সিভিল সার্জন সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা
স্বাস্থ্যহীন অবস্থায় দেশের স্বাস্থ্যসেবা
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবা স্বাস্থ্যহীন অবস্থায় রয়েছে। তবে এজন্য একে অপরের ওপর দোষ চাপালে হবে না। এর প্রতিকার করতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে স্বাস্থ্য খাতে পরিবর্তনের বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে হবে।
সোমবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দুই দিনব্যাপী সিভিল সার্জন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে প্রথমবার এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে এ সময় বিভিন্ন দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরেন ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন মো. জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর প্রমুখ।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যখন হাজার বছরের বড় পরিবর্তন আমাদের হাত দিয়ে ঘটছে। এ পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি আমরা নিজেরাই। পরিবর্তনের এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। কারণ, আগামী প্রজন্ম আমাদের কাজের মাধ্যমেই ইতিহাস মূল্যায়ন করবে।
তিনি বলেন, এ সময়টা আমাদের জন্য একটি ক্ষুদ্র ‘উইন্ডো অব অপরচুনিটি’। এখনই আমাদের কাজ শুরু করতে হবে। কারণ, এ মুহূর্তে বিশ্বের নজর আমাদের ওপর। আমি নিজেও বুঝতে পেরেছি, আমার ভেতরে অনেক ক্ষমতা আছে। তাহলে এই ক্ষমতা আমি ব্যবহার করব না কেন? তার মতে, ‘পুরোনো ধ্যানধারণা হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়ার এখনই সময়।’
প্রধান উপদেষ্টা সিভিল সার্জনদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের যতটুকু চিকিৎসা সরঞ্জাম বা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, এ পরিস্থিতির মধ্যে যদি আমরা পরিবর্তনের জন্য নিজের মন ঠিক করতে পারি, তাহলে আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার ২৫ শতাংশ উন্নতি হবে। এই সম্মেলন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতে নতুন মানসিকতার উন্মোচন করছি। এর মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য খাতে নতুন পথচলা শুরু। চিকিৎসকরা চাইলে স্বাস্থ্য খাতের ২৫ শতাংশ উন্নতি দ্রুত নিশ্চিত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে শুধু মন ঠিক করতে, আমি আমার কাজটা করব। তাতেই ফল পাওয়া যাবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সময়কে ‘গুহাবাসীর মানসিকতার সময়’-এর সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগের আমল হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। হঠাৎ আমরা গুহা থেকে বের হয়ে এসেছি। এখন আমরা আরেক পৃথিবীর সামনে। সেই গুহার মানসিকতা দিয়ে তো এই পৃথিবী চলবে না। গুহা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখানে দুর্নীতি কমাতে হবে। কাজে লাগাতে হবে পরিবর্তনের সুযোগ। সিভিল সার্জনরা দেশের স্বাস্থ্য খাতের মূল চালিকাশক্তি। আজ যারা এখানে বসে আছেন, তারাই দেশের স্বাস্থ্য খাত। আমরা চাইলে এই খাতের পরিস্থিতি পালটে ফেলতে অথবা খারাপ পর্যায়েও নিয়ে যেতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবা যে স্বাস্থ্যহীন অবস্থায় রয়েছে, সেটা আমরা সবাই বুঝি। এর প্রতিকার করতে হবে। দুনিয়ার যত দেশ আছে, তাদের স্বাস্থ্যখাত আমাদের চেয়ে ভালো করতে পারলে, নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন আমাদের কী গাফিলতি আছে। তাহলে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় সিভিল সার্জনরা মূল কাণ্ডারি। এ খাতে আমাদের যথেষ্ট সাফল্য আছে। কিন্তু ওষুধখাত, যন্ত্রপাতিসহ জনবলের ঘাটতি প্রকট। ফলে দেশের স্বাস্থ্যখাত এখনও অনেকটাই পেছনে। সিভিল সার্জনদের মেধা মনন ও দায়িত্বশীলতাকে কাজে লাগিয়ে চিকিৎসাখাতকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, সাত হাজার সুপার নিউমারি পদ সৃষ্টি করে প্রমোশনের কাজ চলমান। শুধু ডাক্তার নয়, নার্সও নিয়োগ করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিশেষ সহকারি অধ্যাপক ডা. সাইয়েদুর রহমান বলেন, প্রমোশন, পদায়ন, বাজেট এবং ঔষধের অপ্রতুলতা সমস্যার সমাধান হলেই স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি সম্ভব। স্বাস্থ্যখাত পুনর্গঠনে ইউনিক হেলথ কার্ড করা হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দুদিনব্যাপী সম্মেলনের কার্য অধিবেশনগুলো রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে।
