সিলেট বঙ্গমাতা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দুর্নীতি
৫৮ জনের বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা
দুর্নীতিতে সহায়তা করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার * তোয়াক্কা করেননি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির নির্দেশনা
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সিলেটে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারসহ ৫৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জনবল নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মামলাটি করা হয়। সোমবার বিকালে মামলাটি করেন দুদকের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসাইন (ইমন)। মামলার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় সিলেটের উপপরিচালক জাবেদ হাবীব। মামলায় সাবেক উপাচার্য মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী, সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. নঈমুল হক চৌধুরী, উপপরিচালক (পরিবহণ ও উন্নয়ন) ফাহিমা খানম চৌধুরী, সহকারী রেজিস্ট্রার অঞ্জন দেবনাথ, সহকারী কলেজ পরিদর্শক মাইদুল ইসলাম চৌধুরী, সহকারী পরিচালক (পরিবহণ ও উন্নয়ন) মো. গোলাম সরোয়ার, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিলাল আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক (বাজেট) শমসের রাসেল, জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী মো. ফারাজসহ ৫৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার থেকে জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পারস্পরিক যোগসাজশে ব্যক্তিগতভাবে বা অন্যদের লাভবান করতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যমান বিধিবিধান ও আইনকানুন যথাযথভাবে অনুসরণ না করে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে বেতনভাতা বাবদ সরকারের ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৯ টাকা আত্মসাৎ করেন, যা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে এ সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, সাবেক উপাচার্য মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নঈমুল হক চৌধুরী ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে সিন্ডিকেট ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের নিয়োগবিধি না মেনে প্রার্থীদের যথাযথ বয়স ও যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২২০ জনকে ছয় মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে (অ্যাডহক) নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে মেয়াদ অনূর্ধ্ব ছয় মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্ধারিত সময় পূর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিয়মিত না করে আবার অ্যাডহকে দুই থেকে পাঁচবার পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৮-এর ১২-এর ১০ উপধারা অনুযায়ী উপাচার্য শূন্যপদে অ্যাডহক নিয়োগের ক্ষেত্রে অস্থায়ীভাবে অনধিক ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দিতে পারবেন এবং প্রয়োজনে মেয়াদ অনূর্ধ্ব ছয় মাস পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে হয় চাকরি নিয়মিত করতে হবে অথবা অব্যাহতি দিতে হবে। কোনোভাবেই আবার অ্যাডহকে (অস্থায়ীভাবে) নিয়োগ বা মেয়াদ বাড়াতে পারবেন না। তবে তৎকালীন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘন করে অ্যাডহকে নিয়োগ দেন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার তাকে ওই কাজে সহযোগিতা করেন। দুদকের অনুসন্ধানের বিভিন্ন তথ্য এজাহারে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ২৩৯। কিন্তু ইউজিসি অনুমোদিত পদ রয়েছে ১১২টি। অনুমোদিত পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৯৮ জনকে। ইউজিসি থেকে তাদের বেতনভাতা জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হয়। অতিরিক্ত ১৪১ জনের নিয়োগের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি থেকে কর্তৃপক্ষ কোনো অনুমোদন নেয়নি। অনুসন্ধানে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ৫৮ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
