নেপথ্যে নারীঘটিত বিষয়
বন্ধুদের হাতেই খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা মামুন
মামলা : গ্রেফতার রহমত উল্লাহ ৭ দিনের রিমান্ডে
সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নারীঘটিত বিষয় কেন্দ্র করে বন্ধুদের হাতে খুন হয়েছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান (৪০)। বনানীর যে ফ্ল্যাটে তাকে হত্যা করা হয়েছে, ওই ফ্ল্যাটে কয়েক তরুণী থাকেন। মামুন তার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রহমত উল্লাহর সঙ্গে ৮ জুলাই রাত ৮টার দিকে ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। সেখানে রহমত উল্লাহসহ কয়েক যুবকের সঙ্গে কথাকাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন মামুন। এর জের ধরে ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে মামুনকে কিল-ঘুষি ও লাথির মাধ্যমে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে গাড়িতে করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায় রহমত উল্লাহ। নিজ মালিকানাধীন গাড়িটি রহমত নিজেই চালাচ্ছিল। রাজধানীর কোথাও লাশ গুম করতে না পরে সে গাড়ি চালিয়ে চলে যায় গাজীপুরের কালীগঞ্জে। ভোরে সেখানকার একটি বাঁশঝাড়ে লাশ ফেলে রাখে। এরপর পেট্রল পাম্প থেকে পেট্রল এনে লাশের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়, লাশ যাতে কেউ চিনতে না পারে। মঙ্গলবার দুপুরে মামুনের পোড়া মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এদিন রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রহমত উল্লাহকে গ্রেফতার করে। বুধবার তাকে আদালতে হাজির করে তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৭ জন ডিবির নজরধারীতে আছেন। এদের মধ্যে তিন তরুণী এবং চার যুবক। এদের মধ্যে রহমত উল্লাহর গাড়িচালক এবং বনানীর ওই ফ্ল্যাটের দারোয়ানও আছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, তাদের অবস্থান যশোর এলাকায়। গোয়েন্দারা তাদের গতিবিধি পর্যালোচনা করছেন। তাছাড়া এজাহারভুক্ত অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সূত্র জানায়, বনানী মডেল টাউনের ওই ফ্ল্যাটটি একজন যুবকের নামে ভাড়া নেয়া হয়েছিল। এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২-৩ জনকে আসামি করে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেছেন নিহতের ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান। মামলায় রহমত উল্লাহকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। রহমত উল্লাহ একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার দারিয়া গ্রামে। বর্তমান ঠিকানা রাজধানীর দাক্ষিণখান থানার আশকোনার আশকোনা সিটি কমপ্লেক্স। এজাহারে অন্য যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হল- স্বপন, দীদার, মিজান, আতিক, শেখ হৃদয় আপন, রবিউল, সুরাইয়া আক্তার কেয়া, মেহেরুন্নেছা স্বর্ণা ওরফে আফরিন, ফারিয়া বিনতে মীম-মাইশা।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ও নিহত মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান যুগান্তরকে বলেন, মামুন ছিল অবিবাহিত। নাটকের প্রতি ছিল তার প্রবল ভালোবাসা। নাটকের শুটিংয়ের কথা বলে রহমত উল্লাহ তাকে বনানীর ওই বাসায় ডেকে নিয়েছিল। মামুন আমার সবুজবাগে বাসায় থাকত। সেখানে আমি আমার মা, স্ত্রী এবং এক সন্তানকে নিয়ে থাকি। ৮ জুলাই অফিস থেকে ফেরার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মামুন বাসা থেকে বের হয়। রাতে বাসায় না ফেরায় পরদিন তার ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন নম্বরে কল দেয়া হয়। কিন্তু নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। তার অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়েও সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে সবুজবাগ থানায় জিডি করি। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি এর ছায়া তদন্ত করতে থাকে। প্রযুক্তির সহায়তায় রহমত উল্লাহকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পুলিশের কাছে সে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। জাহাঙ্গীর আলম খান আরও জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জের রাজরামপুরে। তার বাবা মৃত আজহার আলী খান। ভাই মামুন ইমরান খান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নেন। ২০০৫ সালে এসআই হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন মামুন।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের ডিসি মাসুদুর রহমান জানান, ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানিয়ে বুধবার রহমত উল্লাহকে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। আদালত তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
