Logo
Logo
×

শেষ পাতা

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন

জাতীয় সংসদ ৬শ আসনে উন্নীত করার সুপারিশ

২৪ সপ্তাহ পূর্ণ বেতনে প্রসূতি, প্রসব ও দত্তকজনিত ছুটি * শ্রম আইনে গৃহকর্মী ও যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসাবে স্বীকৃতি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় সংসদ ৬শ আসনে উন্নীত করার সুপারিশ

প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় একটি সাধারণ আসন এবং নারীদের জন্য একটি সংরক্ষিত আসন রেখে জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৬০০তে উন্নীত করার সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। এছাড়াও, নারীদের অধিকার রক্ষায় একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নারীবিষয়ক কমিশন প্রতিষ্ঠারও সুপারিশ করা হয়েছে।

শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শিরীন পারভিন হকের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্য ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো মাহীন সুলতান, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফৌজিয়া করিম ফিরোজ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হালিদা হানুম আক্তার, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা ফেরদৌসী সুলতানা এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিশিতা জামান নিহা উপস্থিত ছিলেন। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন জানায়, প্রতিবেদনে তারা ৪৩৩টি সুপারিশ করেছেন। এর মধ্যে ১৫টি বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণের পর তিনি এই নির্দেশনা দেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যে সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সেটা যেন আমাদের মাধ্যমে হয়ে যায়। আমরা যেন এই কাজের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি। পৃথিবীর মেয়েরা এটার দিকে তাকিয়ে আছে। তারা এটা নিয়ে পর্যালোচনা করবে। অনুপ্রাণিত হবে। অন্য দেশের নারীরাও এটা নিয়ে আগ্রহী।

তিনি বলেন, ‘এটা শুধু নারীদের বিষয় নয় সার্বিক বিষয়। এই প্রতিবেদন ছাপিয়ে বিলি করা হবে। এটা পাঠ্যবইয়ের মতো বই আকারে ছাপা হবে। দলিল হিসাবে অফিসে রেখে দিলে হবে না, মানুষের কাছে উন্মুক্ত করে দিতে হবে।’ নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের এই প্রস্তাবগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান ড. ইউনূস। সংস্কার কমিশনের সুপারিশে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইনের বিভ্রান্তি এড়িয়ে আইন শক্তিশালী করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। জনপ্রশাসনে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য শূন্যপদ পূরণে যোগ্য নারী প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখা ও স্তরে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতের পাশাপাশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করারও। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি সব খাতে ছয় মাস বা ২৪ সপ্তাহ পূর্ণ বেতনে প্রসূতি, প্রসব ও দত্তকজনিত ছুটি নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। শ্রম আইনে গৃহকর্মী ও যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসাবে স্বীকৃতি প্রদানের সুপারিশ। ৫১ শতাংশ নারীর ১৮ বছরের আগে বিয়ে হচ্ছে জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে মেয়েদের বিয়ের বয়স সর্বনিম্ন ১৮ নিশ্চিতের সুপারিশ রয়েছে। অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন নিয়ন্ত্রণে ২০২৩ সালের উচ্চ আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

কমিশন তাদের প্রতিবেদনে নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে বলেছে। সহিংসতামুক্ত সমাজ গঠনে নারী ও মেয়ে শিশুর সুরক্ষা, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে জনপরিসরে নারীর অংশগ্রহণ এবং জনপ্রশাসনে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ানোর কথাও এসেছে প্রতিবেদনে। এছাড়া শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন, সব বয়সি নারীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ, অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও সম্পদের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা, শ্রম ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পদক্ষেপ এবং নারী শ্রমিকদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

দারিদ্র্য কমাতে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ ও ইতিবাচক চিত্রায়ণ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নারীর অংশগ্রহণও কমিশনের সুপারিশের অন্তর্ভুক্ত। এসব সুপারিশ প্রস্তুতের সময় সংবিধান ও আইন, বিদ্যমান নীতি, প্রতিষ্ঠান এবং কর্মসূচিগুলোকে বিবেচনায় নিয়েছে কমিশন। সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, সুপারিশগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কিছু এ সরকারই করে যেতে পারবে, কিছু পরের নির্বাচিত সরকার করতে পারবে এবং নারী আন্দোলনের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে। সংস্কার কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাবে জোর দিয়েছে।

নারী সুপারিশ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম