প্রধান উপদেষ্টার সহকারী পরিচয়ে ওসির কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি
ফোনকলকারীকে শনাক্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সহকারী পরিচয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপির) পাহাড়তলী থানার ওসির কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সিএমপিতে চলছে তোলপাড়। বুধবার রাতে পাহাড়তলী থানার ওসি কেপায়েত উল্লাহর মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দাবি করা ব্যক্তি নিজেকে হাবিবুল ইসলাম বলে পরিচয় দেন। এছাড়া তিনি গ্রামীণ সেন্টার নামে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত সহকারী বলে দাবি করেন। পুলিশ ওই ফোনকলকারীকে শনাক্তে মাঠে নেমেছে। পাহাড়তলী থানার ওসি কেপায়েত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ‘গলা শুনে ফোনকলকারীকে একজন যুবক বলে মনে হয়েছে। যুবকটি আমাকে ফাঁদে ফেলতে চেষ্টা করেছিল।’
কথোপকথনের ৭ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড যুগান্তরের হাতে এসেছে। তাতে ওসি কেপায়েত উল্লাহকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার পাহাড়তলী থানায় কোনো ঘটনাই নেই। গণহত্যায় আমরা কীভাবে যাব? উত্তরে চাঁদা দাবিকারী ওই ব্যক্তি বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন, ঢাকা মেট্রোপলিটনের ম্যাক্সিমাম ওসি এখানে জড়িত আছে। এরপর এই লিস্ট দুদকে চলে যাবে। ঝামেলায় পড়ে যাবেন। যদি হয় আর কী। যদি প্রথমেই বাদ যান তাহলে ঝামেলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে যাবেন। আমি জানি যে আপনার ওখানে তেমন কিছু হয় নাই...।’
ওসি বলেন, ‘আমার এখানে তো ঘটনাই নাই। তাইলে আমি কেন এখানে...।’ তার কথা শেষ না হতেই ওই ব্যক্তি বলেন, ‘না না, ঘটনা নাই কিন্তু ঘটনার লিস্ট তো চলে আসছে। এখন এটা অলরেডি চলে আসছে এবং রেজিস্ট্রিভুক্ত হয়ে গেছে।’
ওসি তার নাম জানতে চাইলে তিনি নিজেকে হাবিবুল ইসলাম পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমরা গ্রামীণ সেন্টারে ছিলাম এখন ওনার (ড. ইউনূস) ব্যক্তিগত সহকারী হিসাবে কাজ করছি। আগেও করছি, এখনো আছি।’
ওসি বলেন, ‘আমার থানা ডেমেজড হয়ে গেল, বাঁচার জন্য যুদ্ধ করলাম। আমার থানায় কোনো লোকও মরেনি।’
যুবক বলেন, ‘এখানে একটা অপশন আছে অব্যাহতি দেওয়ার। ধরেন আপনার থানায় কোনো হত্যাকাণ্ড বা কিছু হয় নাই। এখন এই অপশনে... এখন যেহেতু লিস্টভুক্ত হয়ে চলে আসছে। এখান থেকে সহজে বাদ দেওয়ার কোনো উপায় নেই। এখন আমরা হয়তো এখানে আমাদের টিম আছে, কাজ করে এগুলা। এটা প্রধান উপদেষ্টার কাছে চলে গেলে চলে যাবে কোর্টে। কোর্টে একটা উকিল এটাকে ইয়ে করে হয়তো এটা হত্যা মামলায় ইয়ে হয়ে যাবে। আর এখানে ছাত্রদের সহযোগিতায় সাক্ষী-টাক্ষীসহ অনেক কিছুর ব্যাপার আছে। যাহোক এটা পরে বলব। এখন বের হওয়ার একটা অপশন আছে। আপনি কীভাবে বের হতে চাচ্ছেন এটা আপনার ব্যাপার। আপনি বলেন। এখানে খোলামেলা হচ্ছে আপনাকে ফিন্যান্সিয়ালভাবে যদি কিছু ইয়া দেন তাইলে আমি বলে এটা বাদ দিতে পারব যে, ওখানে কিছু হয় নাই। আমরা এখান থেকে এটা আউট করে দিলাম। সংখ্যা তো কমানো যাবে না। এখানে অন্য একটা নাম অ্যাড করে দিলাম। ঢাকা থেকে বা অন্য কোনো সেক্টর থেকে। এখানে আসলে... ফিন্যান্সিয়ালটা আপনাকে দিতে হবে। ভালো একটা অ্যামাউন্ট দিতে হবে। না হলে তো এখান থেকে একটা লোককে আউট করে আরেকটা লোককে দেওয়ার ব্যাপার আছে। আপনাকে মিনিমাম লাখ ফিফটির মতো খরচ করতে হবে।’
ওসি বলেন, ‘আমি ৫০ লাখ জীবনে দেখিও নাই। এত টাকা আমার বাপ-দাদার জমি বিক্রি করলে হয়তো হতে পারে। আমিও ফকির হয়ে যাব। আমার থানায় গণহত্যা হলো না আমি গণহত্যার আসামি হয়ে গেলাম।’ পাহাড়তলী থানার ওসি কেপায়েত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাকে ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিল। ফোন করা যুবককে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’
