ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর কলাবাগানে শিক্ষাবিদ ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ড. আব্দুল ওয়াদুদের বাসায় পুলিশের উপস্থিতি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা অথবা মামলার আসামি না হলেও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অনুরোধে পুলিশের তিন সদস্য গভীর রাতে ওই বাসায় যায়। এর আগে থেকে বিএনপির প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী বাসাটি ঘিরে রাখে। পুলিশ সদস্যদের নির্দেশে নিরাপত্তা প্রহরী বাসার মূল ফটক খুলে দেন। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
মূল ফটক খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাসায় ঢুকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার পাখি লুট করে ১৫ থেকে ২০ জন। এসব পাখির হদিস মিলছে না। ফ্ল্যাটের দরজা ভাঙার সময়ও পুলিশের ভূমিকা ছিল বিতর্কিত। এরপর ওয়াদুদের কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয় এবং দুই লাখ টাকা নেওয়াও হয়। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কমসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার বরাবর ওয়াদুদ লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলাবাগান থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান, এসআই বেলাল ও জিহাদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম যুগান্তরকে বলেন, রাত পৌনে ৪টার দিকে ওসি আমাকে মেসেজ দিয়েছেন। ওই সময় দেখতে পাইনি। সকালে দেখেছি। মেসেজে লিখেছেন, ‘একটা খবর পেয়ে আমরা অপারেশনে গেছি স্যার। তার বয়স ৭০ বছরের ওপরে, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। বয়স বেশি ও রোগে আক্রান্ত বিধায় তাকে গ্রেফতার করা থেকে বিরত রইলাম।’ তিনি বলেন, পরে আমাকে আর কিছু বলেননি, আমি জানিও না। টাকা নিচ্ছে-এমন অভিযোগ গুরুতর। আসামিকে ধরতে গিয়ে যদি মনে হয় বয়স বেশি, ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে তাহলে ছেড়ে দিয়ে আসলে অভিযোগ উঠবে কেন। ছেড়ে দিয়ে আসা ঠিক হয়নি। ধরে আনা উচিত ছিল। তিনি আরও জানান, আসলে কী হয়েছিল; তা বিস্তারিত জানতে রমনা বিভাগের এডিসি জিসানুল হকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রমনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, অপারেশন পরিচালনার কিছু নীতিমালা আছে, আইন আছে। সে অনুযায়ী করবে। অভিযানের সময় সাধারণ জনগণ বা অন্য কোনো মানুষ যাওয়ার কথা নয়। অপারেশনের সময় অন্য লোক কেন গেল, তারা কেন লুটপাট করল, পাখি নিয়ে এলো-এগুলো উদ্বেগের বিষয়। অভিযানের প্রক্রিয়ায়ও কিছু ভুল ছিল। ওই বাসার সিসিটিভির ডিভিআর-কে নিয়ে গেল তাও পুলিশ বলতে পারছে না। এসব বিষয়ে কিছু অসংগতি দেখা গেছে। তদন্তে আসল ঘটনা বের হবে বলে মনে করেন তারা।
রাজধানীর কলাবাগান থানার সোনারগাঁ রোডের ২২/২ নম্বর রোডের ড. আব্দুল ওয়াদুদের বাড়ির নাম ‘রিনা ডেলী’ হলেও স্থানীয়দের কাছে সেটি পাখি বাড়ি নামে পরিচিত। তিনতলা বাড়িটি পাখপাখালিতে ভরা। বাড়ির ভেতরে উঠান। এর দুই পাশে অসংখ্য খাঁচায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। বেশ কিছু খাঁচা খালি দেখা গেছে। বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী লুৎফর রহমান বলেন, পুলিশের পোশাক পরা দুজনের সঙ্গে আরও ১৫ থেকে ২০ জন ভেতরে প্রবেশ করে। আমার ঘাড়ে তালা দিয়ে আঘাত করে একজন। আমি ভয়ে কিছুই বলতে পারিনি। এ সময় যে যার মতো পাখি লুট করে। বাসার ম্যানেজার আব্দুর রহিম জানান, নিচতলার সিসিটিভির ডিভিআর খুলে নিয়ে গেছে, গেটে থাকা একটি ফ্যানও নিয়ে গেছে। তিনতলা ভাঙচুর করা হয়েছে। ব্লু গোল্ড ম্যাকাও, গ্রিন উইন ম্যাকাও, কাকাতোয়াসহ প্রায় ৫০ জোড়া দামি পাখি লুট হয়েছে। এর বাজার মূল্য ৫০ লাখ টাকা। তাদের তাণ্ডবে একটি গর্ভবতী হরিণ মারা গেছে।
ড. আব্দুল ওয়াদুদ যুগান্তরকে জানান, ভয়ে বাসায় যেতে পারছি না। এর আগে ৫ আগস্টও আমার বাড়িতে হামলা হয়। আমি বঙ্গবন্ধুর ভক্ত এটা কী আমার অপরাধ। কারা হামলা করেছে-জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘আপনি খোঁজ নেন। এলাকার একটি মুদি দোকানিও বলতে পারবে কারা হামলা করেছে।’
সূত্র জানায়, ২৯ এপ্রিল রাতে কলাবাগান থানা বিএনপির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম ও সহসভাপতি মান্নানের নেতৃত্বে ওয়াদুদের বাসায় হামলা করা হয়। ওয়াদুদকে ফ্যাসিস্টের দোসর উল্লেখ করে তাকে গ্রেফতার করানোর চেষ্টা করা হয়। তাদের সঙ্গে আসা লোকজন পাখি নিয়ে যায়। এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে মঈনুল ইসলামকে ফোন করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। আর সহসভাপতি মান্নানের ফোন রিসিভ করে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয, ‘স্যার ফোনের কাছে নেই।’
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কলাবাগান থানার বরখাস্ত ওসি মোক্তারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনার সময় আমি উত্তরার বাসায় অবস্থান করছিলাম। কলাবাগান থানা বিএনপির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম আমাকে ফোনে জানান-বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে হত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা ড. ওয়াদুদের বাসা তারা ঘেরাও করেছেন। দ্রুত পুলিশ পাঠিয়ে তাকে গ্রেফতার করুন। আমি মব ঠেকাতে তাৎক্ষণিক ওই এলাকায় দায়িত্বে থাকা এসআই বেলালকে ঘটনাস্থলে যেতে বলি। একই সঙ্গে ডিসি স্যারকে বিষয়টি জানিয়ে রাখি। পরে এসআই বেলাল আমাকে জানায় ওয়াদুদের নামে কোনো মামলা নেই। তার বয়স ৭০ বছরের বেশি ও নানা রোগে আক্রান্ত। তখন পুলিশ সদস্যদের চলে আসতে বলি। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই।

