Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: চট্টগ্রাম-১৫

বিএনপির মহিউদ্দিন-মুজিব-নাজমুল জামায়াত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী

Icon

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপির মহিউদ্দিন-মুজিব-নাজমুল জামায়াত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী

চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) নির্বাচনি আসনটি লোহাগাড়ার ৯টি ইউনিয়ন, সাতকানিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এক সময় আসনটি জামায়াতে ইসলামীর ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনে কার্যত বিএনপি-জামায়াত এলাকা ছাড়া ছিল। তবে ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর উলটো চিত্র সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন না হলেও সময়ের বিবর্তনে এখন আওয়ামী লীগ এলাকা ছাড়া। সাবেক দুই এমপি থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পর্যন্ত কেউই এলাকায় নেই।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতারা এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এসব দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি আয়োজনে সক্রিয় রয়েছেন। পুরো রমজানে ইফতারসামগ্রী, পোশাক সামগ্রীসহ ঈদ উপহার বিতরণ করা হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। এই আসনটি থেকে নির্বাচন করে বিভিন্ন মেয়াদে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে আসছেন। পাশাপাশি বিএনপি থেকেও এই আসনে একাধিকবার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা আসনটিতে কখনো বিজয়ী হতে পারেনি। তাই আগামীতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে এই আসনটি বিএনপি অথবা জামায়াতের কব্জায় যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীকে দলের প্রার্থী হিসাবে চূড়ান্ত করেছে। তিনি জামায়াতের একক ও শক্তিশালী প্রার্থী। বিএনপি থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব চেয়ারম্যান, সাবেক প্রচার সম্পাদক ও লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক লায়ন নাজমুল মোস্তফা আমিন মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে মনোনয়ন দিলেও জোটের স্বার্থে জামায়াতকে ছেড়ে দেয় আসনটি।

১৯৭৩ সালের পর ২০১৪ সালে প্রথমবার এ আসনে জয় পায় আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে এই আসনটিই আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের ছিল সব সময়। বিশেষ করে নব্বইয়ের পটপরিবর্তনের পর যত জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, বেশির ভাগ সময়েই এ আসনে জয়লাভ করেছে জামায়াত। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম-১৫ আসনে তৎকালীন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুকে হারিয়ে জয়লাভ করেন জামায়াতের শাহজাহান চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরীকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নেন বিএনপির কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম। ২০০১ সালে কর্নেল অলি ও শাহজাহান চৌধুরী দুজনই চারদলীয় জোটের মনোনয়ন চান। শেষ পর্যন্ত দুজনই ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। অলি ও আওয়ামী লীগের জাফর আহমদকে হারিয়ে শেষ হাসি হাসেন শাহজাহান চৌধুরী। ২০০৮ সালে যখন সারা দেশে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার ও জোয়ার সেই নির্বাচনে অলিকে হারিয়ে জয়লাভ করেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির আ ন ম সামশুল ইসলাম। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনেও বিজয়ী হন নদভী। ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারির সর্বশেষ ‘আমি’ আর ‘ডামি’ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব সিআইপি নির্বাচিত হন।

জামায়াতের একক প্রার্থী ও নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার মানুষের জন্য কাজ করছি। একটি সুন্দর শান্তিপূর্ণ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া গড়তে বদ্ধপরিকর। সবাইকে নিয়ে একটি মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা উপহার দিতে চাই। সাতকানিয়াকে প্রতিহিংসামুক্ত একটি জনপদ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনটি মূলত বিএনপির দুর্গ ছিল। কিন্তু জোটের রাজনীতির কারণে একাধিকবার বিএনপি এই আসনটিতে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় কোনো প্রার্থী দেয়নি। সে কারণে এখান থেকে জামায়াত প্রার্থী একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে দেখা গেছে, সাতকানিয়াকে বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসের জনপদ হিসাবে গড়ে তুলেছে জামায়াত। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এখনো কোনো দল ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসের ধারাবাহিকতা যেন রক্ষা করছে জামায়াত। সাম্প্রতিক সময়ে যে ডাবল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে সেটিও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে। নিহত দুজন জামায়াত কর্মী হিসাবে পরিচিত। সাধারণ মানুষ ও ভোটাররা সাতকানিয়াকে শান্তির জনপদ হিসাবে দেখতে চান। তাই বিএনপিকেই তারা বেছে নেবেন এবং জোট না হলে একক নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীই জয়ী হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আশা করি চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আমি মনোনয়ন পাব। দলের দুঃসময়ে আমিই মাঠে ছিলাম। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব। স্বৈরাচার আমলে একাধিক মামলার আসামি হয়েছি। তারপরও মাঠ ছেড়ে যাইনি। লোহাগাড়া-সাতকানিয়াকে একটি আধুনিক, নিরাপদ ও মানবিক উপশহর হিসাবে গড়ে তুলতে চাই।

লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক লায়ন নাজমুল মোস্তফা আমিন বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দলকে সুসংগঠিত রাখার চেষ্টা করেছি। তৃণমূল নেতাকর্মীরা আমাকেই প্রার্থী হিসাবে চান। প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটলে আমি মনোনয়ন পাব।

শাহজাহান চৌধুরী লোহাগাড়া-সাতকানিয়া চট্টগ্রাম-১৫

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম