Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা

দরজা বন্ধ করে ছেলেকে পেটালেন ইন্টার্নরা

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দরজা বন্ধ করে ছেলেকে পেটালেন ইন্টার্নরা

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নারীর ছেলেকে দরজা বন্ধ করে বেধড়ক পিটিয়েছে একদল ইন্টার্ন চিকিৎসক। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় হাসপাতালের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। প্রচণ্ড মারধরে সুমন পারভেজ রিপন নামের ওই যুবক ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বলতে থাকেন, ‘আমাকে আর মাইরেন না ভাই। আমি এই কথা কাউকে বলব না। কোথাও কোনো অভিযোগ করব না।’

জানা গেছে, রিপনের মা পিয়ারা বেগম (৬০) ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর বোসপাড়ায়। সামান্য বাকবিতণ্ডার জেরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রিপনকে দুদফা মারধর করে। এ সময় চিকিৎসকেরা তাকে গালাগালও করেন। রিপনের মাথা ন্যাড়া ও তার হাত কেটে দিতে চান। মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টায় রিপন বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকের কাছে তার মায়ের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে যান। রিপোর্ট দেখার সময় চিকিৎসকের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় রিপনকে কৌশলে কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে একদফা মারধর করা হয়। এরপর একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক এলে রিপন তাকে ঘটনার বিষয়ে জানাতে যান। তখন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের সামনেই দ্বিতীয়দফায় রিপনকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে নিয়ে যান। রিপনের বক্তব্য শোনার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, ৫-৬ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক রিপনকে মারধর করছেন। একজন ইন্টার্ন রিপনের টুপি খোলার নির্দেশ দেন এবং চড়থাপ্পড় মারতে থাকেন। তখন রিপন বলতে থাকেন, ‘ভাই মাইরেন না আর।’ ‘ও মা’ ‘ও মা’ বলে চিৎকার করতে থাকেন তিনি। আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘মারতে মারতে তোকে শেষ করে দিব। চিনিস তুই আমাদেরকে? চোখ-কান ফাটাবি তুই?’ রিপন বলতে থাকেন, ‘মাফ চাই ভাই, আর মাইরেন না ভাই।’ তখন একজন ইন্টার্ন বলেন, ‘এই ওর চুলডা খোলেন। ন্যাড়া করে দিই।’ রিপন বলেন, ‘স্যার আমাকে বাহির করে দেন।’ তখন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘এই তুই বের হবি কেন? তুই না ডাক্তার দেখবি? দ্যাখ।’ রিপন বলতে থাকেন, ‘আমার আম্মু মইরে যাবে স্যার। এ রকম করিয়েন না।’ ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘তোর মা মরবে কি না সেটা আমরা দেখব।’

এরপর আবার মারধর শুরু হয়। রিপন চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘ও হাত ভেঙে গেল, হাত ভেঙে গেল। ও মা...ও মা...।’ একপর্যায়ে রিপন হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে থাকেন, ‘স্যার একটু পানি দিবেন প্লিজ। আমার মাথা ঘুরছে।’ এ সময় একজন নার্স এসে পানি দেন। তখন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘মুখ ধো, পানি খাবি না।’ এ সময় রিপন বলেন, ‘আমি কাউকে বলব না। আমাকে বের করে দেন স্যার।’ ইন্টার্ন চিকিৎসক তখন বলেন, ‘আমরা ভয় পাই নাকি তোকে? কাকে বলবি বল।’

সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, হাসপাতালে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কিছু সামনে আসে, বেশিরভাগই আসে না। হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার প্রতিবাদ করায় তার ছেলেকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনাও ঘটেছে। এবার এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, আমরা অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার চাই। তা না হলে রাজশাহীর মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা মাঠে নামব।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে শেখার জন্য পাঠানো হয়েছে। ডাক্তারি করার তাদের লাইসেন্সও আছে। এমন ঘটনা তারা ঘটালে লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে। যদিও আসলে কী ঘটেছে তা আমি জানি না।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহমদ বলেন, ওই ছেলে চিকিৎসকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিল। চিকিৎসকরা তার বিরুদ্ধে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। ছেলেটাকেও আমার কাছে আনা হয়েছিল। মৌখিকভাবে সে জানিয়েছে যে তাকে ইন্টার্নরা মারধর করেছে। আমি তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি।

পরিচালক জানান, রিপন লিখিত অভিযোগ না দিলেও তিনি একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হবে। কমিটির প্রতিবেদনের সঙ্গে যে সুপারিশ আসবে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন তিনি।

এদিকে হাসপাতালে মা চিকিৎসাধীন থাকায় এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ভুক্তভোগী রিপন।

রাজপাড়া থানার ওসি রফিকুল হক বলেন, আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। এটা হাসপাতালের ব্যাপার। তারপরেও কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।

 

রাজশাহী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম