সাগর-রুনী হত্যা মামলা
তদন্তে আরও ছয় মাস সময় পেল টাস্কফোর্স
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
তেরো বছর ধরে ঝুলে থাকা সাগর-রুনী হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করতে টাস্কফোর্সকে আরও ছয় মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি সিকদার মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এদিকে এ মামলার নথি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আরশাদুর রউফ তদন্ত শেষ করতে নয় মাস সময় চান। তিনি আদালতে বলেন, ৫ আগস্ট ডিবি অফিসে আগুন দেওয়া হয়। তখন অনেক রেকর্ড পুড়ে গেছে। তবে তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে। আরও সময় দরকার।
এদিকে নথি পোড়ার কথা গণমাধ্যমে এলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এ প্রেক্ষাপটে টাস্কফোর্সের অধীনে মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআই ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) পৃথক বিবৃতি দেয়। সেখানে বলা হয়, ‘কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, তা সঠিক নয়। আগুনে পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। অ্যাডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরোনো নথি ও ডকুমেন্টস খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট সাগর-রুনী হত্যা মামলা তদন্তে বিভিন্ন এজেন্সির অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তদন্ত শেষে ছয় মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। আদালতের আদেশের পর উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে তদন্ত শেষ করে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হাইকোর্টের দেওয়া ছয় মাস সময় ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় তদন্ত চলমান ও অগ্রগতি আছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময়ের আরজি জানায়। শুনানি নিয়ে আদালত ছয় মাস সময় মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে ২২ অক্টোবর আদেশের জন্য পরবর্তী দিন রেখেছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব। বাদীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
আদেশের পর নথি পোড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আদালতে পুড়ানো বলতে আমি বুঝিয়েছি-নট পুড়ানো, এটা পুরাতন। পুরোনো মামলা, এটা তদন্ত করতে একটু সময় লাগবে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন, অনেকেই হয়তো চাকরিতে নেই। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে। সেজন্য একটু সময়ের দরকার ছিল। এটা যেহেতু চাঞ্চল্যকর মামলা, তাই আইজিপি, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও পিবিআইসহ অন্যরা গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছেন। আমরা সময় চেয়েছিলাম, আদালত আমাদের সময় দিয়েছেন।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘বারবার সময় নেওয়া হলে জনমনে খারাপ ধারণার জন্ম দেয়। আমরা বলেছিলাম তিন মাস সময় দেওয়া হোক। শুনানি শেষে হাইকোর্ট ছয় মাস সময় দেন।’
এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টের দেওয়া এক আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। তদন্তের জন্য মামলাটি র্যাবের কাছে পাঠানোর ওই আদেশ সংশোধন চেয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবের পক্ষে গত সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। এর শুনানি নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিষয়টি আদেশের জন্য ওঠে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনী। সাগর সেসময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে আর রুনী এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। সাগর-রুনী হত্যার ঘটনায় রুনীর ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।
প্রথমে মামলাটি তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চারদিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। তখন থেকে মামলাটির তদন্ত করছিল র্যাব।
