Logo
Logo
×

শেষ পাতা

পরকীয়ায় তছনছ দুটি সংসার

স্বামীকে কুপিয়ে স্ত্রীর আত্মহত্যা

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্বামীর পরকীয়ায় তছনছ হয়ে গেল সাজানো সুখের সংসার। ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে স্ত্রী জোসনা আক্তার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। চেয়েছিলেন স্বামীকে খুন করে নিজেও বিদায় নেবেন চিরতরে। এজন্য ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দুই সন্তানকে অচেতন করেন। এরপর স্বামীর পরকীয়ার বিষকাঁটা আর শারীরিক নির্যাতনে বিপর্যন্ত জোসনা (৩৮) স্বামী আবু সাঈদ স্বপনকে (৪৫) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। শুক্রবার দুপুরে হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগে। ওদিকে স্বপনের পরকীয়ার জেরে শুধু তার নিজের সংসারে বিপর্যয় নেমে আসেনি, ভেঙেছে প্রেমিকার সংসারও।

গোলাপবাগের ভাড়া বাসায় (২৫/খ/১ ৫ম তলা) স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতেন স্বপন। তাকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থ দুই সন্তান সাজিদ হোসেন ইফতি ও সানজিদা আক্তার জোহাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে জোসনার লাশ।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এক যুগ আগে জনৈক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল আবু সাইদ স্বপনের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে নিয়ে ঘর বাঁধতে পারেননি। বিয়ে হয়ে যায় অন্যত্র। এরপর যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ এলাকার জোসনা বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় স্বপনের। বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবন বেশ ভালোই কাটছিল। সুখের সংসারে আসে দুটি সন্তান। বড় সন্তান সাজিদ হোসেন ইফতির বয়স এখন ১৪ বছর, আর মেয়ে সানজিদা আক্তার জোহার বয়স ৭ বছর। কিন্তু বছর চারেক আগে সুখের সংসারে বিষাদের কালো ছায়া ফেলে ‘ফেসবুক’। সামাজিক এ যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক প্রেমিকার সঙ্গে নতুন করে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন স্বপন। ততদিনে প্রেমিকার ঘরেও ৩ সন্তান। কিন্তু দু’জনের পুরনো প্রেম সিনেমার গল্পের মতো দ্রুত সামনে এগুতে থাকে। এক পর্যায়ে সব প্রকাশ হতে থাকে এবং দুই সংসারেই অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। ভেঙে যায় প্রেমিকার সংসার। স্ত্রীর বেপরোয়া পরকীয়ার ঘটনা জানার পর তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেন। এ সুবাদে সাবেক প্রেমিকার সঙ্গে স্বপনের যোগাযোগ আরও বেড়ে যায়। যার বিরূপ প্রভাব পড়ে জোসনার সংসারে। প্রতিবেশীদের কয়েকজন যুগান্তরকে জানান, প্রায় প্রতিদিনই তাদের সংসারে ঝগড়া লেগে থাকত এবং জোসনাকে মারধর করতেন তার স্বামী। শত চেষ্টা করেও স্বামীকে তিনি ফেরাতে পারেননি। জোসনার বড় বোন রূপবান বেগম যুগান্তরকে বলেন, ‘স্বপনের পরকীয়ার কারণে গত তিন বছর ধরে জোসনার সংসারে অশান্তি চলছিল, যা গত এক বছর ধরে চরম আকার ধারণ করে। এদের পারিবারিক সমস্যা সমাধানে বেশ কয়েকবার ঘরোয়া সালিশও হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই স্বপনকে ফেরানো যায়নি। পরিণতিতে আজ এমন নির্মম ঘটনা ঘটল। অকালে প্রাণ দিতে হল আমার বোনকে।’

এদিকে জোসনার চাচাতো ভাই আবদুল করিম যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জোসনা ও তার স্বামীর মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় খবর পাই তাদের বাসার ভেতর থেকে বন্ধ। কেউ ফোন ধরছিল না। পরে ওই বাসায় গিয়ে আশপাশের লোকজনকে নিয়ে দরজা ভেঙে দেখতে পাই এক রুমে আবু সাঈদ স্বপন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বাচ্চা দুটি শুয়ে আছে অচেতন হয়ে। আর আরেক রুমে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় জোসনা ঝুলছে। তাকে নামিয়ে এবং স্বপন ও তার দুই সন্তান ইফতি এবং জোহাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুপুরে চিকিৎসক জোসনাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানান, আবু সাঈদ স্বপনের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদীতে। পরিবার নিয়ে ডিসি অফিসের পেছনে গোলাপবাগে কায়কোবাদের বাসার ৫ম তলায় ভাড়া থাকতেন। স্বপন বেলীরোডের ইনফিনিটি মেগা শপের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি বলেন স্বপন এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত ছিল। এর জেরেই এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, সকালে অসুস্থ ছোট মেয়েটি দেখেছে তার মা-বাবা মারামারি করছে। ইফতি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ৯ম শ্রেণীতে পড়ে, জোহা স্থানীয় একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে। তিনি জানান, ইফতি তাকে জানিয়েছে, জোসনা রাতে তাদের পান খাওয়ান। এর পরপরই তারা ঘুমিয়ে পড়ে। পরে আর কিছুই দেখেনি তারা। তিনি বলেন, স্বামী স্বপন তার পরকীয়া প্রেমিকাকে বিয়ে করেছেন এমন সন্দেহ নিয়ে কিছুদিন ধরে পারিবারিক কলহ লেগেই ছিল তাদের মধ্যে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে জোসনা তার স্বামীর গলাকেটে হত্যার চেষ্টা করেছিল। বঁটি দিয়ে স্বপনের গলা কাটে এবং এলোপাতাড়ি কোপায়। এরপর পাশের কক্ষে গিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে। প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে জোসনা ও স্বপনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। সে সময় বড় সন্তানের ঘুম ভেঙে যায়। স্বপনকে কুপিয়ে জখম করে জোসনা যখন পাশের কক্ষের দরজা আটকে আত্মহত্যা করেন, তখন বড় সন্তান ইফতি দরজা ধাক্কাধাক্কি করেছিল।

যাত্রাবাড়ীর থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, স্বামীর পরকীয়ার কারণে ঐ পরিবারে বেশ কিছুদিন ধরে কলহ চলছিল। আর তারই কারণে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে কৌশলে জোসনা তার দুই সন্তানকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করেন। শুক্রবার সকালে তিনি ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্বামী আবু সাঈদ স্বপনের গাঢ়ে ও গলায় আঘাত করে রক্তাক্ত করেন। এরপর নিজে পাশের রুমে গলায় ফাঁস দেন। পরে স্বজনরা দরজা ভেঙে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এ ছাড়াও অন্য কোনো কারণ রয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, জোসনার মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। সন্তানদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় পাঠানো হয়েছে। আহত স্বামী স্বপন ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম