Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ইসরাইলি সেনাদের মতোই জম্মু-কাশ্মীরের লাইব্রেরিগুলোতেও হানা দেয় ভারতীয় পুলিশ

‘ফিলিস্তিন আতঙ্ক’ কাশ্মীরেও

আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পর থেকেই বইগুলো জব্দের ঘটনা ঘটছে

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘ফিলিস্তিন আতঙ্ক’ কাশ্মীরেও

ছবি: সংগৃহীত

দখলকৃত পশ্চিম জেরুজালমের আল-আকসা মসজিদের কাছে ইমাদ মুনার লাইব্রেরি। শহরের সালাউদ্দিন স্ট্রিটের লাইব্রেরিটি জেরুজালেমে খুবই প্রসিদ্ধ। প্রায় ৪০ বছর ধরে স্থানীয়দের জ্ঞান-তপস্যার বাতিঘর। পশ্চিম তীর, রামাল্লাসহ ফিলিস্তিনের প্রায় সবারই মুখে মুখে। ২০১১ সালে ফিলিস্তিনের শ্রেষ্ঠ বইয়ের দোকানের স্বীকৃতিও এসেছে ঝুলিতে। ইসলামি কিতাব, ফিলিস্তিন জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস, রাজনীতি-রাষ্ট্রনীতির বই-পুস্তকে ভরা লাইব্রেরিটিতে মার্চে হঠাৎ হানা দেয় ইসরাইলি বাহিনী। আটক করে ইমাদকে। বাজেয়াপ্ত করে তার দোকানের বই। ইসরাইলের সেনাদের দাবি-উসকানিমূলক বই বিক্রি করছিলেন ইমাদ। শুধু জেরুজালেম নয়-পশ্চিম তীর, রামাল্লা, নাবলুস, জেনিনসহ এই অঞ্চলের সব বইয়ের দোকানেই সার বছরই এমন অভিযান চালায় ইসরাইল। দখলদার ইসরাইল রাষ্ট্রেই যে শুধু এমন ঘটে তা নয়। ফিলিস্তিন জনপদের মতোই এই একই আতঙ্ক কাশ্মীরেও। ভূস্বর্গ হিসাবে পরিচিত ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেও হরহামেশাই দেখা যায় এই ‘ইসরাইলি চিত্র’। ইসরাইলি সেনাদের মতো কাশ্মীরের লাইব্রেরিগুলোতেও অভিযান চালিয়ে ইসলামি লেখকদের বই বাজেয়াপ্ত করছে ভারতীয় পুলিশ। পাশাপাশি ঘটছে আটকসহ নানা রকম দমন-নিপীড়নের ঘটনা। দু-একটা ঘটনা খবরে এলেও বেশিরভাগই চাপা পড়ে যায়। মিডল ইস্ট আই।

চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি-সন্ধ্যায় হঠাৎ কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের বাণিজ্যিক এলাকা লালচকের চারপাশের প্রায় আধ-ডজন দোকানে অভিযান চালায় পুলিশ। তাদের অভিযানের মূল টার্গেট ছিল বইয়ের দোকানগুলো। এরপর বেছে বেছে আটক করে দোকান মালিকদের। একজন বই বিক্রেতা মিডলইস্ট আইকে বলেন, ‘পুলিশ, ইউনিফর্ম ও বেসামরিক উভয় পোশাকেই অভিযান চালায়। একাধিক বইয়ের দোকানে গিয়ে তারা সুপরিচিত ইসলামি পণ্ডিত সৈয়দ আবুল আ’লা মওদুদীর লেখা বই জব্দ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দিন আগে তারা আবারও মওদুদীর বই অনুসন্ধান করেছিলেন এবং কিছু তাদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারা হঠাৎ এসেছিল এবং চুপচাপ চলে গেছে। আমি বাজেয়াপ্ত হওয়া বইগুলোর সঠিক শিরোনাম সম্পর্কে নিশ্চিত নই তবে আমি এটা নিশ্চিত করতে পারি যে জব্দ করা বইগুলো জামায়াতে ইসলামী [জেআই] এবং এর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর। সবশেষে তিনি বলেন, ‘অভিযানের ফলে বই বিক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।’ তবে এ বিষয়ে পুলিশ তাদের এক্স পোস্টে বলেছে, ‘একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের মতাদর্শ প্রচার করায় বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শ্রীনগর পুলিশ একটি অনুসন্ধান অভিযান পরিচালনা করে। সেই অভিযানেই ৬৬৮টি বই বাজেয়াপ্ত করা হয়।’ এ ঘটনায় ভারত সরকার জামাত-ই-ইসলাম কাশ্মীরকে সন্ত্রাসবাদ প্রচার, বিচ্ছিন্নতাবাদকে উৎসাহিত করা ও ভারতবিরোধী প্রচারণার জন্য অভিযুক্ত করেছে। যদিও জেআই কাশ্মীর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিবেশকে পরিবর্তনের একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে দেখছে। কেননা মোদি সরকার যখন থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা কেড়ে নেওয়া অনুচ্ছেদ ৩৭০-এ এবং ৩৫-এ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করেছে-তখন থেকেই বইগুলো জব্দের ঘটনা ঘটছে। মুনতাজির শাহ নামে একজন বই বিক্রেতা বলেন, ‘জেআই এবং এর প্রতিষ্ঠাতার সাহিত্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। কারণ তাদের বইগুলো ইসলাম সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেয় এবং ভারতের মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসাবে কাজ করে।’ এছাড়াও চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি শ্রীনগরের রাজবাগ পাড়ায় বিনামূল্যে কুরআনের কপি এবং হিজাব বিতরণের সময় তিন নারীকে আটক করে স্থানীয় পুলিশ। যদিও তাদের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তাদের আটকের পেছনের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। নারীদের আটক করা ও এ ধরনের অভিযান জম্মু-কাশ্মীরে ধর্মীয় মতপ্রকাশ এবং স্বাধীনতার সীমা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। ভারতপন্থি এবং স্বাধীনতাপন্থি উভয় রাজনৈতিক নেতারা ঘটনার নিন্দা করেছেন। এ বিষয়ে কাশ্মীরের স্বাধীনতাপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হুরিয়াত কনফারেন্সের চেয়ারপারসন মিরওয়াইজ উমর ফারুক বলেন, ‘এটা কেমন গণতন্ত্র যেখানে ইসলামি সাহিত্য নিষিদ্ধ করা হচ্ছে? সরকার কি সিদ্ধান্ত নেবে-একজন ব্যক্তির কি ধরনের সাহিত্য পড়া উচিত?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাহিত্যের ওপর নিষেধাজ্ঞার নিন্দা করি। আমি ভেবে পাচ্ছি না কেন কাশ্মীরে ইসলামি সাহিত্য নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, আপনি যতই এটিকে দমন বা সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করবেন, তত বেশি মানুষ এটি পড়তে বা অনুসরণ করতে শুরু করবে। এই নিষেধাজ্ঞা কারও উপকারে আসবে না, কারণ আজকাল সব ধরনের সাহিত্য অনলাইনে পাওয়া যায়।’


কাশ্মীর ফিলিস্তিন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম