Logo
Logo
×

শেষ পাতা

হাতখরচের টাকা নিয়ে ঝগড়া

মাকে হত্যা করে ফ্রিজে রেখে ডাকাতির নাটক সাজায় ছেলে

Icon

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মাকে হত্যা করে ফ্রিজে রেখে ডাকাতির নাটক সাজায় ছেলে

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় দিনে-দুপুরে গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনকে (৫০) তার নিজের ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান (১৯) হত্যা করে ডিপ ফ্রিজে রেখেছিল। হাতখরচের টাকা নিয়ে মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার পর মাকে হত্যার পরিকল্পনা করে মাদ্রাসা ছাত্র সাদ। শ্বাসরোধে হত্যার পর ডাকাতি বলে চালানোর চেষ্টা করে। আটকের পর র‌্যাব কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি স্বীকার করেছে সে। মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়ায় র‌্যাব-১২ এর ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. এহতেশামুল হক খান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, হাতখরচের টাকা নিয়ে সাদের সঙ্গে তার মা উম্মে সালমা খাতুনের ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ি থেকে ৫০০-১০০০ টাকা হারিয়ে যেত। ঘটনার দিন টাকা চেয়ে না পাওয়ায় সাদ তার মাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। জানা যায়, সাদ প্রেম করে এবং অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। এজন্য টাকা চেয়ে না পেলে সে খুবই রাগান্বিত হয়ে পড়ত।

পরিবারের ছোট ছেলে মাদ্রাসা ছাত্র সাদ তার মাকে হত্যার পর ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে লাশ বাড়ির ডিপ ফ্রিজে রাখে। নিজেকে বাঁচাতে হত্যাকাণ্ডের দায় ডাকাতের ওপর চাপানোর চেষ্টা করে। তাই কুড়াল দিয়ে ঘরের আলমারিতে আঘাত করে। র‌্যাব-১২ বগুড়া কোম্পানির সদস্যরা সোমবার মধ্য রাতে তাকে পার্শ্ববর্তী কাহালু উপজেলার পাঁচপীর আড়োবাড়ি এলাকায় তার দাদা রমজান মোল্লার বাড়ি থেকে আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদে সে মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, দুপচাঁচিয়ার দারুস সুন্নাহ কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ও উপজেলা মসজিদের খতিব আজিজুর রহমান জয়পুরপাড়া এলাকায় আজিজিয়া মঞ্জিলের তৃতীয় তলায় বসবাস করেন। বড় ছেলে ও মেয়ে ঢাকায় এবং তার সঙ্গে স্ত্রী উম্মে সালমা খাতুন (৫০) ও ছোট ছেলে একই মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাদ বিন আজিজুর থাকে। সাদ গত ১০ নভেম্বর সকালে মায়ের কাছে টাকা চেয়ে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়। সে তার মাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। নাস্তা না করেই বাড়ির বাহিরে চলে যায়। মাদ্রাসায় না গিয়ে আশপাশে অবস্থান করার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবার বাড়িতে আসে। এ সময় মা বঁটি দিয়ে কুমড়া কাটছিলেন। সাদ পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে পেছন থেকে মায়ের নাক ও মুখ চেপে ধরে। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে বঁটি দিয়ে সাদের একটি আঙুল কেটে যায়। এরপরও সে দুহাত দিয়ে নাক ও মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধে মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এ হত্যার ঘটনা ডাকাতি হিসাবে প্রচার করতে ওড়না দিয়ে মায়ের দুই হাত-পা বেঁধে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখে। ডাকাতির প্রমাণ দেখাতে কুড়াল দিয়ে আলমারিতে কয়েকটি কোপ দেয়। এরপর প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে ফিরে মা সালমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে বাবা আজিজুর রহমানকে ফোনে ডেকে আনে।

খবর পেয়ে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ এসে সালমা খাতুনের লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, দিনের বেলা সুরক্ষিত বাড়িতে পর্দানশীল গৃহবধূকে হত্যার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘাতক ছেলে সাদকে শনাক্ত করা হয়। সোমবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে পার্শ্ববর্তী কাহালু উপজেলা থেকে তাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সাদ তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার ও বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে দুপচাঁচিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়।

দুপচাঁচিয়া থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে বড় ভাই নাজমুস সাকিব থানায় সাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। সাদকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি রেকর্ডের জন্য আবেদন করা হবে।

হত্যা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম