বাংলাদেশ-কোরিয়া ফ্রেন্ডশিপ সম্মেলন
কিডনি প্রতিস্থাপনে বড় বাধা দাতা সংকট
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ নানা ধরনের কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। এসব রোগীর ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হলেও প্রায় ৭০ শতাংশ তা নিতে পারছেন না। এই সংকট নিরসনে এক হাজার ডায়ালাইসিস যন্ত্র কিনতে যাচ্ছে সরকার। কিডনি প্রতিস্থাপনে বড় বাধা আইনি জটিলতা ও দাতা সংকট। এজন্য আইন সংশোধনের কাজ চলছে। কিডনির চিকিৎসা সহজকরণ ও ব্যয় কমাতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান সংশ্লিষ্টদের। শনিবার রাজধানীর মিরপুর-২ এ বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে এক সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। তিন দিনের ‘বাংলাদেশ-কোরিয়া ফ্রেন্ডশিপ সম্মেলন-২০২৫’ আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত চলবে।
‘কিডনি প্রতিস্থাপন’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, কিডনি রোগীর চিকিৎসায় এক হাজার ডায়ালাইসিস মেশিন ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে যে হারে কিডনি রোগী বাড়ছে, তাতে হাজার যন্ত্র স্থাপনের পরেও সব রোগীর ডায়ালাইসিস দেওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। এজন্য সরকারি সংস্থার উদ্যোগে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে কিডনি রোগের সচেতনতা অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এছাড়া দেশে কতজন কিডনি রোগী আছে জানতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কিডনি রোগী নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিকে (নিকডু)। তিনি আরও বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপনে আইনি জটিলতা রয়েছে। এটি সংশোধন করা হচ্ছে, আপনারা চাইলে এ বিষয়ে মতামত দিতে পারেন। বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য দেশে অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। সেটি গড়ে উঠলে শুধু কিডনি নয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন সহজ হবে। দেশে কিডনি ডায়ালাইসিসের ২৫০ সেন্টার রয়েছে, এর ৮০ শতাংশ মেশিন ঢাকায়। সরকারি যে ডায়ালাইসিস মেশিন কেনা হচ্ছে, তা যদি ঢাকার বাইরে স্থাপন করা যায়, তাহলে সারাদেশে ডায়ালাইসিস সেবা সহজ হবে। কিডনি চিকিৎসায় দক্ষ জনবলেরও অভাব আছে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. রফিকুল আলম বলেন, সারা বিশ্বেই কিডনি প্রতিস্থাপনে ডোনার সংকট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ডোনার সংকট মোকাবিলা করতে বলছে। এজন্য প্রদত্ত আইনে সংশোধন আনতে হবে। আবেগপ্রবণ হয়ে অনেকে কিডনি দিতে চান, কিন্তু আমাদের আইনে বাধা থাকার কারণে তা সম্ভব হয় না। এজন্য নিজেদের নীতিমালা তৈরি করা জরুরি। তিনি বলেন, এশিয়ার মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপনে অর্থ সংকট বড় সমস্যা, এজন্য আমাদের জাকাত ফান্ডের মতো আরও কিছু ফান্ড তৈরি করতে হবে। দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের বার্ষিক চাহিদা আনুমানিক পাঁচ হাজার। কিন্তু গড়ে বছরে মাত্র ১২০ জন ব্যক্তি তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনির ব্যবস্থা করতে পারেন। এখন ‘ব্রেন ডেড’ ব্যক্তিদের কাছ থেকে কিডনি নিয়েও প্রতিস্থাপন করতে পারলে সংকট কিছুটা কমে যাবে। আমাদের প্রতিবেশী ভারত, শ্রীলঙ্কায় এমন প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে।
