নাম প্রত্যাহারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন
শিল্পোদ্যোক্তা শওকত আজিজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর যেসব মামলা হয়েছে সবক্ষেত্রে থানার নিয়ন্ত্রণ ছিল না-ওসি, উত্তরা পশ্চিম থানা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের দ্বারা নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা শওকত আজিজ রাসেল এবং তার পুরো পরিবার। অথচ তার বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় করা একটি হত্যা মামলায় তাকে আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ঘটনাটি বিবাদী শওকত আজিজ রাসেলসহ সমাজের অনেককে বিস্মিত করেছে।
এদিকে এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলার আসামি তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহারের জন্য ইতোমধ্যে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর আবেদন করা এ সংক্রান্ত আবেদনপত্রে তিনি নাম প্রত্যাহারের সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বিগত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের সময় তার ওপর ঘটে যাওয়া হয়রানি-নির্যাতনের ভয়াবহ সব বর্ণনাও দেন।
শওকত আজিজ রাসেল বর্তমানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট। তার বাবা মরহুম এমএ হাসেম ছিলেন বাংলাদেশের প্রথমসারির শিল্পোদ্যোক্তাদের একজন। যিনি ২০০১ সালে বিএনপি থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্বৈরাচার সরকারের গত দেড়-দশকে শেখ হাসিনা ও তার পুলিশ বাহিনী দ্বারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও নির্যাতনের শিকার হন শওকত আজিজ রাসেলসহ পরিবারের অনেকে। ফলে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে ভালো থাকার কথা এই পরিবারের। অথচ এখন হত্যা মামলায় ‘ফাঁসানো’র চক্রান্ত হচ্ছে।
মামলা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার চেয়ে ১৫ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনে শওকত আজিজ রাসেল বলেন, গত ৮ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। সাকিব হাসান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ওই মামলায় তাকে ৪ নম্বর আসামি করে তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। বাদীর ঠিকানা হিসাবে নীলফামারী সদর উপজেলার দোনদরী গ্রাম ও বাবার নাম ইউনুস আলী উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদনে শওকত আজিজ রাসেল বলেন, শুধু বিএনপির রাজনীতি করার কারণে ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ সুগার রিফাইনারি কোম্পানি পারটেক্স সুগার মিলস লিমিটেডের কাঁচামাল আমদানির (ইম্পোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট-আইআরসি) অন্যায়ভাবে বাতিল করে দেওয়া হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলে অনেক দেন-দরবার করেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আর চালু করা যায়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া আবেদনে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন উর রশীদের (ডিবি হারুন) বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরেন শওকত আজিজ রাসেল। হারুনের দ্বারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতন ও ক্ষতির শিকার ব্যবসায়ীদের একজন দাবি করে তিনি বলেন, গত বছর ২৬ নভেম্বর গভীর রাতে গাজীপুরের আম্বার গ্রুপের আওতাধীন অন্যতম প্রতিষ্ঠান আম্বার ডেনিমে শতাধিক পুলিশ পাঠিয়ে (সাদা পোশাক এবং পুলিশের পোশাক পরিহিত) ফ্যাক্টরির ৪৫ জন প্রকৌশলীকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া ২০১৬ সালের মে মাসে হারুন তার কাছে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন।
২০১৯ সালের ১ নভেম্বর রাত আনুমানিক ১২টার দিকে ঢাকা ক্লাবের একটি অনুষ্ঠান থেকে তার গাড়িচালককে গাড়িসহ নারায়ণগঞ্জে ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরবর্তীতে মামলা করে চালককে গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে মামলায় ২নং আসামি হিসাবে ফাঁসানো হয়। একই বছর ২ নভেম্বর গভীর রাতে হারুনের নেতৃত্বে পুলিশের ৫০-৬০ জনের একটি দল বেআইনিভাবে তার গুলশানের বাসায় অভিযান চালায়। ভয়-ভীতি দেখিয়ে তার স্ত্রী ও ছেলেকে বাসা থেকে আটক করে রাতের অন্ধকারে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে যায়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর তার এবং তার পরিবারের সবাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষভাবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেশের অন্যতম রপ্তানি খাতকে গতিশীল করতে নানামুখী প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন। এর ফলে গত ৬ মাসে বস্ত্র খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৩% বেড়ে প্রায় ২০.৩০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং খাত ছাত্রছাত্রীদের কাছে যথাসময়ে বই পৌঁছানোর লক্ষ্যে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে তার আম্বার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আম্বার সুপার পেপার লিমিটেড। এর মাধ্যমে বাজারে অন্যান্য লাভজনক কাগজের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও শুধু বই মুদ্রণের কাগজ উৎপাদন করে সরকারকে সহায়তা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘হত্যা মামলায় আমার নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় হতবাক, বিস্মিত ও ব্যথিত হয়েছি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমাকে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। আমার অর্জিত সুনাম নষ্ট ও সামাজিকভাবে হেয় করতে মামলায় নাম দেওয়া হয়েছে।’ বর্তমান সরকারের জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমকে ব্যর্থ করতে চক্রান্তে লিপ্তরাই তাকে মামলায় জড়িয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আবেদনে তিনি আরও বলেন, একজন শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ী হিসাবে সব সময় সততা, ন্যায় ও নৈতিক অনুশীলনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছি। এমতাবস্থায় এ ধরনের অভিযোগ পুরোপুরি অকল্পনীয় ও অবিশ্বাস্য।
বিষয়টি নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আবেদনের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শিল্পোদ্যোক্তা শওকত আজিজ রাসেলকে এ মামলায় আসামি করার কারণ জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, ‘রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর যেসব মামলা হয়েছে সবক্ষেত্রে থানার নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশে মামলা হয়েছে। তবে রাসেল সাহেবের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হবে। তিনি যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকেন তাহলে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’
