বন্দরে আটকা সাবেক এমপিদের ৫২ গাড়ি
ফেরত না পাঠিয়ে বিক্রির মাধ্যমে আদায় হবে শুল্ক: অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বন্দরে আটকে পড়া সাবেক সংসদ-সদস্যদের (এমপি) আমদানি করা শুল্কমুক্ত গাড়ি ফেরত পাঠানো হবে না। বাজারমূল্যে এসব গাড়ি বিক্রির নির্দেশ দিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের নিয়ে এক বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এমন নির্দেশ দেন তিনি। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমদানি করা গাড়িগুলো ফেরত পাঠালে দেশ রাজস্ব হারাবে। সহজ শর্তে এসব গাড়ি বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।
বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, মূলত পণ্য আমদানি ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক আহ্বান করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে এফসিসিআইর প্রতিনিধি, আমদানিকারক, ট্যারিফ কমিশন, এনবিআর প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় রাজস্ব আহরণ প্রসঙ্গে আলোচনায় সংসদ-সদস্যদের গাড়ি আমদানি প্রসঙ্গ ওঠে। তখন এনবিআরের পক্ষ থেকে এসব গাড়ি বিষয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হয়।
উপদেষ্টা জানান, এ মুহূর্তে রাজস্ব দরকার। গাড়িগুলো বিক্রি করা হলে অনেক রাজস্ব আয় হবে। ফলে বাজারমূল্যে নির্ধারিত শুল্ক দিয়ে গাড়িগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, অনেকে হয়তো এসব গাড়ি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কিনতে সাহস পাবেন না। তবে এক্ষেত্রে বিক্রির জন্য কিছু শর্ত সহজ করতে হবে। তাহলে গাড়িগুলো বিক্রির মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ও হবে।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের এমপিদের ৫২টি গাড়ি এসে বন্দরে পৌঁছেছে। কয়েকদিনের মধ্যে আরও কিছু আসার কথা। তবে শেষ পর্যন্ত শুল্ক না দিলে এসব গাড়ি বন্দর থেকে ছাড়াতে পারবেন না আমদানিকারকরা। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, ‘শুল্কমুক্ত সুবিধার কাগজপত্র দিয়ে এসব গাড়ি আনা হলেও সংসদ ভেঙে দেওয়ায় আর সেই সুবিধা পাওয়া যাবে না। এখন স্বাভাবিক শুল্ক-কর দিয়ে গাড়িগুলো খালাস করতে হবে।
এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, এ ৫২টি গাড়ির (যার বেশিরভাগই টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ও ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো) আমদানি মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। সবচেয়ে কম দামের ল্যান্ড ক্রুজারটি আমদানি করা হয়েছিল ৯৮ লাখ টাকার সামান্য কিছু কমে। শুল্ক দিতে গেলে গাড়িটির দাম পড়বে প্রায় ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা ৩ হাজার ৩৪৬ সিসির এ গাড়িটির স্বাভাবিক শুল্ককর হার ৮২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা গাড়িগুলো আমদানি করেছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
এছাড়া চিত্রনায়ক ফেরদৌস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও নেত্রকোনার সাবেক এমপি সাজ্জাদুল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসএকে একরামুজ্জামান, ফয়জুর রহমান, সিরাজগঞ্জের চয়ন ইসলাম ও জান্নাত আরা হেনরি, নাটোরের আবুল কালাম ও সিদ্দিকুর রহমান পাটওয়ারী, বগুড়ার মজিবুর রহমান মঞ্জু ও রেজাউল করিম তানসেন, টাঙ্গাইলের অনুপম শাহজাহান জয় রয়েছেন।
আরও আছেন হবিগঞ্জের ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, সুনামগঞ্জের রনজিৎ সরকার ও ড. সাদিক, গাইবান্ধার আবুল কালাম আজাদ, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া সাবেক সংসদ-সদস্য ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, যশোরের নওয়াব আলী জোয়ার্দার, ঝিনাইদহের নাসের শাহরিয়ার জাহিদি, লক্ষ্মীপুরের মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং দিনাজপুরের মুহাম্মদ জাকারিয়া।
এছাড়া সাবেক সংসদ-সদস্যদের মধ্যে গাড়ি আমদানি করেছেন আব্দুল মোতালেব, মোহাম্মদ গোলাম ফারুক, শাহ সরওয়ার কবির, এবিএম আনিসুজ্জামান, সাদ্দাম হোসাইন পাভেল, এসএম আল মামুন, আক্তারুজ্জামান, সাইফুল ইসলাম, এসএম কামাল হোসেন, মাহমুদ হাসান রিপন, মুজিবুর রহমান, এসএম আতাউল হক, মাহমুদুল হক সায়েম, মতিউর রহমান, তৌহিদুজ্জামান, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ ও সিদ্দিকুল আলম। সংরক্ষিত আসনে সদস্যদের মধ্যে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেছেন তারানা হালিম, সানজিদা খানম, নাসিমা জামান ববি, খালেদা বাহার বিউটি, রুনু রেজা ও সাহিদা তারেক দিপ্তি।
ব্যবসার ক্ষেত্রে টেবিলের নিচে কোনো লেনদেন নয় : ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখন থেকে টেবিলের নিচ দিয়ে কোনো লেনদেন করবেন না। কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবেন। তবে মাত্রারিক্ত মুনাফা করা যাবে না। বিপরীতে ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজি বন্ধ ও এলসি খোলার জটিলতা নিরসনের দাবি জানান।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, সার, কীটনাশক, জ্বালানি, খাদ্য এগুলো আমদানির কোনো কিছুই আটকাচ্ছে না। যেভাবেই হোক বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা করছে। কিছু কিছু জায়গা আছে সময় লাগবে, তবে অতি প্রয়োজনীয় কোনো কিছু আটকাবে না।
খাদ্যপণ্যের রাশিয়ান একটি জাহাজ ক্লিয়ার করে দিতে বলা হয়েছে বলে যোগ করেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা। উপদেষ্টা আরও বলেন, স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। আমাদের কোনো এজেন্ডা নেই, রাজনৈতিকও না, প্রশাসনিকও না। আমরা আসছি স্বল্প সময়ের জন্য। কারও প্রতি আমাদের কোনো বিরাগ নেই, অনুরাগও নেই।
