২০২৩-২৪ অর্থবছর
চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের আশা
মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এ বছর (২০২৩-২৪ অর্থবছর) ৩২ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের আশা করছে কর্তৃপক্ষ। কনটেইনারের পাশাপাশি কার্গো (পণ্য) হ্যান্ডলিংয়েও প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করছে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) চট্টগ্রাম বন্দরে ২৩ লাখ ৩৮ হাজার ৩৫৫ টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের) আমদানি ও রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। একইসঙ্গে কার্গো হ্যান্ডলিংও বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯ কোটি ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫৯ টন। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের তুলনায় যা ৫ শতাংশ বেশি।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানিও বেড়েছে। এই সময়ে ৪ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে ৫ শতাংশ।
ইয়ার্ড ও ইকুইপমেন্ট সংখ্যা বৃদ্ধি, কর্ণফুলী নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং, বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের কর্মদক্ষতা এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে সমন্বয়ের কারণে পণ্য হ্যান্ডলিং বাড়ছে বলে মনে করছেন বন্দর-সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, কোভিড অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক উত্তেজনা বিশ্বঅর্থনীতির প্রত্যাশিত গতিকে মন্থর করলেও চট্টগ্রাম বন্দরে এর প্রভাব পড়েনি। কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে এবং রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি রয়েছে। প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থ বছর শেষে ৩২ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বন্দরের নিরবচ্ছিন্ন কর্মতৎপরতা ও দক্ষতার কারণে হ্যান্ডলিং বেড়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সহায়ক অন্যান্য সংস্থা যেমন শুল্ক বিভাগ, ব্যাংক ও শিপিং এজেন্টদের মধ্যে আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে সপ্তাহের প্রতিদিনই চব্বিশ ঘণ্টা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশক। বর্তমানে কনটেইনার জাহাজ বহির্নোঙরে আসার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়তে পারছে, ক্ষেত্রবিশেষে অন-অ্যারাইভাল জেটিতে ভিড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত এক বছরে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৪৩ হাজার বর্গমিটার কনটেইনার-ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে অতিরিক্ত সাত হাজার টিইইউএস কনটেইনার ধারণক্ষমতা বেড়েছে। পাশাপাশি আরও তিনটি কনটেইনার-ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। রাসায়নিক পদার্থ নিরাপদে সংরক্ষণের লক্ষ্যে ৪ হাজার ২৭৫ বর্গমিটার আয়তনের একটি দ্বিতল কেমিক্যাল শেড তৈরি করা হয়েছে।
সূত্রমতে, ইকুইপমেন্ট সংকট কাটাতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। গত এক বছরে ইকুইপমেন্ট বহরে ৫টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন, ১২ টি স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, ৪টি লোডেড রিচ স্ট্যাকার, ৩০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ২টি মোবাইল ক্রেন, ৪টি ফর্ক লিফট ট্রাক ও ৪টি ভেরিয়েবল রিচ ট্রাকসহ মোট ৩২টি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে।
এছাড়া কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট হতে বাকলিয়া চর পর্যন্ত নাব্য বজায় রাখার জন্য ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় ৪৭ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে। এ কারণে লাইটার জাহাজ নিরাপদে চলাচলসহ সু-শৃঙ্খলভাবে বার্থিং করা সম্ভব হচ্ছে। কর্ণফুলী নেভিগেশন চ্যানেল ও জেটির সামনের অংশে নিয়মিত ড্রেজিং করা হচ্ছে। ফলে বাণিজ্যিক জাহাজগুলো নিরাপদে চলাচল ও জেটিতে বার্থিং নিতে পারছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের সমুদ্রকেন্দ্রিক মোট আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশ এবং কনটেইনারজাত পণ্যের ৯৮ শতাংশ পরিবাহিত হয়ে থাকে। বর্তমানে এ বন্দরে ১০ মিটার ড্রাফট (পানির নিচে থাকা জাহাজের অংশ) ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারে।
বন্দরের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৪৪ টিইইউএস। যা তার আগের অর্থবছর থেকে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৪ টিইইউএস কম ছিল। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮ টিইইউএস হ্যান্ডলিং হয়েছিল। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছিল ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৩ টন।
