি অনুযায়ী দেশ থেকে রওয়ানা হওয়ার আগে ৪ লাখ আর ইতালি পৌঁছে দেওয়ার পর ৪ লাখ টাকা দেওয়ার কথা। প্রথমে দালালচক্রকে ৪ লাখ টাকা দেয় নুর। পরে নুরকে লিবিয়ায় নিয়ে বেনগাজিরা একটি বাসায় রাখে চক্রের সদস্যরা। সেখান থেকে নৌপথে ইতালি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইতালি না নিয়ে ওই বাসায় আটকে রেখে নুরের ওপর দিনের পর দিন নির্যাতন চলে। নির্যাতনের ওই ভিডিও আমাদের দেখিয়ে টাকা পাঠাতে বলে চক্রের সদস্যরা। না হলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ কারণে ওরা যখন যে টাকা চেয়েছে, আমরা তাই পাঠিয়েছি। এভাবে তাদের ২২ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু এরপরও পাষণ্ডরা আমার ভাইকে বাঁচতে দিল না। দেশে ফিরে মামলা করতে পারে এমন আশঙ্কায় তারা নুরকে হত্যা করেছে। ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে তারা নুরকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখে। ১৩ ফেব্রুয়ারি দালালরা আমাদের ফোন করে বলে নুর আত্মহত্যা করেছে।

নিহতের ছেলে রাসু মোল্যা ও মেয়ে মিতু আক্তার বলেন, বাবাকে বাঁচাতে দালালদের কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা দিয়েছি। আমাদের অল্প জমিজমা যা ছিল সব বিক্রি করে এবং ধারদেনা করে টাকা পাঠিয়েও বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমরা দালালদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আর বাবার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, নুর আলমের ঘটনাটি আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে জানতে পারলাম। নুরের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে সহযোগিতা চাওয়া হলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।

ফরিদপুর

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম