Logo
Logo
×

শেষ পাতা

‘শরীফ থেকে শরীফা’র গল্পে পরিবর্তন আনা হচ্ছে

মাধ্যমিকে বিভিন্ন বইয়ে সংশোধনের উদ্যোগ

Icon

হুমায়ুন কবির

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মাধ্যমিকে বিভিন্ন বইয়ে সংশোধনের উদ্যোগ

শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এসব বইয়ে নানা ভুলভ্রান্তি, বাক্য গঠনে অসঙ্গতির মতো বিষয় পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে নিম্নমানের কাগজ ও অনুজ্জ্বল বই। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান বইয়ের ‘শরীফ থেকে শরীফা’র গল্প নিয়ে। এসব বিতর্কের মুখে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বিভিন্ন পাঠ্যবইয়ের ভুলভ্রান্তি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শরীফার গল্পেও সংশোধন করা হবে। মার্চের শেষের দিকে এই সংশোধনী আসতে পারে বলে জানিয়েছে এনটিসিবি। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম ও দশম শ্রেণির একটি বইয়ের মলাটে আরবি নামের ক্ষেত্রে ব্যাকরণগত ভুল রয়েছে, তাতেও পরিবর্তন আসছে।

গত বছর দেশে তিনটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বই পড়ানো হয় শিক্ষার্থীদের। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আরও চারটি শ্রেণিতে এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণি রয়েছে। এসব বইয়ের মধ্যে বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরের বইয়ে ভুলের পরিমাণ বেশি। শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সভায় মূল্যায়ন পদ্ধতি ও কারিকুলাম সংক্রান্ত একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কারিকুলাম এবং পাঠ্যপুস্তক বিতরণ ও মানোন্নয়ন সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভায় এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এনসিটিবির প্রতিনিধি, মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বোর্ডসমূহের প্রতিনিধিরা এই কমিটির সদস্য।

প্রতি বছরই নতুন বইয়ের বানান ও মান নিয়ে কিছু প্রশ্ন ওঠে। তবে এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভুল তথ্য। বানানের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির বাংলা বানান রীতি অনুসরণের কথা বলা হলেও অনেক বানানেই সেই নীতি অনুসরণ করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই ণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধানের নিয়ম মানা হয়নি।

জানা গেছে, নবম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র ও তার ব্যাখ্যায় গাড়ির ত্বরণের মান ও পারদের জন্য চাপের মান ভুল দেওয়া হয়েছে। এই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান বইয়ে ‘দেশটির স্বাধীনতার পেছনে রয়েছে লক্ষ্য মানুষের আÍদান’। এখানে লক্ষ্য এর জায়গায় হবে লক্ষ বা লাখো। এই বইয়ের ৩৬ নম্বর পৃষ্ঠায় র‌্যাডক্লিফকে লেখা হয়েছে র‌্যাডাক্লিফ। এছাড়া ‘সহযোগিতা’কে ‘সহযোগীতা’ লেখা হয়েছে। আর ‘পৃথিবী’র জায়গায় ‘পৃখিবী’ লেখা হয়েছে। এরকম অসংখ্য বানান ও তথ্যের ভুল রয়েছে। একই শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান’ বইয়ের ‘নগর বসতি’ শিরোনামের পাঠে একটি মানচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে লেবানন, সিরিয়া, সামারা, জেরিকা, জুড়িয়া, ইসরাইল, জেরুজালেম, গাম্বিয়া, মিসর, জর্ডান নামক স্থানের অবস্থান দেখানো হয়েছে। সেখানে ফিলিস্তিনের নাম রাখা হয়নি। বইটিতে দাবি করা হচ্ছে, এ মানচিত্রটি প্রাচীন জেরিকো নগরের অবস্থান নির্দেশ করছে। অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান বইয়ের বানান ও তথ্যে ভুল রয়েছে। এই বইয়ে কিলোমিটারকে লেখা হয়েছে ‘কীলোমিটার’ এবং ঝুঁকিকে ‘ঝুঁকী’ লেখা হয়েছে।

এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম ও দশম শ্রেণির ‘কাওয়াইদুল লুগাতুল আরাবিয়্যাহ’ বইয়ের মলাটে এসব শ্রেণির আরবি নামের ক্ষেত্রে ব্যাকরণগত ভুল করা হয়েছে।

চলতি শিক্ষাবর্ষে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৩২৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৩১ কোটি নতুন বই বিতরণের কথা রয়েছে। প্রাথমিকের সব বই যথাসময়ে ছাপানো হলেও নিুমানের কিছু বই ফেরত নেওয়া হয়েছে। এগুলো পুনরায় ছাপানোর কাজ করছে এনটিসিবি। এছাড়া মাধ্যমিকের বেশ কয়েকটি শ্রেণির বইয়ের পাণ্ডুলিপি দেরিতে পাওয়ায় বছরের শুরুতে বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। এখনো বেশ কিছু এলাকায় এসব বই পৌঁছেনি।

এছাড়া জানুয়ারির শুরুতে একটি জেলায় তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বইয়ের মলাটের ভেতরের পাতায় মূর্তির ছবি ছাপানো কিছু বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। পরে এসব বই ফেরত নেওয়া হয়। এরপর সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান বইয়ে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্প নিয়ে শুরু হয় নানা বিতর্ক। এসব ঘটনার জের ধরে ৫ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসবের মধ্যেই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনসিটিবি। বিজ্ঞপ্তিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে কোনো পরামর্শ থাকলে তা জানাতে অনুরোধ করে। অভিভাবক এবং শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মধ্য থেকে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে মতামত আসতে শুরু করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের যেসব বিষয়ে বিতর্ক উঠেছে সেগুলো নিয়ে যাচাই বাছাই চলছে। মেইলের মাধ্যমে আসা বিভিন্ন সুপারিশ, গণমাধ্যমে আসা অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত পর্যালোচনা করে সংশোধন করা হবে। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়গুলো যাচাই বাছাই করে সংশোধনী দেবেন। সেটি আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেব।

শরীফা গল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, এই গল্পের ‘মনে মনে’ লাইনটি নিয়ে সবার আপত্তি রয়েছে। এটি সংশোধন করা হবে। এছাড়া ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান বইয়ের একটি মানচিত্রে ফিলিস্তিনের নাম ঢুকিয়ে সংশোধন করা হবে।

বইয়ের বানান ও তথ্যের ভুল নিয়ে তিনি বলেন, সব বইয়ের নানা ভুলভ্রান্তি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে আমরা আলোচিত বিষয়গুলো নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি আমাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা দ্রুত বিষয়গুলো সমাধান করার চেষ্টা করছি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম