Logo
Logo
×

শেষ পাতা

দ্রুত সময়ে স্বাভাবিক পরিবেশ চান সবাই

ঢাকার সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা

Icon

ইকবাল হাসান ফরিদ

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকার সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা

রাজধানীর সড়কে ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াই চলছে যানবাহন। তবে ব্যস্ততম মোড়গুলোতে শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবী মানুষ দাঁড়িয়ে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করছেন। অন্যদিকে সড়কে কোথাও ইউনিফর্মে পুলিশের দেখা পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন থানার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে কোনো ধরনের সেবা পাচ্ছেন না নাগরিকরা। এদিকে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর বিজয় মিছিলের পাশাপাশি কিছু দুষ্কৃতকারী থানায় থানায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট চালায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের নৈরাজ্য বন্ধ না হলে দেশ নতুন করে সংকটে পড়তে পারে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সেনাপ্রধানের এবার উচিত হবে নির্দেশ দেওয়া যেন সেনাবাহিনী সংঘাত এড়াতে ভূমিকা পালন করে। পুলিশকে সাহস দেওয়া দরকার। পুলিশের মাঝেও নৈতিকতা ফিরিয়ে আনা দরকার। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর কারফিউ তুলে নিয়ে মঙ্গলবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত খুলে দেওয়া হয়। এদিন সকাল থেকে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা ভঙ্গুর রূপ ধারণ করে। গণপরিবহণ তেমন একটা না নামলেও সিএনজি রিকশা এবং প্রাইভেট পরিবহণের চলাচল ছিল উল্লেখযোগ্য।

রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবী মানুষ সড়কের ট্রাফিক পয়েন্টগুলোর হাল ধরেছেন। তারা হাতে লাঠি নিয়ে বাঁশি বাজিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করেছেন। শিক্ষার্থীরা তাদের এই কর্মকাণ্ডে অনেকটা প্রশংসিত হয়েছেন। তাদের খাবার এবং পানি দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বিভিন্নজন। অনেকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন এমন উদ্যোগের জন্য। আবার কেউ কেউ গত সোমবারের থানা এবং সরকারি স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুরের কথা উল্লেখ করে আতঙ্কিত বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিজয়সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামটর, নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাব, উত্তরার আজিমপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিজয় সরণি মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, এখানে ১০-১২ জনের একটি দল সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছেন। তাদের কেউ শিক্ষার্থী, কেউ পেশাজীবী, আবার কেউ স্থানীয়। একটি দল ১০ মিনিট পরপর লেন ছাড়ছে, অন্য দলটি আটকে রাখছে আরেকটি লেন। ফাঁকা হলে নতুন লেন দিয়ে শুরু হচ্ছে যাত্রা। কেউ উলটোপথ ধরলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঠিক যেন পেশাদার ট্রাফিক পুলিশ। তারা জানিয়েছেন, নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে সড়কে এসেছেন প্রত্যেকেই। অ্যাম্বুলেন্স দেখলেই অগ্রাধিকার দিয়ে হাতের ইশারায় পার করে দিচ্ছেন তারা।

চন্দ্রিমা উদ্যান মোড়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন আশিক নামে এক যুবক। তিনি একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। আশিক বলেন, আমার অফিস বন্ধ, তাছাড়া সড়কে ট্রাফিক নেই, মানুষের চলাচলে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, তাই সকাল থেকেই এখানে দায়িত্ব পালন করছি।

ফার্মগেট সিগন্যালেও কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। দুপুর দেড়টার দিকে এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরিকুল জানান, দেশ ও মানুষের স্বার্থে কাজ করে ভালোই লাগছে। ফার্মগেট মোড়ে প্রাইভেটকার আরোহী জামিল হোসেন বলেন, যত দিন আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে না নামবে, ততদিন পর্যন্ত এরাই ট্রাফিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করবে বলে আমি মনে করি।

এটি ভালো উদ্যোগ। তাদের ধন্যবাদ দিচ্ছি। ফার্মগেট মোড়ে রিকশারোহী আব্দুস সামাদ বলেন, রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই দেখে অনেকটা আতঙ্কের মধ্যে যাত্রা অতিক্রম করছি। তিনি বলেন, লাঠি হাতে লোকজন দেখলে এখন ভয় লাগে। তবে এমন পরিস্থিতিতে সড়কে শিক্ষার্থীসহ লোকজন দাঁড়িয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে-এটি ভালো উদ্যোগ বলে যোগ করেন তিনি। কাওরান বাজার মোড়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় ৮-১০ জন শিক্ষার্থীকে। তাদের মধ্যে একজন ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জিসান। তিনি জানান, সকাল থেকে গাড়ি চলাচলে এই ট্রাফিক পয়েন্টে সমস্যা হচ্ছিল। পরে আমরা দাঁড়িয়ে সিগন্যালের শৃঙ্খলা ফেরাই। বাংলামটর সিগন্যালেও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তাদের সঙ্গে রয়েছেন সাধারণ মানুষও। উলটোপথ দিয়ে একজন মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন দেখে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বাংলামটরে দায়িত্বপালনরত অপু নামের এক যুবক জানান, এখানে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে জেনে এসে দায়িত্ব পালন করছি।

নীলক্ষেত মোড়ে গাড়ির সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করছিলেন ঢাকা কলেজ ও আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষার্থী। সাইন্স ল্যাব মোড়ে দায়িত্ব পালন করা ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নাইমুল বলেন, যানবাহন যাতে শৃঙ্খলার সঙ্গে চলতে পারে এজন্য আমরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ না ফিরবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা দায়িত্ব পালন করব জনস্বার্থে।

এদিকে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি। একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে তাদের বক্তব্যও নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম