Logo
Logo
×

শেষ পাতা

২১ আগস্ট হামলার তদন্ত ও বিচার ‘সাজানো নাটক’: মির্জা ফখরুল

নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

২১ আগস্ট হামলার তদন্ত ও বিচার ‘সাজানো নাটক’: মির্জা ফখরুল

ফাইল ছবি

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার তদন্ত ও বিচার পুরোটাই আওয়ামী লীগ সরকারের ‘সাজানো নাটক’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি অভিযোগ করে তিনি দাবি করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের যাদের সাজা হয়েছে, তারা সবাই নির্দোষ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাদের ফাঁসানো হয়েছে।

গ্রেনেড হামলার ঘটনা নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে সুষ্ঠুভাবে তদন্তের দাবিও জানান তিনি। সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে সেখানে দলটির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি নির্ধারণে যৌথ সভা হয়। মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে সভায় দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব, যুগ্মমহাসচিব, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিও তুলে ধরা হয়।

২১ আগস্টের ঘটনাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম জঘন্য ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বারবার বলে এসেছি-একটা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত হোক। কিন্তু নিরপেক্ষ তদন্ত করা হয়নি। ২১ আগস্টের ঘটনাকে আমরা নিন্দা করি। এটা নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম জঘন্য একটি ঘটনা ও নিন্দনীয়। শুধু রাজনৈতিক কারণে অযথা নেতাদের নাম দিয়ে রাজনৈতিক ফয়দা লোটা হচ্ছে। এটা কেউ সমর্থন করতে পারে না। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, পুরো বিষয়টি একটি সাজানো নাটক। কারণ, যেখানে মিটিং (২০০৪ সালের ২১ আগস্ট) হওয়ার কথা ছিল, সেখানে মিটিং না হয়ে অন্য জায়গায় শিফট করা হয়েছিল। কিন্তু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে অবহিত করা হয়নি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনবার এফআইআর হয়েছে। এফআইআরে একবারও তারেক রহমানের নাম ছিল না। এক ব্যক্তি, যিনি অবসর গ্রহণ করেছিলেন-কাহার আকন্দ, যিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তাকে পুনরায় চাকরি দিয়ে আইও করা হয়। সেই লোক তখন তারেক রহমানের নাম সেখানে দিলেন। তারেক রহমানের নাম পুরো তদন্তের কোথাও উচ্চারিত হয়নি।’

১৪৫ দিন রিমান্ডে নেওয়ার পর মুফতি হান্নানকে দিয়ে তারেক রহমানের নাম উচ্চারণ করানো হলো। তবে পরে আবার অ্যাফিডেভিট (হলফনামা) দিয়ে তিনি তা অস্বীকারও করেছিলেন। কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি।

তড়িঘড়ি করে অন্য একটি মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে, তাকে আর আদালতে আসার সুযোগই দেওয়া হয়নি। এটাকে আমরা কী বলব? তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়াই তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের নাম এখানে জড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমার কাছে রেকর্ড আছে-সময় পেলে আপনাদের দেখাব।

আমরা আবারও বলছি, তারেক রহমান, আবদুস সালাম পিন্টু এবং লুৎফুজ্জামান বাবর-কেউই এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাদের নাম এ মামলায় দেওয়া হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার দেশে ভয়াবহ কিছু ঘটানোর পরিকল্পনা করছে। এ আশঙ্কার কথা বলা দরকার, জাতির জানা উচিত। সরকার দেশে ভয়াবহ কিছু ঘটানোর পরিকল্পনা করছে-যাতে নির্বাচনে বিরোধী দলকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করা যায়। তারা আরেকটি নির্বাচন করতে চায়, যেমন অতীতে করেছে।

রোববার ছাত্রদল নেতাদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, অস্ত্রসহ তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এগুলো (অস্ত্র) তাদের (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর) রেখে দেওয়া অস্ত্র। অর্থাৎ, তাদের উদ্দেশ্য হলো-এগুলো করবে, গোলযোগ সৃষ্টি করবে আর বিএনপির ওপর দোষ চাপাবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসেছে, ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। মেগা প্রকল্প, রেল প্রকল্প, ফ্লাইওভার-এগুলো কার জন্য? জনগণের পকেট কেটে নিজেদের পকেট ভরার জন্য। ৮০ পারসেন্ট চুরি করে, ২০ পারসেন্টে কোনো রকমে কাজ করে।

আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হইনি। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করি। তাদের নিয়েই আমরা আছি। আজ দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। সেই বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এ ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে আমেরিকার কেউ স্বীকার করেননি।

ভারতেরও কেউ স্বীকার করেননি।’ তিনি আরও বলেন, আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমরা সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছি। এ সরকার দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা ধ্বংস করেছে। প্রশাসনসহ সবকিছু ধ্বংস করেছে। একটি কোম্পানি ১১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ, তাদের নিজেদের লক্ষ্য সেটা।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি : ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কর্মসূচির বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ওইদিন সকাল ৬টায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন দলের সিনিয়র নেতারা। সেখানে ফাতেহাপাঠ করা হবে।

এছাড়া র?্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। র‌্যালি ও আলোচনা সভার তারিখ, স্থান পরে জানানো হবে। সারা দেশে ইউনিটগুলো নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে কর্মসূচি পালন করবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্মমহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, মনির হোসেন, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, অঙ্গসংগঠনের মধ্যে যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু,

স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, উলামা দলের শাহ নেসারুল হক, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, তাঁতীদলের আবুল কালাম আজাদ, শ্রমিক দলের মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।

ফখরুল

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম