Logo
Logo
×

শেষ পাতা

অসহনীয় দাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অসহনীয় দাবদাহে বিপর্যস্ত পুরো দেশ। তীব্র গরমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। দিনে বা রাতে মিলছে না স্বস্তি। দেশের অন্তত ৬৩ জেলায় বইছে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। এতে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন হিটস্ট্রোকে। এরই মধ্যে মাদারীপুরে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে রোববার দুপুরের পর দেশের কয়েকটি জেলায় বৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আজ সোমবার আরও কয়েকটি জেলায় বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে কিছুটা গরমের তীব্রতা কমতে পারে। তবে কাল মঙ্গলবার নাগাদ দেশের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টির বিস্তৃতি বাড়তে পারে। নিজস্ব প্রতিবেদন, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

কালকিনি-ডাসার (মাদারীপুর) : মাদারীপুরের ডাসারে তীব্র দাবদাহে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ইউপি পরিষদের এক কম্পিউটার অপারেটরের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতে মৃত্যুবরণকারী আশুতোষ উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের সন্তোষ অধিকারীর ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার নবগ্রাম বাজারে নিজ দোকানে কাজ করার সময় আশুতোষ তীব্র গরমে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন তাকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে যান। পরে রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে কালকিনি হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।

চুয়াডাঙ্গা : জেলায় টানা সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রোববার সন্ধ্যায় এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৪ ভাগ। এ পরিস্থিতিতে দিনের বেলায় রাস্তায় চলাচল দুস্কর হয়ে পড়েছে। খেটে খাওয়া মানুষরা কাজে বের হতে পারছে না। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারও জেলায় এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক জামিনুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা আগামী ১৫ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

রাজশাহী : রাজশাহীর তীব্র দাবদাহে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবীরা। প্রখর উত্তাপ এবং রোদের কারণে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। রাস্তাঘাট, বাজার বা অফিসপাড়া-সব জায়গায় মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। কর্মজীবীদের অনেকেই মাথায় গামছা বেঁধে, কেউবা ছাতা বা রোদচশমা পরে রোদের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছেন। তীব্র গরম থেকে সামান্য স্বস্তি পেতে নগরীর বিভিন্নপ্রান্তে মানুষ আশ্রয় নিচ্ছেন গাছের ছায়ায়। কেউ প্রাণ জুড়াচ্ছেন আখের শরবত, লেবুর রস বা ঠান্ডা পানীয় পান করে। তবে তাতেও মিলছে না পরিত্রাণ।

যশোর : পাঁচ দিন ধরে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। রোববার দুপুর সাড়ে ৩টায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় শহরের রাস্তাঘাটে লোকজনের সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। সেই সাথে গরমের কারণে অনেকে খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হননি। অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে শহরের বিভিন্ন এলাকা। শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ কাজের তাগিদে তীব্র গরম উপেক্ষা করে বের হচ্ছেন। তীব্র গরমের কারণে দিনের বেলা বিপণি বিতানগুলোতে ক্রেতার দেখা মিলছে কম।

বৃষ্টির বিস্তৃতি বাড়বে কাল : আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেছেন, সোমবার দেশের কয়েকটি বিভাগে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। এটি বিস্তৃত হয়ে মঙ্গলবার সারা দেশের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। এদিকে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। খুলনা বিভাগের দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দেশের অন্যত্র তা (১-৩) ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এছাড়া রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও যশোর জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগসহ রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, জামালপুর এবং শেরপুর জেলাসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু এলাকা থেকে প্রশমিত হয়ে পারে। তাপমাত্রার মাপকাঠিতে ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। এছাড়া তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শুক্রবার দেশের ৪৫ জেলায়, শনিবার ৬১ জেলায় এবং রোববারও ৬৩ জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহেও তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয় ছিল। কিন্তু বুধবার থেকে তাপপ্রবাহ বাড়তে শুরু করে। শনিবার তাপপ্রবাহ চরম আকার ধারণ করে। রোববারও একই অবস্থা বহাল ছিল।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম