Logo
Logo
×

শেষ পাতা

পাবনায় ৬ মাস আটকে রেখে বানানো হয় প্রতিবন্ধী

নখ উপড়ে, ছ্যাঁকা দিয়ে পঙ্গু করে ভিক্ষাবৃত্তি

মূল হোতার ব্যাংকে ভিক্ষাবৃত্তির ১০ লাখ টাকা

Icon

আখতারুজ্জামান আখতার, পাবনা

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নখ উপড়ে, ছ্যাঁকা দিয়ে পঙ্গু করে ভিক্ষাবৃত্তি

হাতের বেশির ভাগ আঙুলের নখ উপড়ানো। সারা গায়ে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকার ঘা। ঠিকমতো খেতে না দেওয়ায় শরীরের সবগুলো হাড় দেখা যাচ্ছে। দেখে মনে হবে সুদানের দুর্ভিক্ষপীড়িত কোনো শিশু এটি। কিন্তু না, মাত্র ৬ বছরের শিশু সোয়াইব হোসেনকে অপহরণের পর দীর্ঘ ৬ মাস ধরে এভাবেই নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে পঙ্গু বানিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করাত রফিকুল ইসলাম বিপ্লব (৩০) নামের এক নরপশু। পুলিশের দীর্ঘ অভিযানের পর গত ১৮ এপ্রিল খুলনার রূপসা ফেরিঘাট এলাকা থেকে ভিক্ষা করানো অবস্থায় হতভাগ্য শিশু সোয়াইবকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকেও আটক করা হয়। এদিকে প্রতারক বিপ্লবের ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব টাকা ভিক্ষার মাধ্যমেই জমানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, শিশু সোয়াইবের অপহরণ এবং পরে তার সঙ্গে যে নির্মমতা করা হয় তা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাবনা সদর উপজেলার চকছাতিয়ানী এলাকার আমিনুল ইসলাম ও সোহানা জাহানের একমাত্র শিশু সন্তান সোয়াইব। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় মায়ের কাছেই থাকত শিশুটি। এরই মধ্যে একই উপজেলার শানিরদিয়ার গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম বিপ্লবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় সোয়াইবের মা সোহানার। পরিচয়ের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে গত বছরের ২ অক্টোবর শিশু সোয়াইবসহ সোহানা সদর উপজেলার আরিফপুরে রফিকুল ইসলাম বিপ্লবের সঙ্গে দেখা করে। এ সময় কৌশলে প্রতারক বিপ্লব শিশুটিকে বিস্কুট কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও বিপ্লব ও ছেলের খোঁজ না পেয়ে সোহানা বাড়িতে ফিরে আসেন এবং ওই বছরের ৭ অক্টোবর পাবনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির পর কেটে যায় ৬টি বছর। পুলিশ ও সোহানার স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে শিশুটির খোঁজ করতে থাকেন। এদিকে আত্মগোপনে থাকা অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশু সোয়াইবের মাকে মাঝে মধ্যে ফোন করে অপহরণ করেছে এবং সোয়াইব ভালো আছে বলে জানায়। এভাবে সে প্রতিনিয়ত এক জেলা থেকে আরেক জেলায় অবস্থান করতে থাকে। তার মোবাইল ফোনও বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকত। সবশেষে ফোন নম্বর ট্র্যাকিং করে তার লোকেশন শনাক্তের পর অপহরণের ছয় মাস পর গত ১৮ এপ্রিল খুলনার রূপসা ফেরিঘাট এলাকা থেকে ভিক্ষা করানো অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার এবং অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকে আটক করে পুলিশ। সোমবার পাবনা পুলিশ শিশুটিসহ প্রতারক বিপ্লবকে পাবনায় নিয়ে আসে। গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে মঙ্গলবার দুপুরে কথা হয় শিশু সোয়াইবের মা এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে। এ সময় শিশুটির মা সোহানা জাহান জানান, অপহরণের পর তার ছেলেকে বিপ্লব নির্মম নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করে তাকে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করাত। শিশু সোয়াইবের হাতে, পিঠে এবং বুকে জ্বলন্ত সিগারেট ও কয়েলের ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। হাতের নখ উপড়ে ফেলে, না খাইয়ে রেখে বানানো হয় প্রায় প্রতিবন্ধী। প্রতিদিন রাতে এভাবেই তার ওপর নির্যাতন চালাত এবং দিনে তাকে দিয়ে করানো হতো ভিক্ষা।

গুরুতর অসুস্থ শিশু সোয়াইব জানায়, রাতে তাকে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখা হতো এবং প্রায়ই না খাইয়ে রাখা হতো। তার শরীরে দাঁতের কামড় বসিয়ে চামড়া তুলে ফেলত। সারা শরীরে দেওয়া হতো সিগারেট ও কয়েলের আগুনের ছ্যাঁকা। শিশু সোয়াইব পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের ২৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে তার বাম হাতের একটি আঙুল অপারেশন করে কেটে বাদ দেওয়া হয়। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান ডা. মাসুদুর রহমান প্রিন্স বলেন, শিশুটির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। পচন ধরায় তার হাতের একটা আঙুল কেটে বাদ দিতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেলে আশা করছি সে সুস্থ হবে। তবে সময় লাগবে।

পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম জানান, অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে তাকে ভিক্ষা করাতেন অভিযুক্ত বিপ্লব। বিপ্লবের হিসাবে ১০ লাখ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব টাকা ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে জমা করেছে। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে অভিযুক্ত বিপ্লবকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পাবনা ভিক্ষাবৃত্তি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম