Logo
Logo
×

শেষ পাতা

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

গভর্নর মনসুরের বিরুদ্ধে চিঠি, উদ্বিগ্ন ৪৭ ব্রিটিশ এমপি

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গভর্নর মনসুরের বিরুদ্ধে চিঠি, উদ্বিগ্ন ৪৭ ব্রিটিশ এমপি

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে ব্রিটেনের ৪৭ জন এমপির কাছে ই-মেইল পাঠিয়েছেন নিজেকে সাংবাদিক দাবি করা অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। এ প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ এমপিরা আশঙ্কা করছেন, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করতে গিয়ে তারা অপতথ্য প্রচারণার শিকার হতে পারেন। তাদের আশঙ্কা, গভর্নর আহসান মনসুরকে ‘অপদস্থ’ করার জন্য এ ‘অপতথ্য’ ছড়ানো হতে পারে। আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থের সন্ধানে তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এরই মধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একদল সদস্যের সঙ্গে এ বিষয়ে তিনি বৈঠকও করেছেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

‘এমপিস থিঙ্ক দে মে হ্যাভ বিন টার্গেটস অব ডিসইনফরমেশন ওভার বাংলাদেশ ইনকোয়ারি’ শিরোনামে সোমবার গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে আহসান এইচ মনসুর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নিযুক্ত হন।

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তার সহযোগীদের পাচার করা কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ দেশে ফেরাতে আহসান এইচ মনসুর লন্ডনে ব্রিটিশ সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সাহায্য চেয়েছেন। তার ধারণা, পাচার করা সম্পদের কিছু অংশ হয়তো যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কিনতে ব্যবহার করা হয়েছে। হাসিনার বোনের মেয়ে ও ব্রিটেনের বর্তমান লেবার সরকারের সাবেক ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে হাসিনার সহযোগীদের কাছ থেকে সম্পদ গ্রহণ এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে। টিউলিপের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ব্রিটেনের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। চলতি বছর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার পর আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেন। তবে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ব্রিটিশ এমপিরা এখন আশঙ্কা করছেন, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে ঢাকার প্রচেষ্টায় লন্ডনের সহায়তাকে প্রভাবিত করতে পারেন ভুয়া সাংবাদিকদের লেখা নিবন্ধ।

সোমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৪৭ সদস্যের অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) অন রেসপন্সিবল ট্যাক্স অ্যান্ড করাপশনের সদস্যদের সঙ্গে আহসান এইচ মনসুরের বৈঠক হওয়ার ঠিক এর আগেই গ্রুপের সবাই একটি ই-মেইল পান। সেই ই-মেইলের প্রেরক নিজেকে সাংবাদিক দাবি করে এমপিদের কাছে ‘ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট’ নামের একটি ওয়েবসাইটের লিংক পাঠিয়েছেন। আহসান মনসুরের মেয়ের কথিত ‘ধনসম্পদ’ প্রদর্শন করার পরও কেন তদন্ত করা হচ্ছে না-তা নিয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুটি নিবন্ধ পাঠিয়েছেন ওই কথিত সাংবাদিক।

নিবন্ধ দুটির কথিত লেখকদের ‘সাংবাদিক’ ছাড়া অন্য কোনো পরিচিতি ই-মেইলে উল্লেখ নেই। গার্ডিয়ান যাচাই করে দেখেছে, এই দুই কথিত সাংবাদিক তাদের প্রোফাইলে যে ছবি ব্যবহার করেছেন, তা আসলে অনলাইন থেকে নেওয়া অন্য ব্যক্তির ছবি। আহসান এইচ মনসুর এবং কমিটির সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই ই-মেইলগুলো একটি সুসংগঠিত অপতথ্য প্রচারণারই অংশ।

এর আগে ওয়াশিংটনে অবস্থান এবং কাজ করা সাবেক আইএমএফ কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্তাধীন ব্যক্তিরা ‘আমার খ্যাতি বিনষ্ট করতে এবং বিভিন্নভাবে আমাকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর’ চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, তার মেয়ে মার্কিন নাগরিক এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।

এপিপিজি-এর সদস্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুপা হক ‘পালাটাইন কমিউনিকেশনস’ নামের একটি ব্রিটিশ জনসংযোগ সংস্থা থেকে আরেকটি ই-মেইল পেয়েছেন। সেখানেও ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্টের লিংক ছিল। ওই ই-মেইলে বলা হয়েছে, আহসান এইচ মনসুর যদি টিউলিপ সিদ্দিকের ‘সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ’ করতে চান, তবে তার এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধেও তদন্ত হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, তিনি টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে কখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তবে, তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

রুপা হক বলেছেন, এমন ই-মেইল পাওয়া ‘খুবই অস্বাভাবিক’ এবং তিনি এই বিষয়টিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় তাকে লক্ষ্য করে করা বিক্ষোভের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, এই দুটি কাজই ‘পার্লামেন্ট এবং এমপিদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটাতে ভয় দেখানো এবং হস্তক্ষেপ করার জন্য পরিকল্পনা করে করা হয়েছে।’

জানা গেছে, এপিপিজির সদস্যরা ই-মেইলগুলো পার্লামেন্টারি সাইবার নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সেই সঙ্গে সংসদীয় পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে পাঠিয়েছেন। তারা এই অপতথ্যের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন।

এপিপিজির সদস্য ও এমপি ফিল ব্রিকেল বলেছেন, ‘যদি এমন হয় যে, এই যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুতর দুর্নীতি কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা, তাহলে আমি মনে করি, আমাদের খুব উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি সংশ্লিষ্ট পার্লামেন্টারি কর্তৃপক্ষকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি-এর পেছনে কে অর্থায়ন করেছে এবং কেন, তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, যাতে আমরা কীভাবে নিজেদের সর্বোত্তমভাবে রক্ষা করতে পারি।’

পালাটাইন কমিউনিকেশনসের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমাদের ক্লায়েন্টের নির্দেশাবলি গোপনীয়। ই-মেইলের বিষয়ে আমরা নিজস্ব উদ্যোগে কাজ করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই নিবন্ধের লেখক কারা, সে সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানা নেই এবং এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্কও নেই। তবে আমরা কখনই দাবি করিনি যে এটি একেবারে সত্য। অনেক গণমাধ্যমের অসংখ্য নিবন্ধের মতো, এটি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ উত্থাপন করে, যা আমরা মনে করি এমপিদের বিবেচনাযোগ্য।’

ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্টের এক মুখপাত্র বলেছেন, নিবন্ধগুলোর প্রকৃত লেখক ‘পরিচয় গোপন রাখতে চেয়েছেন’ এবং তাদের বিশ্বাস এর বিষয়বস্তু ‘যথেষ্ট নির্ভুল’।

মুনসুর

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম