Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আইইউটির তিন শিক্ষার্থীর দাফন

পরিবারে শোকের মাতম

পল্লীবিদ্যুতের সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত * পৃথক তদন্ত কমিটি

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পরিবারে শোকের মাতম

গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) তিন শিক্ষার্থীকে দাফন করা হয়েছে। রোববার সকালে জুবায়ের রহমান সাকিবকে নিজ বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার মুরারীপুর কবরস্থানে, মীর মোজাম্মেল হোসাইন নাঈমকে ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুরে দাদা-দাদির কবরের পাশে এবং মুবতাসিম রহমান মাহিনকে রংপুর নগরীর জুম্মাপাড়া এলাকায় দাফন করা হয়েছে। এর আগে রাতে তিনজনের লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছে। প্রত্যেকের বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে। এদিকে তিন ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষে তিন সদস্যের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজ থেকে তিন দিনের শোক ঘোষণা করছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

রাজশাহী : সাকিবের লাশ ফ্রিজার ভ্যানে রাজশাহীর মুরারীপুরের বাসায় পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের আর্তচিৎকারে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। রোববার সকালে জানাজা হয়। এতে সহপাঠী, বন্ধু, স্বজনসহ অসংখ্য মানুষ অংশ নেন।

সাকিবের বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পিকনিকে গিয়ে এভাবে সন্তানের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনায় যার বা যাদের অবহেলা ও গাফিলতি আছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। তিনি বলেন, ‘এভাবে যেন আর কোনো বাবা-মা’র বুক খালি না হয়।’

সাকিবের মা ফজিলাতুন নেসা একজন স্কুল শিক্ষিকা। বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন সাকিব। মেধাবী ও নম্র-ভদ্র হিসাবে এলাকায় বেশ সুনাম ছিল তার। ছোটবেলা থেকেই প্রকৌশলী হওয়ার ইচ্ছে ছিল তার। সেই স্বপ্ন পূরণে ভর্তি হয়েছিলেন আইইউটিতে।

ফেনী : মীর মোজাম্মেল হোসাইন নাঈমের জানাজা ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুর ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বন্ধু, বান্ধব, আত্মীয়স্বজনসহ আশপাশের বিপুলসংখ্যক লোক অংশ নেন। এরপর তাকে শেষে দাদা-দাদির কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। শনিবার রাত আড়াইটার দিকে নাঈমের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। আদরের সন্তানকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন নাঈমের বাবা-মা। নাঈম ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায় বসবাসরত সাউথ ইস্ট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মীর মোতাহার হোসেন শাহীনের ছেলে। গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুরে।

নাঈমের বাবা বলেন, আমার ছেলে অত্যন্ত নম্র-ভদ্র, বিনয়ী ও মেধাবী ছিল। ওর জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।

রংপুর : শনিবার দিনগত রাত ২টার দিকে মাহিনের লাশ রংপুর শহরের জুম্মাপাড়া এলাকার বাড়িতে পৌঁছলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন মা, বাবা, ভাইসহ আত্মীয়স্বজন। সকালে জানাজা শেষে মাহিনের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এতে মাহিনের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার লোকজন অংশ নেন। মাহিনের বাবার নাম ইমতিয়াজুর রহমান ইমন। তিনি এবি ব্যাংকের সৈয়দপুর শাখার ব্যবস্থাপক। আর মায়ের নাম নাজমুন্নাহার। তিনি গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে মাহিন বড়।

মাহিনের চাচা হাসানুর রহমান বলেন, ‘মাহিনের মতো একজন মেধাবী ছাত্রের মৃত্যুতে দেশের ক্ষতি হয়ে গেল। সন্তান লাশ হয়ে ফিরল। এই দায় কে নেবে?’

শ্রীপুর (গাজীপুর) : পিকনিক বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সাত কর্মকর্তা- কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম, সদর-কারিগরি) কমলেশ চন্দ্র বর্মণ, মাওনা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান, এজিএম তানভীর সালাউদ্দিন, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মতিউর রহমান, লাইনম্যান পারভেজ মিয়া শাখাওয়াত হোসেন ও আবুল কাশেম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আকমল হোসেন।

এছাড়া এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প) আব্দুর রহিম মল্লিককে প্রধান করে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষে তিন সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিন দিনের শোক : মর্মান্তিক এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজ সোমবার থেকে তিন দিনের শোক ঘোষণা করছে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এছাড়া এক সাপ্তাহ স্থগিত থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

উল্লেখ্য, শনিবার সকালে আইইউটি’র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৪৬০ শিক্ষার্থী বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসে শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। তারা বিআরটিসির ডাবল ডেকারের ৬টি ও তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে উদয়খালী বাজারে বিআরটিসির একটি ডাবল ডেকার বাসের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের তারের স্পর্শ হয়। এতে বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ঘটনাস্থলে একজনের মৃত্যু হয়। আহত কয়েকজনকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরও দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

শোক

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম