Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: কিশোরগঞ্জ-০৬

বিএনপির শরীফুলের সামনে জামায়াতের কবির

Icon

কিশোরগঞ্জ ব্যুরো

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপির শরীফুলের সামনে জামায়াতের কবির

ছবি: সংগৃহীত

নৌ-বন্দর ও রেলওয়ের জংশনের পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ-০৬ (ভৈরব- কুলিয়ারচর) আসনের রয়েছে ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক অনেক গুরুত্ব। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়েও কৌশলগত কারণে এ আসনের ভৈরব অঞ্চল ছিল ‘কি পয়েন্ট’। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এ আসন থেকে চার নির্বাচিত হয়েছেন। তবে, একাধিকবার ভাগ বসিয়েছেন বিএনপি ও অন্য দলের যোগ্য প্রার্থীরাও।

বিগত পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথ-রেলপথ অবরোধসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে এ আসনের বাসিন্দাদের রয়েছে রক্তলেখা ইতিহাস। এ আসনের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে অসংখ্য মামলা-হামলা, অবর্ণনীয় নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করে এবং শত-শত নেতাকর্মীকে বছরের পর বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে। স্বৈরাচারী সরকারের আইনশৃংখলা বাহিনীর গুলিতে শত-শত নেতাকর্মী আহত হওয়ার পাশাপাশি প্রাণ দিতে হয়েছে ৩ বিএনপি নেতা কর্মীকে। একই সঙ্গে এ-সব হত্যাকাণ্ডে সাজানো মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে এবং পুলিশ রিমাণ্ডে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এ আসনের বরেণ্য রাজনীতিক কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল আলম।

ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে কিশোরগঞ্জ -০৬ আসনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামি সর্বপ্রথম নির্বিঘ্ন ও বাঁধাহীন পরিবেশে দলীয় কর্মসূচি, সভা-সমাবেশ ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ পায়। ইতিমধ্যেই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামি এ আসনের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা ইউনিট গুলো নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে নিয়েছে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামি ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিক ভাবে এ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। আর এ কারণে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামিসহ অন্যান্য দলগুলোর দলীয় কর্মসূচি পালনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক গণসংযোগ এবং প্রচার-প্রচারণার কাজ দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। এ-সব দলের প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার ও দেয়াল লিখনে ছেয়ে যাচ্ছে গোটা নির্বাচনী এলাকা। কোথাও কোথাও প্রার্থীদের সমর্থনে তৈরি করা হয়েছে সুদৃশ্য তোরণও।

আর এ-সব প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগের অগ্রভাগে রয়েছেন বিএনপি দলীয় একমাত্র প্রার্থী ও-ই অঞ্চলের জনপ্রিয় নেতা মো. শরীফুল আলম। তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগের পাশাপাশি জেলার ছয়টি নির্বাচনী এলাকায় ঘুরে ঘুরে দল গুছানো এবং দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দলকে আরও জনবান্ধব হিসাবে গড়ে তোলার কাজ করছেন।

বিএনপির একমাত্র প্রার্থী মো. শরীফুল আলম বলেন, “পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে এ আসনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দলীয় কর্মসূচি পালন এবং হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, নিপীড়ন-নির্যাতনের ইতিহাস বুকের তাজা রক্ত দিয়ে লেখা। সড়কপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে এ আসনের বিএনপি দলীয় ৩ নেতাকর্মী আইনশৃংখলা বাহিনীর গুলিতে শহিদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন শত-শত নেতাকর্মী। উপরন্তু; এ-সব হত্যাকাণ্ডে সাজানো মামলায় আমাকে এবং নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এর আগে আমি দলীয় প্রার্থী হিসাবে যে কয়টি নির্বাচন করেছি, সে-সব নির্বাচনে আমার ব্যাপক জনসমর্থন- জনপ্রিয়তায় দিশেহারা হয়ে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি আমার অফিস- বাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে এবং নেতাকর্মীদের ওপর পাক হানাদার বাহিনীর মতো হামলে পড়েছে। তারা বার-বার বিজয় ছিনিয়ে নিতে পেরেছে -কিন্তু মনোবল ও চেতনা ছিনিয়ে নিতে পারেনি একবার-ও। আগামী নির্বাচন হবে এ আসনের ইতিহাসের নজিরবিহীন রেকর্ড গড়ার নির্বাচন। ইনশাআল্লাহ।”

অপরদিকে, অন্য উল্লেখযোগ্য দলের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই ভৈরব উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা কবির হোসাইনকে তাদের একমাত্র প্রার্থী হিসাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে।

মাওলানা কবির হোসাইন বলেন, ‘স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর জামায়াতে ইসলামি সম্পর্কে মানুষের ধারণা পাল্টছে, গণসম্পৃক্ততা-ও বেড়েছে। এ ছাড়া ভালো ফলাফলের আশায় আমি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছি।’

এখানে বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলনের-ও রয়েছে একক প্রার্থী। দলের সহযোগী সংগঠন ইসলামি শ্রমিক আন্দোলনের কিশোরগঞ্জ জেলার সভাপতি ও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ভৈরব উপজেলার সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মদ মূসা খান-ও একমাত্র প্রার্থী হিসাবে কাজ করছেন।

মুহাম্মদ মূসা খান বলেন, ‘আমি আগের বিতর্কিত রাতের নির্বাচনেও এ দলের প্রার্থী হিসাবে আমি ১৮শ’ ভোট পেয়েছি। এবার শঙ্কামুক্ত নির্ভেজাল ভোটে আমার ফলাফল অনেক ভালো হবে।’

এ আসন থেকে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি)’র প্রার্থী হিসাবে কাজ করছেন সিপিবি’র কুলিয়ারচর উপজেলার সম্পাদক ডা. হাবিল বাঙালি। তবে, জাসদ (রব)সহ সমমনা অন্যান্য ডান ও বাম ঘরানার দলগুলোর প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগের মতো কোনো কর্মকাণ্ড এখনও দৃশ্যমান হয়নি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, এ আসন থেকে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী জিল্লুর রহমান, ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মজিবুর রহমান, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি দলীয় প্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দীক, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী জিল্লুর রহমান, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ড. আবদুল লতিফ, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী জিল্লুর রহমান, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাজমুল হাসান পাপন নির্বাচিত হন ।

কিশোরগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৬৭ নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জ-০৬ আসনে ২ লাখ ০৫ হাজার ৫০৭ জন পুরুষ ও ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯০ জন মহিলা ও ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারসহ সর্বমোট ৩ লাখ ৯৯ হাজার ১৯৯ জন ভোটার রয়েছে। এ ছাড়া ১৪২ টি ভোট কেন্দ্র এবং পুরুষদের জন্য ৩৯৭ টি এবং মহিলাদের জন্য ৪৭৭টি বুথসহ মোট ৮৭৪ টি বুথ ও অস্থায়ী ১৮ টি বুথ বা কক্ষ রয়েছে।

নির্বাচন কিশোরগঞ্জ বিএনপি জামায়াত

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম