Logo
Logo
×

শেষ পাতা

শেয়ারবাজারে কারসাজি

সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা

বিমা কোম্পানির শেয়ার কারসাজির দায়ে তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ঘটনায় কারসাজির নায়ক মো. আবুল খায়ের হিরুসহ আরও তিন ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তারা সবাই তালিকাভুক্ত কোম্পানি প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সে কারসাজি করেছে। বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

শেয়ারবাজারে সাকিব ও হিরুচক্রের কারসাজির বিষয়টি ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে সামনে আনে দৈনিক যুগান্তর। এরপরই বিষয়টি আলোচনায় আসে। প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ছাড়াও সাকিব আল হাসান আরও ৬টি কোম্পানিতে কারসাজি করেছেন। এগুলো হলো এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন শুজ, বিডিকম, আইপিডিসি এবং এনআরবিসি ব্যাংক। পরে সাকিবকে প্রথমে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সাম্প্রতিক সময়ে বিএসইসির শুভেচ্ছাদূত থেকে বাদ দেওয়া হয়। শেয়ারবাজার ছাড়াও ব্যাংকের মালিকানা, স্বর্ণ ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, প্রসাধনী, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, ক্রিকেট ক্লাব, ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল এবং কাঁকড়া ও কুঁচিয়ার খামারের ব্যবসা রয়েছে। সাকিব ও হিরুকে নিয়ে যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, রেস্টুরেন্টে বিনিয়োগের মাধ্যমে সাকিবের ব্যবসায় হাতেখড়ি। আলোচিত গেম্বলার হিরুর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসেন সাকিব। পরিচয় বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঙ্গে। এরপর বানানো হয় বিএসইসির শুভেচ্ছাদূত। তাকে সম্পৃক্ত করার উদ্দেশ্য ছিল এ দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং। কিন্তু একের পর এক বাজে কাজে জড়ান সাকিব। পরে শুভেচ্ছাদূত থেকে বাদ পড়েন।

দেখা যায়, সাকিবের নামে ৪টি বিও অ্যাকাউন্ট খুলে অস্বাভাবিকভাবে শেয়ার লেনদেন করেছেন। এর মধ্যে ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টে ১৬০৫৫৪০০৭৪১৪০৭১৯ বিও অ্যাকাউন্ট, ইবিএল সিকিউরিটিজে ১২০১৯৫০০৬৪৯৭৬২৩৭, এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টে ১৬০৪৫৩০০৬৯৫৮৫৫৭৪, আইআইডিএফসিতে ক্লায়েন্ট কোড ০৮০৪৯ এবং নিজ প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংসের নামে অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে ১৬০৫১১০০৭১২১২০১০ বিও অ্যাকাউন্টে শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ অ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে তিনি অস্বাভাবিক লেনদেন করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছেন। এ ধরনের কাজকে কারসাজি বলে। এ অ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে ৭টি কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি করেছেন। কারসাজি গ্রুপে তার নাম থাকলেও এর আগে সাকিব আল হাসানকে সরাসরি কোনো ধরনের শাস্তি দেয়নি কমিশন।

বিএসইসি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করেছে তারা। এর ফলে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ হয়েছে। এ কারণে মো. আবু খায়ের হিরুকে ২৫ লাখ, সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ, ইশাল কমিউনিকেশনকে ৭৫ লাখ, সাকিবের প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্ট ১ লাখ, হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরকে ১০ লাখ, লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজকে ১ লাখ এবং মো. জাহেদ কামালকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এদিকে বেসরকারি পিপলস ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছেন সাকিব। ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ব্যাংকটিতে ২টি পরিচালক পদ নিয়েছেন। একটিতে সাকিব নিজে, অপরটিতে তার মা শিরিন আক্তারের নাম রয়েছে। শেয়ারবাজারে নতুন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান এই তারকা ক্রিকেটার। প্রতিষ্ঠানের ৩৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। বাকি সমপরিমাণ শেয়ারের মালিক যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে ব্যবসায়ী জাভেদ আজিজ মতিন ও আবুল খায়ের হিরু। শেয়ারবাজারে কারসাজি ছাড়াও সাকিবের বিরুদ্ধে অনুমোদন না নিয়ে স্বর্ণ ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। ২০২২ সালের ২২ এপ্রিল রাজধানীর বনানীতে সাকিবের দুই প্রতিষ্ঠান রিলায়েবল কমোডিটি এক্সচেঞ্জ এবং বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্বর্ণ ব্যবসার শোরুম চালু করে। কিউরিয়াস লাইফ স্টাইলের সঙ্গে যৌথভাবে স্বর্ণ ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। নিয়ম অনুসারে কোনো প্রতিষ্ঠানের কমোডিটি পণ্যসংক্রান্ত ব্যবসা করতে হলে বিএসইসির অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু সাকিবের প্রতিষ্ঠান এ অনুমতি নেয়নি। এরপর তাদের ব্যাখ্যা তলব করে বিএসইসি। তবে সাকিবকে জরিমানা না করে ওই সময়ে ছাড় দেওয়া হয়। দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে বিনিয়োগ করেছেন তিনি।

অন্যদিকে আবুল খায়ের হিরুর অপরাধের শেষ নেই। দীর্ঘদিন ধরে সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার তিনি। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও শেয়ারবাজারে বেপরোয়া কারসাজি করেছেন। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার পোর্টফোলিও ম্যানেজ করেছেন হিরু। এসব কাজে তাকে সরাসরি সহায়তা করেছেন শিবলী রুবাইয়াত। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও শেয়ারবাজার কারসাজিতে হিরুর নাম উঠে এসেছে। পরিবারের সব সদস্যকেও এখানে জড়িয়েছেন। দুই বছর আগেও বাজারে প্রচলিত ছিল-‘হিরুর জ্বর হলে শেয়ারবাজারে সর্দি নামে’। গত তিন বছরে ১৫টি ঘটনায় হিরুচক্রের ১২ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করেছে। বিএসইসির হিসাবেই এসব অপরাধের বিপরীতে চক্রটি রিয়ালাইজড (শেয়ার বিক্রি হয়েছে) এবং আনরিয়ালাইজড (শেয়ার বিক্রি করা হয়নি) মিলে ২শ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে তারা। এর মধ্যে রিয়ালাইজড মুনাফা ৮০ কোটি টাকার মতো।

সাকিব

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম