Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সিকিমে বাঁধ ভেঙে দানবের মতো ফুঁসছে তিস্তা

উত্তরের পাঁচ জেলায় ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা

৩ ঘণ্টায় ২০ সেমি. বাড়ল তিস্তার পানি * ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের অনেক বাড়িঘরে পানি * মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে প্রশাসনের মাইকিং * কুড়িগ্রামে প্রস্তুত ৫৯ আশ্রয়কেন্দ্র

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উত্তরের পাঁচ জেলায় ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা

ভারতের উত্তর সিকিমে অতিভারী বর্ষণে বাঁধ ভেঙে বানের পানি ধেয়ে আসছে বাংলাদেশে। এতে হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি। নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বুধবার দুপুর ৩টায় এ নদীর পানি বিপৎসীমা বরাবর থাকলেও তিন ঘণ্টার ব্যবধানে সন্ধ্যা ৬টায় ২০ সেমি ওপর দিয়ে বইছিল। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধার নিম্নাঞ্চলের অনেক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এসব জেলায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় বিকাল থেকে মানুষকে নিরপাদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করে স্থানীয় প্রশাসন। গাইবান্ধায় চরাঞ্চলের মানুষকে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে দেখা গেছে। কুড়িগ্রামে বন্যাকবলিতদের উদ্ধার করতে নৌকা ও ৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তা হঠাৎ দানবের মতো ফুঁসে ওঠায় হাতীবান্ধায় ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ভারতের সিকিমে ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ড্যামে প্রচুর পানি থাকে। ওই পানি প্রবেশ করলে রংপুর অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে।

ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের বরাত দিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সিকিমে আগামী ৪৮ ঘণ্টা অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে তিস্তা তীরবর্তী লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

লালমনিরহাট : বুধবার বিকাল থেকেই তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। এতে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, সানিয়াজান, সিন্দুর্ণা, সিঙ্গিমারী, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি ও পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী বেশকিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তিস্তাপারের লোকজন বলছে, যে হারে পানি বাড়ছে তাতে জেলার ৫টি উপজেলায় নদী তীরবর্তী এলাকায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে। হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্ণা ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে আমরা লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে কাজ করছি। লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জি আর সারোয়ার বলেন, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নদী এলাকার মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের লোকজনকে গবাদিপশুসহ প্রস্তুতি নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় তিস্তাপারের কিছু লোক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছি। সবাইকে নিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে।

ডিমলা (নীলফামারী) : বুধবার দুপুর ২টার পর থেকে বন্যার পানি ডালিয়া পয়েন্টে প্রবেশ করতে শুরু করে। দুপুর ২টায় তিস্তার পানি ৫১ দশমিক ৯০ মিটার ছিল। এক ঘণ্টার ব্যবধানে বিকাল ৩টায় ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে ৫২ দশমিক ১৫ মিটারে (বিপৎসীমা বরাবর) অবস্থান করে। বিকাল ৪টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যা ৬টায় ২০ সেন্টিমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাত ৮টায় তা আরও বেড়ে ২৫ সেমি ওপর দিয়ে বইছিল। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, পানি বাড়তে থাকায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। মাইকে সতর্কতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নদীপারের মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, নিম্নাঞ্চলের মানুষকে দ্রুত সরিয়ে নিতে কাজ চলছে। প্রশাসনের উদ্যেগে মাইকিংয়ের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলছে।

নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জানান, কালীগঞ্জ জিরো পয়েন্ট দিয়ে তিস্তা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিস্তা নদীতে উজান থেকে হরপা বান ধেয়ে আসছে-এমন আগাম খবরে সতর্ক অবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদদৌলা জানান, আমরা সর্বপ্রকার সতর্ক অবস্থান নিয়েছি। তিস্তা ব্যারাজের ফাড বাইপাস দিয়ে মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

রংপুর : তিস্তার বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। বন্যাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো। স্থানীয়রা জানান, অসময়ে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় নদীপারের মানুষজন আতঙ্কিত। তাদের অনেকে সহায় সম্বল নিয়ে বিকাল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছে।

গাইবান্ধা : ব্রহ্মপুত্র নদের চরের বাসিন্দা ও কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির বলেন, এর আগে দুদফা বন্যায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। আবার বন্যার খবরে চরাঞ্চলের মানুষ আতঙ্কিত। তারা তাদের ঘরবাড়ি গোছাতে শুরু করেছে। বিকাল থেকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। মাইকিং শুনে অনেকেই গাইবান্ধা শহর ও বাঁধের অপর প্রান্তে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। সাঘাটা থেকে সুন্দরগঞ্জ পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে অনেক পরিবার ঘরের টিন খুলে নিয়ে এসে ছাপরা তুলতে দেখা গেছে। অনেকে নদী পার হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। তিস্তার মিন্টু মিয়ার চরের বাসিন্দা ফজলু মিয়া বলেন, মাইকিং শুনে তার পরিবার গবাদিপশু নিয়ে জীবন বাঁচাতে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে।

কুড়িগ্রামে ৫৯ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত : জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যার ক্ষতি এড়াতে জেলা, উপজেলা প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মাঠে কাজ করছেন। চরাঞ্চলের মানুষকে উদ্ধার করতে নৌকা ও ৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউপির সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম জানান, ২০২১ সালে তিস্তায় ভয়াবহ বন্যার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। তাই এবার জানমালের ক্ষতি এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চরের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসতে শুরু করেছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম