আ.লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল
এবার জনগণ টেনেহিঁচড়ে নামাবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে ‘গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে’ সংহতি সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত এ সমাবেশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন।
গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আবার তারা (সরকার) জোরেশোরে বলতে শুরু করেছে, আমরা নির্বাচন করব, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করব, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এসব মিথ্যা কথা বলে, প্রতারণা করে, খালি মাঠে যাকে বলি ওয়াক ওভার নিয়ে আবারও তারা সরকার গঠন করতে চায়। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে এটা করতে বাধা এসেছে। তারা বলেছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন চলবে না, এবার একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ওই নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে হবে না, সম্ভব না। কথা একটাই, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তার কথায় নির্বাচনে গিয়েছিলাম। তিনি জাতির সামনে ওয়াদা করেছিলেন, নির্বাচনে যারা আসবে, তাদের সমান সুযোগ দেওয়া হবে, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হবে। শিডিউল ঘোষণার পর কাউকে গ্রেফতার করা হবে না, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণসহ পৃথিবী দেখেছে সেই নির্বাচন ভোটের আগের রাতে হয়ে গেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) বলেন খেলা হবে। খেলবেন কী, কার সঙ্গে খেলবেন? যাদের সঙ্গে খেলবেন তাদের তো সবাইকে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। পেছনে তাকিয়ে দেখেন গত ১৫ বছরে বিএনপির ৪৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছেন, হাজার হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করেছেন। পত্রিকায় এসেছে যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরবের বিরুদ্ধে সাড়ে ৪০০, যুবদলের বর্তমান সভাপতি সালাহ উদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ৩০০, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে দেড়’শসহ সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। এমনকি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি, আমার বিরুদ্ধে আছে ৯৮টি মামলা, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সব নেতার বিরুদ্ধে একই রকম মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, এত বছর এই মামলাগুলো ফেলে রেখেছিল। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে অতিদ্রুত এ মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে সাজা দিতে বিশেষ সেল তৈরি করা হয়েছে। তারা নির্দেশ দিয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকদের অতিদ্রুত মামলাগুলোর বিচার শেষ করো। দুই মাসের মধ্যে শেষ করো। পুলিশকে বলেছে, যেগুলো চার্জশিট হয়নি, সেগুলোর অতিদ্রুত চার্জশিট করো। এটার নাম হচ্ছে তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের সব রাজনৈতিক দল নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঐক্য গঠন করেছি। পরিষ্কার করে সরকারের কাছে একদফা জানিয়েছি, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, বশংবদ চাটুকার নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তাদের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের মানুষের আজ পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। চালের দাম ৯০ টাকা। ডাল, তেল, লবণসহ প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। মায়েরা তাদের সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারে না, ডিম দিতে পারে না। রিকশা, ঠেলাগাড়ির শ্রমিক ভাইয়েরা আছেন, গার্মেন্ট শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, তারা তাদের জীবন চালাতে পারছেন না। এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবার, যারা মুখ খুলে বলতে পারছেন না, তারাও জীবন চালাতে পারছেন না। সাধারণ মানুষ জীবনজীবিকা চালাতে পারছে না। আর উন্নয়ন উন্নয়ন। থার্ড টার্মিনাল যেখানে বিমান চলাচল করবে, সেই কাজ শেষ হয়নি, সেটারও উদ্বোধন। উদ্বোধন করতে হবে। এই উদ্বোধনে কাজ হবে না।’
প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনি আর মিথ্যাচার করবেন না। গার্মেন্ট মালিকরা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না। প্রতি মাসে এক থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। তাকে এই প্রশ্ন করলে সাংবাদিককে পালটা প্রশ্ন করেন, তেল আনা বন্ধ করে দেই, খাবার আনা বন্ধ করে দেই। তা হলে, তুমি সরকারে থাকবে কেন? তুমি তো দেশ চালাতে পার না, মানুষের খাবার দিতে পার না। জোর করে তোমার ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।’
খালেদা জিয়াকে হত্যার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘দেশনেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তারা এমন কথা বলছে যা মুখে আনা যায় না, অশালীন ও অরুচিকর কথা। আপনি যে তার মৃত্যু চান, তাকে হত্যা করতে চান-এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে আপনার বক্তব্যে। বাঁচানোর মালিক আল্লাহ। আপনি কতদিন টিকে থাকবেন এই ক্ষমতায়। জনগণ আপনাকে টেনে হিঁচড়ে নামাবে।’
নুরুল হক নুরের সভাপতিত্বে ও ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেনের সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, রিপাবলিকান পার্টির কেএম আবু হানিফ, গণঅধিকার পরিষদের মুহাম্মদ রাশেদ খান, আবু হানিফ, শাকিলউজ্জামান, হানিফ খান সজিব, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতেমা তাসনিম, আব্দুজ জাহের, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, আব্দুর রহমান, নিজাম উদ্দিন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আবদুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের আরিফুল হক প্রমুখ।
