ফ্যাসিস্টরা দেখাতে চাইছে বাংলাদেশ মৌলবাদী রাষ্ট্র: মির্জা ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টরা নানা ঘটনা ঘটিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চক্রান্ত করছে। সীমান্তের ওপারে তারা বসে আছে। ওখান থেকে নতুন নতুন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করছে। প্রতি মুহূর্তে তারা একেকটা ঘটনা ঘটিয়ে ফলাও করে বিশ্বকে দেখাতে চায় বাংলাদেশ মৌলবাদীর দেশ হয়ে গেছে। এখানে নাকি সংখ্যালঘু ভাইদের নির্যাতন করা হচ্ছে। ভারতের পত্র-পত্রিকাগুলোতে, সোশ্যাল মিডিয়াতে এমনভাবে লেখা হচ্ছে, যেন বাংলাদেশে এখন সব নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটছে। শুক্রবার খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে ঢাকাস্থ ঠাকুরগাঁও ছাত্র কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের আনন্দে থাকার অবকাশ নেই যে, আমরা জিতে গেছি, সব হয়ে গেছে। আমাদের মাথার উপরে খড়্গ এখনো আছে। আমরা এখনো কিন্তু ক্রান্তি পার হইনি। আমরা একটি ধাপে গেছি। সে ধাপটা হলো হাসিনা পালিয়েছে। কিন্তু চারদিকে আবার অন্ধকার পাকিয়ে আসছে। আমরা যেটা অর্জন করেছি, সেটা যেন বৃথা না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বলি হয়ে অর্জিত বিজয় যাতে নষ্ট না হয় , সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা (ফ্যাসিস্ট) চেষ্টা করছে আবার অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার। এজন্য সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। কোনোরকম হঠকারিতা, বিশৃঙ্খলা রুখে দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারা সব শেষ করে দিয়ে গেছে। কোথাও কোনো কিছু অবশিষ্ট রাখেনি। একেবারে লুটপাট করে ফোকলা করে দিয়ে গেছে। এ বিষয়গুলো আমাদেরই বন্ধ করতে হবে।’ গত কয়েক দিনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আমি আবারও খুব ভীত হই, যখন দেখি ইসকনের নামে, ধর্মের নামে একজন আইনজীবী নিহত হন। এ ধরনের ঘটনা, এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাইনি। আমরা তো একটি নতুন জায়গায় আসছি, নতুন স্বপ্ন দেখছি, নতুন দিগন্ত দেখছি। সেখানে এ ধরনের ঘটনা তো আমরা দেখতে চাই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভীষণ কষ্ট পাই যখন দেখি কলেজে-কলেজে আমাদের ছেলে-ছেলেরা মারামারি করছে। যখন তোমরা এতবড় একটি বিজয় অর্জন করলে, একটি ফ্যাসিস্টকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিলে, পৃথিবীতে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করলে, সে সময়ে তোমাদের মধ্যে মারামারি রক্তারক্তি কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভূমিকার জন্য ছাত্রদের অভিবাদন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে খালি হাতে লড়াই করা অসম্ভব প্রায়। সশস্ত্র বাহিনী দরকার হয়। সেই জায়গায় তোমরা খালি হাতে সফল হয়েছ। সেজন্য আমি তোমাদের অভিবাদন জানাই।’
পরিস্থিতিতে প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি খুশি হতাম, যদি দেখতাম বৈষম্যবিরোধী লাখ লাখ ছাত্র মিছিল করে বলছে, আমরা শান্তি চাই।’ এ সময় ঠাকুরগাঁওয়ের উন্নয়নে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ছাত্রদের কাজ করার পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব। সংগঠনের সমন্বয়ক মিলন মাহমুদের সভাপতিত্বে সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শরিফ উদ্দিন আহমেদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোসেন শাহরিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমির হোসেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরফান আলী, অধ্যাপক এসএম মাহবুবুর রহমান, তেজগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যাপক সোলায়মান আলী, বিএনপির পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য জেড মূর্তজা চৌধুরী তুলা, ঠাকুরগাঁও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল, যুবদলের কামাল আনোয়ার আহম্মেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
