ঈদের কেনাকাটার কথা বলে স্ত্রী-সন্তানকে হোটেলে নিয়ে হত্যা
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বগুড়ায় আজিজুল হক (২৩) নামে এক সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। স্ত্রীর নাম আশা মনি (২২) ও শিশুর নাম আবদুল্লাহ আল রাফি (১১ মাস)। ঈদের মার্কেট করে দেওয়ার কথা বলে আবাসিক হোটেলে নিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়; শিশুটির মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে করতোয়া নদীতে নিক্ষেপ করা হয়। হোটেলের বাথরুমে পাওয়া যায় গৃহবধূর বিবস্ত্র রক্তাক্ত লাশ, আর খাটের তলায় শিশুর মস্তকবিহীন দেহ। শনিবার রাতে কোনো এক সময় শাজাহানপুর উপজেলার বনানী স্ট্যান্ড এলাকায় শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলের ৩০১ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। রোববার বেলা ১১টায় বিষয়টি টের পেয়ে হোটেল ম্যানেজার আজিজুলকে পুলিশে দেন।
শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, মেয়ের পরিবার দাবি করছে, যৌতুক না পেয়ে আশা মনিকে হত্যা করেছে। আবার আজিজুল হক দাবি করেন, পরকীয়ার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি স্ত্রী ও ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করেছেন। বিকালে এ খবর পাঠানোর সময় সিআইডির বিশেষজ্ঞ দল লাশ দুটি উদ্ধার করছিল। নদী থেকে শিশুটির মাথা উদ্ধারেরও চেষ্টা চলছিল।
আজিজুল হক বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হেউটনগর গ্রামের হামিদুর রহমানের ছেলে। বছরতিনেক আগে বগুড়া শহরের নারুলী তালপট্টির আশাদুল ইসলামের মেয়ে আশা মনিকে বিয়ে করেন তিনি। আজিজুল ১৮ বীর চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সৈনিক হিসাবে কর্মরত। চাকরিবিধি অনুসারে আজিজুলের বিয়ের বয়স না হওয়ায় আশা মনি ধুনটের বাড়িতে থাকতেন। মাঝে মাঝে শহরের নারুলী এলাকায় বাবার বাড়ি আসতেন।
আশামনির ভাই মেহেদী হাসান জানান, আজিজুল প্রায় দু’মাস আগে ছুটিতে ধুনটের হেউটনগর গ্রামের বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে বগুড়া শহরের নারুলী তালপট্টি এলাকায় শ্বশুরবাড়ি আসেন। ঈদের কেনাকাটা ও বেড়ানোর নামে শনিবার বিকালে বাড়ি থেকে বের হন। রাতে ফোনে শ্বশুর আশাদুলকে জানান, শরীর খারাপ লাগায় আশা মনিকে বাড়িতে পাঠিয়ে তিনি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। পরে জানতে পারেন আশা মনি বাড়িতে যায়নি। এরপর শনিবার সারারাত তাকে খোঁজা হয়। ফেসবুকে ছবিসহ তার নিখোঁজ সংবাদও দেওয়া হয়েছিল।
শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর আজিজুল হক স্ত্রী আশা মনি ও শিশু সন্তান রাফিকে নিয়ে রাতযাপনের জন্য আসেন। তাদের তৃতীয় তলায় ৩০১ নম্বর শীতাতপ রুম দেওয়া হয়। রাত ১১টায় আজিজুল হক হোটেল থেকে বের হন। শনিবার বেলা ১১টায় রুমের ভাড়া পরিশোধ করতে আসেন। সঙ্গে স্ত্রী ও ছেলে না থাকায় সন্দেহ হয়। এরপর তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে রুমের ভেতরে বাথরুমে স্ত্রীর গলাকাটা লাশ এবং খাটের তলায় ছেলের মস্তকবিহীন বস্তাবন্দি লাশ দেখতে পায়। হত্যায় ব্যবহৃত একটি চাকু ও একটি চাপাতি পাওয়া যায়। আশা মনির বাবা-মা, জানান, হত্যাকাণ্ডের পর আজিজুল ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে জানান, আশা মনিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ ও অন্যরা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মামলা হলে আজিজুল হককে গ্রেফতার দেখানো হবে। আশা মনির বাবা আশাদুল হক জানান, জামাইকে যৌতুকের ৬ লাখের মধ্যে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। অবশিষ্ট ১ লাখ টাকা না দেওয়ায় আজিজুল তার মেয়ে ও নাতিকে হত্যা করেছে।
