Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সাড়ে ৭ বছর পর এস আলমের প্রভাবমুক্ত

ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদ

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (আইবিবিএল) পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে পাঁচ সদস্যের নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে। আপাতত স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হলো। এখন থেকে এ পর্ষদই ব্যাংকটি পরিচালনা করবে। নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও চারজন পরিচালক।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে। চিঠিতে পর্ষদ বাতিল এবং নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে। নতুন পর্ষদের প্রথম বৈঠক শিগ্গিরই অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৭ বছর পর ব্যাংকটি এস আলমের দখলমুক্ত হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বৃহস্পতিবার ওই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাল-জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটনে বিশেষ তদন্ত করার। নতুন পর্ষদ কাজ শুরু করলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শকরা তদন্ত শুরু করবেন।

স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জলিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক এম মাসুদ রহমান ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আব্দুস সালাম। এর মধ্যে আব্দুস সালাম বেশ আগে ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন। নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের এবং ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যাংকার হিসাবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।

এর আগে গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

উল্লেখ্য, বিগত সরকারের আমলে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলে নেয় এস আলম গ্রুপ। তারা নামে-বেনামে শেয়ার কিনে তৎকালীন সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আগের পরিচালকদের পদত্যাগ করাতে বাধ্য করে। পরে এস আলম গ্রুপের প্রতিনিধিরা ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ পান। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ বিষয়ে কোনো আপত্তি না করে অনুমোদন দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে তারা ব্যাংকটিতে নজিরবিহীন লুটপাট করে। তাদের লুটপাটের কারণে দেশের সবচেয়ে সবল ব্যাংকটি দুর্বল হয়ে পড়ে। আগে ব্যাংকটি অন্য ব্যাংককে ধার দিত, এখন ব্যাংকটি ধার করে চলছে।

সূত্র জানায়, এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে থাকা সব ধরনের শেয়ার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তাদের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে এস আলম গ্রুপের বাইরে যাদের কমপক্ষে ২ শতাংশ শেয়ার থাকবে, তাদের মধ্য থেকে পরবর্তী সময়ে নতুন পরিচালক নিয়োগ করে ব্যাংকটির স্থায়ী পর্ষদ গঠন করা হবে। বর্তমানে ব্যাংকটির মালিকানা নেওয়ার পর এস আলম গ্রুপ নজিরবিহীন লুটপাট শুরু করে। এখন পর্যন্ত প্রাথমিক হিসাবে গ্রুপের নিজস্ব কোম্পানির নামে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বেনামি কোম্পানির নামে নিয়েছে আরও প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এসব মিলে এখন পর্যন্ত ৫৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার তথ্য মিলেছে। গ্রুপটির বেনামে আরও ঋণ নেওয়ার তথ্য রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব অর্থের বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে।

এস আলম গ্রুপের হাতে বর্তমানে ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৮২ শতাংশের মালিকানা আছে। ইতোমধ্যে এসব শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ব্যাংকটি থেকে ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এলসি খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ মার্জিন নিতে হবে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো ব্যাংকে একক ব্যক্তি, পরিবার বা গ্রুপের নামে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ার থাকতে পারবে। এর বেশি ধারণের বিধান নেই। কোনো কারণে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপ কোনো ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করে তবে বাড়তি শেয়ার বা সমুদয় শেয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজেয়াপ্ত করতে পারে। প্রয়োজন হলে নতুন শেয়ার ইস্যু করে ব্যাংক পুনর্গঠন করতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় এর আগে বেসরকারি খাতের সাবেক ওরিয়েন্টাল ব্যাংক বর্তমান আইসিবি ইসলামী ব্যাংক পুনর্গঠন করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম