সাংগ্রাই উৎসবে আরাকান আর্মির উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন
বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বান্দরবানের থানচিতে মিয়ানমারের সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) উৎসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় থানচি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য খামলাই ম্রোর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী এ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ১৬ এপ্রিল থানচি উপজেলার রেমাক্রী বাজারে মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই উৎসবের আয়োজন করা হয়। উৎসবে আরাকান আর্মির সদস্যরা বাহিনীর পোশাক পরে অংশ নেয়।অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন থানচি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খামলাই ম্রো ও গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর পলাতক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈ থুই ও অংগ্রুসহ আরও কয়েকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, এটি কোনো ছোটখাটো বিষয় বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে পুনঃগঠিত বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য খামলাই ম্রো। এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
খামলাই ম্রো ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত থানচি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। ওই সময়ে জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন। এছাড়াও সম্প্রতি বাতিল হওয়া জেলা মৎস্যজীবী দলের সহসভাপতির পদে ছিলেন। অপর দিকে সদ্য ঘোষিত জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সম্প্রসারিত ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এ বিষয়ে খামলাই ম্রো বলেন, বিএনপির বর্তমান কোনো কমিটিতে আমি নেই। সাবেক কয়েকটি কমিটিতে ছিলাম।
তিনি বলেন, মূলত রেমাক্রী বাজারে সাংগ্রাই উৎসব আয়োজন করা হয়। আমি আমন্ত্রিত অতিথি ছিলাম, ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর দেখলাম উৎসবে আরাকান আর্মি ও আওয়ামী লীগের অভিযুক্ত নেতাকর্মীরাও রয়েছে। কিন্তু সবকিছু দেখেও ফিরে আসার সুযোগ ছিল না সামাজিক উৎসব হওয়ায়।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ওসমান গনি ও মুজিবুর রশীদ বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। কিন্তু আহ্বায়কের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দলীয়ভাবে কোনো কথা হয়নি। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা জানা নেই।
অপরদিকে দেশের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মির সাংগ্রাই উৎসবে অংশ নেওয়ার ছবি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর টনক নড়ে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে থানচিতে ২২টি ইঞ্জিন বোটে করে সাঙ্গু নদীপথে আরাকান আর্মি এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম বলেন, পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তবে বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএম ইমরুল হাসান বলেন, সাংগ্রাই উৎসবে আরাকান আর্মির কোনো সশস্ত্র সদস্য ছিল না। যারা ছিলেন তারা সহযোগী বা সমর্থক। তারা স্থানীয়দের সঙ্গে উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে কোনো আরাকান আর্মির সদস্য নেই বলে জানিয়েছেন বিজিবির ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা।
