Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল

শিক্ষাবিস্তারের সফল ইতিহাস

Icon

মো. মোস্তাকিম আহমেদ, পুরান ঢাকা

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল

ছবি: সংগৃহীত

১৮৩৫ সালের ১৫ জুলাই। অখণ্ড ভারতের প্রথম সরকারি স্কুলের আত্মপ্রকাশ হলো ঢাকায়। সদরঘাটের অদূরে ১নং লয়াল স্ট্রিটে যে ইতিহাসের সূচনা হলো, তার নাম ‘ঢাকা ইংলিশ সেমিনারি’। ১৯৪১-এ এই স্কুল থেকেই জন্ম হয় ‘ঢাকা কলেজ’র। তখন স্কুল শাখার নাম পালটে রাখা হয় ‘ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল’। এ অঞ্চলের পশ্চাৎপদ জনগণকে পাশ্চাত্য ভাষা ও আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কালের বিবর্তনে স্কুলটি হয়ে ওঠে দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের অংশ। প্রায় দুইশ বছর শিক্ষার আলো ছড়িয়ে জন্ম দিয়েছে বহু কীর্তিমানকে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঢাকার ইতিহাসে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনা ও আধুনিক মননশীলতার বিকাশে এ স্কুলের বড় ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ সৃষ্টিলগ্ন থেকে দেশ পরিচালনায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের কেউ না কেউ ছিলেন এ স্কুলসম্পৃক্ত। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রাখছেন তারই ধারাবাহিকতা।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে ঢাকা জেলার কালেক্টর স্কিনার স্কুল গভর্নিং বডির প্রথম সভাপতি ও জেলা সার্জন ডা. জেমস টেইলর স্কুল সচিবের দায়িত্ব নেন। রিজ নামক একজন দক্ষ ইংরেজ শিক্ষককে স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হয়। ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়টি ১৯০৮ সালের জুন পর্যন্ত পরিচালিত হয়। পরের মাসে এটিকে বিদ্যালয় পরিদর্শকের তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়। তখন থেকেই বিদ্যালয়টি জিলা স্কুলের মর্যাদা পেয়ে আসছে। তবে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

১৮৭২ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয়রাই স্কুলটি পরিচালনা করেন। ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম প্রধান শিক্ষকের পদ পান কৈলাস চন্দ্র ঘোষ। পরে রত্ন মণি গুপ্ত (১৮৮৮-১৮৯৬) পরিচালনায় আসেন।

এ সময়ে বাংলা, বিহার ও আসাম প্রদেশ নিয়ে গঠিত প্রেসিডেন্সি বেঙ্গলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নয়বারের এন্ট্রান্স (এসএসসি) পরীক্ষায় আটবারই প্রথম হয় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল।

বর্তমানে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. হাবিব উল্লাহ খান। প্রভাতি ও দিবা শিফট মিলে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৩৪ জন। শিক্ষক ৫৩ জন। স্কুলের বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. নোমান হোসাইন বলেন, আমি ১৯৯২ সাল থেকে কলেজিয়েট স্কুলে আছি। দেশের শিক্ষাবিস্তারে এ বিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। খাতাকলমে শিক্ষকের পোস্ট ৫৩ হলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৩৮ জন। দুই হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে এই অল্প শিক্ষককে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া ক্লাসরুম ও খেলার মাঠের সংকট রয়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ার আগ্রহ উঠে গেছে।

বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষকরা জানান, একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম যেমন: ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বিতর্ক ও কুইজ প্রতিযোগিতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন এবং নানা ধরনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড। এছাড়া স্কাউটস, বিএনসিসি ও রেড ক্রিসেন্ট দল বিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে যুক্ত।

পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর শাসকগোষ্ঠী স্কুলটিকে তার মূল ভবন থেকে সরিয়ে সেই ভবনে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান করে। ফলে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক মতিঝিলে তাদের নিজস্ব ভবনে চলে যাওয়ার পরও ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ভবন ও জায়গা বিদ্যালয়কে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি, যা ছিল ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের নিজস্ব সম্পত্তি। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ জায়গা ও ভবনটি জগন্নাথ কলেজকে অন্যায়ভাবে দিয়ে দেন। এ ঘটনায় স্কুলের সব সাবেক ছাত্র মর্মাহত হন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক ছাত্র স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক কবি সৈয়দ শামসুল হক লন্ডনে চিকিৎসায় গিয়েও কথাসাহিত্যিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কাছে এই বেদনা প্রকাশ করেছিলেন।

পাকিস্তান আমলে সিএসপি ও ইপিসিএস অফিসারদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন এই স্কুলের ছাত্র। অনেকে পরবর্তীকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। দেশবরেণ্য এসব ব্যক্তিত্বের মধ্যে রয়েছেন-ঢাকার নবাব আব্দুল গণি, উদ্ভিদবিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, পদার্থবিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, অমর কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিশিষ্ট কবি ও কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু, শহিদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বাঙালি উপাচার্য ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রকার হীরালাল সেন, সব্যসাচী কথাসাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক, বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত, বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান, তওফিক ইমাম, রাশেদ খান মেনন, বদিউর রহমান, সাবেক সচিব ড. সালেহ্ উদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত, উপাচার্য অধ্যাপক ড. খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. চৌধুরী সাজ্জাদুল করিম, বুয়েটের সাবেক উপাচার্য প্রকৌশলী অধ্যাপক ড. ইকবাল মাহমুদ প্রমুখ।

স্কুল ঢাকা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম