Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মহানগর বিএনপিতে বিভক্তি

বরিশালে পালটাপালটি ইফতার আয়োজন

কমিটির দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুগ্ম আহ্বায়ক নাসরিন * একই অবস্থানে সরোয়ার ও জাহিদ

আকতার ফারুক শাহিন

আকতার ফারুক শাহিন

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশালে পালটাপালটি ইফতার আয়োজন

বরিশালে মহানগর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিল বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা নাসরিন। ওয়ার্ড পর্যায়ে চলমান ওই ইফতার বর্জনের পাশাপাশি পালটা ইফতার আয়োজন করছেন তিনি। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার এবং মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবিরও আছেন একই অবস্থানে। সবমিলিয়ে পালটাপালটি ইফতার রাজনীতিতে বিভক্ত বরিশাল বিএনপি। যার একদিকে আছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার এবং অন্যদিকে সরোয়ার-নাসরিন-মীর জাহিদ ও তাদের সমর্থকরা। বেশ কিছুদিন ধরেই মহানগর বিএনপিতে বাজছিল বিভক্তির সুর। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নানা কর্মকাণ্ড করছিলেন ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক নাসরিন। সবশেষ ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতার আয়োজন নিয়ে প্রকাশ্যে আসে বিরোধের বিষয়টি। গত সপ্তাহে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ৫টি ইফতার মাহফিল আয়োজনের কর্মসূচি দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরজ্জামান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। ৫টি জোনে ওয়ার্ডগুলোকে ভাগ করে এ ঘোষণা দেন তারা। কর্মসূচি বাস্তবায়নে ১০ মার্চ আহ্বান করা হয় মহানগরের আহ্বায়ক কমিটির সভা।

কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী এবার ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ৩০টি ওয়ার্ডে যেহেতু আলাদা করে আয়োজনের সময় ছিল না, তাই ওয়ার্ডগুলোকে ৫টি জোনে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেই। আয়োজন সফল করতে ১০ মার্চ ডাকা হয় আহ্বায়ক কমিটির সভা। সেখানেই নেওয়া হয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত।

মহানগর বিএনপির ওই সভায় যাননি যুগ্ম আহ্বায়ক নাসরিন ও তার অনুসারী সদস্যরা। এরপর নাসরিনের পক্ষ থেকে আসে ওয়ার্ড পর্যায়ের এই ইফতার বর্জনের ঘোষণা। যুগান্তরকে তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ড পর্যায়ে এই আয়োজনের ব্যাপারে আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি আহ্বায়ক কিংবা সদস্য সচিব। যে কারণে আমিসহ অনেকেই যায়নি সভায়। ৪২ সদস্যের কমিটিতে সিদ্ধান্ত নিতে হলে কমপক্ষে ২২ জন উপস্থিত থাকতে হয়। যতদূর জানি সভায় ১০/১২ জনের বেশি ছিল না। এরআগেও আমাকে বাদ দিয়ে নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। যে কারণে এখন তাদের প্রকাশ্য বিরোধিতায় নেমেছি। আহ্বায়ক কমিটির ২৬ জন আছে আমার সঙ্গে। তারা তাদের ইচ্ছেমতো ইফতার পার্টি করুক। আমিও আলাদাভাবে ইফতারের আয়োজন করছি। এই বক্তব্যের বাস্তব প্রতিফলনও ঘটিয়েছেন তিনি। মহানগর বিএনপি আয়োজিত মঙ্গল ও বুধবারের ইফতার মাহফিলে যাননি তিনি। পালটা হিসাবে মঙ্গলবার বিএম কলেজ ছাত্রদল এবং বুধবার শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করেন নাসরিন।

যদিও এরমধ্যে বিএম কলেজ ছাত্রদলের নামে ইফতার নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। ২০নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্যসচিব সাকিব মল্লিক রাতুলকে কলেজ শাখার সভাপতি ঘোষণা দিয়ে আয়োজন করা হয় ওই ইফতারের। এভাবে মিথ্যা পরিচয় দেওয়ার অপরাধে রাতুলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে মহানগর ছাত্রদল। বিএম কলেজ শাখা ছাত্রদলও নিন্দা জানিয়ে দিয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি। পুরো বিষয়টিকে অবশ্য ভুল বোঝাবুঝি বলে আখ্যা দিয়েছেন নাসরিন। সংবাদকর্মীদের ভুলের কারণে এমনটা হয়েছে দাবি তার।

ইফতার আয়োজন নিয়ে নাসরিনের করা অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ১০ তারিখের সভায় কমিটির ৪২ সদস্যের ২৭ জন উপস্থিত ছিলেন। রেজুলেশনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। ঢাকায় অবস্থানরত কয়েকজন ফোনে সভার সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত থাকার কথা জানান। এখানে কে-কি বলল তাতে কিছুই আসে যায় না। সর্বসম্মতিক্রমেই চলছে মহানগর বিএনপির কর্মকাণ্ড। ২/১ জনের কথায় সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত পালটানোর সুযোগ নেই।’

নাসরিনের পাশাপাশি সাবেক মেয়র সরোয়ার এবং মীর জাহিদ অনুসারীরাও আছেন ফারুক-জিয়ার বিরুদ্ধ অবস্থানে। যদিও এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কিছু বলেননি তারা। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিতে ঠাঁই পাননি এই দুই নেতাসহ তাদের ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা। এ নিয়ে মাঠের রাজনীতিতে সরব তারা। মহানগর কমিটির বিপরীতে পালটা কর্মসূচি পালনের নজিরও রয়েছে তাদের।

সরোয়ার ঘনিষ্ঠ মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ আকবর হোসেন বলেন, সব নেতাকর্মীকে নিয়ে আলাদা একটি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করব। তবে এখন পর্যন্ত তারিখ নির্ধারণ হয়নি। সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদ বলেন, মহানগরের কোনো আয়োজনে আমাদেরকে জানানো হয় না। এবারও ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতারের দাওয়াত পাইনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আলাদা ইফতার আয়োজন করতে হবে।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া প্রশ্নে কেউ যদি দাওয়াতের অপেক্ষায় থাকেন তাহলে বিএনপির প্রতি তার ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক! ইফতার বা দলীয় কর্মসূচির আয়োজনতো গোপনে হয় না। গণমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে সব আয়োজনের খবর জানানো হয়। এরপরও যদি কেউ বলে দাওয়াত পায়নি, তাহলে ধরে নিতে হবে, এটা কেবলই বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা। তারপরও আমরা দলের সব আয়োজনে জ্যেষ্ঠ নেতাদের ব্যক্তিগতভাবে ফোনে অথবা সরাসরি গিয়ে দাওয়াত দিই। চাইলে তার প্রমাণ আপনারা দেখতে পারেন। এখানে আমাদের কাছে ব্যক্তির চেয়ে দল অনেক বড়। আর সেভাবেই বরিশালে পরিচালিত হচ্ছে মহানগর বিএনপির রাজনীতি।

ইফতার

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম