Logo
Logo
×

শেষ পাতা

চট্টগ্রামে চালু হলো ৯০ ভাগ পোশাক কারখানা

উপস্থিতি ৯৫ শতাংশ, ৭ দিনের ব্যাংক ইন্টারেস্ট মওকুফের দাবি মালিকদের

Icon

শহিদুল্লাহ শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

টানা ৩ দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার চট্টগ্রামে গার্মেন্ট কারখানা চালু হয়েছে। জরুরি পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির স্বার্থে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা কারখানা চালু রাখার দাবি করার পর জেলা প্রশাসন কারখানা চালুর অনুমতি দিয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ইপিজেডের বাইরে চট্টগ্রামের ৯০ শতাংশ কারখানা চালু করা হয়। ৯৫ শতাংশ শ্রমিক কারখানার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কর্মস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। তাদের কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তির মুখে পড়তে হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ৩ দিন পর কর্মস্থলে ফিরতে পেরে শ্রমিকরাও বেশ আনন্দিত। এদিকে কারখানা চালু করতে পারায় চট্টগ্রামে গার্মেন্ট শিল্প মালিক এবং বিজিএমইএ নেতারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এখন তারা দ্রুত ইন্টারনেট চালুর দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এ খাত সংশ্লিষ্ট ঋণ বা এলসির ৭ দিনের ব্যাংক ইন্টারেস্ট মওকুফের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ইন্টারনেট চালু হলে তাদের সঙ্গে বায়ার ও বহির্বিশ্বের যে ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’ হয়েছে সেই গ্যাপ পূরণ করা সম্ভব হবে। আর ৭ দিনের ব্যাংক ইন্টারেস্ট মওকুফ করা হলে পোশাক শিল্পের বিপুল আর্থিক ক্ষতির কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

সূত্র বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও এ নিয়ে সুযোগ সন্ধানীদের সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণে গত ৩ দিন ধরে চট্টগ্রামে পোশাক কারখানাগুলো অচল হয়ে পড়ে। শ্রমিকদের অনুপস্থিতি, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া, সর্বোপরি কারফিউ জারির কারণে এই অচলাবস্থা দেখা দেয়। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কারখানায় তৈরি হতে থাকে স্টকলট। যথাসময়ে শিপমেন্ট করতে না পারলে রপ্তানি আদেশ বাতিল হবে-এমন শঙ্কায় দিন পার করেন তারা। এ অবস্থায় সোমবার বিজিএমএই নেতারা চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও সিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠক থেকে তারা জরুরি পণ্য উৎপাদনে গার্মেন্ট কারখানা চালুর অনুমতি চান। একইসঙ্গে শ্রমিকরা যাতে কারখানায় নির্বিঘ্নে আসা-যাওয়া করতে পারে সেই নিরাপত্তা চান। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত দেন যে, চট্টগ্রামে মালিকরা নিজ দায়িত্বে কারখানা চালু করতে পারবেন। শ্রমিকদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আইডি কার্ডকে চলাচল পাশ হিসাবে ধরা হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মেসেজ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের আশ্বাস ও অনুমতি পেয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রামে গার্মেন্ট কারখানা চালু করা হয়। সকাল থেকেই গার্মেন্টের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাসে, আবার কেউ কেউ বিকল্প উপায়ে কারখানায় উপস্থিত হন। তাদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠে কারখানা।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে ইপিজেডের বাইরে ছোট-বড় ৪০০ গার্মেন্ট কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে মূল কারখানার ৯০ ভাগ চালু করা হয়। বেশিরভাগ শ্রমিক কারখানার ব্যবস্থাপনায় বাসে এবং অন্যরা বিকল্প উপায়ে হেঁটে, অথবা রিকশা টেম্পোতে কর্মস্থলে পৌঁছে। তবে এ ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়া গোনার পাশাপাশি পোহাতে হয়েছে দুর্ভোগ। এর পরও কর্মস্থলে ফিরতে পেরে গার্মেন্ট শ্রমিকদের চোখেমুখে দেখা গেছে আনন্দের ছাপ।

গার্মেন্ট কারখানা চালু করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) চট্টগ্রামের প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। গত ৩ দিন ধরে সব ধরনের রপ্তানি বন্ধ। বন্ধ ছিল কারখানাও। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় পোশাক আমদানিকারক দেশগুলো তথা বায়ারদের সঙ্গে তাদের সব ধরনের যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে উৎপাদন ও শিপমেন্ট পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় আমদানিকারকদের সঙ্গে তাদের ভুল বোঝাবুঝি ও গ্যাপ সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে ৩ দিনে উৎপাদন ও রপ্তানি বন্ধ থাকায় বিপুল অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়ে রপ্তানি পোশাক শিল্প। সোমবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে মঙ্গলবার থেকে কারখানা চালুর অনুমতি ও নিরাপত্তা বিধানের যে কথা দেওয়া হয়েছিল জেলা প্রশাসন তাদের কথা রেখেছে। সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু চট্টগ্রাম নয়; সারা দেশে গার্মেন্ট কারখানা চালুর অনুমতি দেওয়া হোক। পাশাপাশি যোগাযোগ স্থাপনে দ্রুত ইন্টারনেট সেবা চালু এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্ট ঋণ বা এলসির অন্তত ৭ দিনের ব্যাংক ইন্টারেস্টে মওকুফের দাবি জানান তিনি।

চট্টগ্রামের অক্সিজেন এলাকায় অবস্থিত জেকে শার্ট অ্যান্ড ফেব্রিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুর রহিম যুগান্তরকে বলেন, নগরীর বিভিন্ন স্থানে তার চারটি গার্মেন্ট কারখানা রয়েছে। এতে কর্মরত রয়েছেন সাড়ে পাঁচ হাজার শ্রমিক। ৩ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল সব কারখানা চালু করা হয়। এতে ৯৫ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তাদের কারখানায় আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। কোথাও কোনো বাধা পেতে হয়নি শ্রমিকদের। তার কারখানায় উৎপাদিত পোশাকের অর্ধেকই জাপানে রপ্তানি করা হয়। ৩ দিন উৎপাদন ও শিপমেন্ট বন্ধ থাকার কারণে কারখানায় ‘লাইবিলিটি’ ক্রিয়েট হয়েছে। এ বিষয়টি সরকারকে ‘কনসিডারেশনে’ নিতে হবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে আমরা গার্মেন্ট কারখানা মঙ্গলবার থেকে চালুর অনুমতি দিয়েছি। শ্রমিকদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার চট্টগ্রামে কারখানা চালু হয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। পণ্য পরিবহণে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম