উত্তরপ্রদেশে ২৮০ মসজিদ, মাদ্রাসা, মাজার ধ্বংস
মোদির শিষ্য যোগীর রাজ্যে বিপদে মুসলমানরা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভারতের উত্তরপ্রদেশে ২৮০ মসজিদ, মাদ্রাসা, মাজার ধ্বংস। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভারতের উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রীয় মদদে চলছে একপাক্ষিক ‘ধর্মীয় শুদ্ধিকরণ’। টার্গেট কেবল মুসলমানরাই। এমন এমন দিন আছে, একদিনে একাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হচ্ছে তবু টুঁ শব্দ করতে পারছেন না রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে, মোদি সরকারের ছায়াতলে একের পর এক গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। যোগী প্রশাসনের সরকারি হিসাবেই ধ্বংস হয়েছে ২২৫টি মাদ্রাসা, ৩০টি মসজিদ, ২৫টি মাজার ও ৬টি ঈদগাহ। যার অধিকাংশই ভারতের নেপাল সীমান্তঘেঁষা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায়। ফলে মোদির শিষ্য যোগীর রাজ্যে বিপদে মুসলমানরা। সমালোচকদের মতে, মোদি-যোগী জোটের ‘বুলডোজার রাজনীতি’ এখন আর শুধু অপরাধ দমন নয়-এক ধারাবাহিক সাম্প্রদায়িক দমননীতির সুস্পষ্ট প্রকাশ। এএফপি, এনডিটিভি, দ্য হিন্দু, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
বৃহস্পতিবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের সাতটি জেলায় অভিযান চালিয়ে মোট ২৮০টি মুসলিম ধর্মীয় স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। এক সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এসব স্থাপনা ‘অবৈধ’ভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল এবং সেগুলোর নির্মাণে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়নি। অভিযান চালানো জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে মহারাজগঞ্জ, সিদ্ধার্থনগর, বলরামপুর, শ্রাবন্তী, বাহরাইচ, লাখিমপুর খেরি ও পিলভিট। এই এলাকাগুলো নেপাল সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত। গত কয়েক বছরে ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বিজেপির শাসনে একের পর এক ধর্মীয় বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে রাজ্যটির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। যোগী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো রাষ্ট্রীয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) দীর্ঘদিনের সদস্য। ক্ষমতার মসনদে বসেই একের পর এক মুসলিমবিরোধী পদক্ষেপ হাতে নেন সন্ন্যাসী যোগী। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘লাভ জিহাদ’ আইনের প্রবর্তন। যা মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি বিভ্রান্তিকর ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। বিরোধীরা বলেছেন, ২০১৯ সালের শেষে, ভারতের বিভিন্ন জায়গায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে প্রতিবাদ চলাকালে যোগী শাসনের নিষ্ঠুরতার আরেক চেহারা প্রকাশ পায়। এই আইন ভারতের শরণার্থী ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেয়। শুধু মুসলমানদের জন্য এটি বাতিল করা হয়। এরপরই প্রতিবাদ সহিংস হয়ে ওঠে। তখন প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেন যোগী। এর পর পুলিশ কয়েকটি শহরে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। এতে ২৩ জন নিহত হন, যাদের সবাই মুসলিম। শুধু উচ্ছেদই নয়, আটকসহ নানা ধরনের নির্মম নির্যাতনের স্বীকারও হন মুসলিমরা। ১৮ বছর বয়সি আফনান তার বাবার মৃত্যুর পর বলেছে, ‘আমার বাবা পুলিশি হেফাজতে মারা গেছেন। আমরা এর বিচার চাই।’ চলতি বছর ২০ জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশের সাম্বল জেলার রাইসত্তি পুলিশ স্টেশনে সন্দেহজনক অবস্থায় মারা যান আফনানের বাবা মোহাম্মদ ইরফান। পরিবারের দাবি, মোহাম্মদ ইরফান পুলিশি নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন। এর আগে ২০২২ সালের ২ জুলাইও ঘটে প্রায় একই ঘটনা। সাজিদ আব্বাসির ফিরে আসার অপেক্ষা করছিল তার পরিবার। কিন্তু তার হাস্যোজ্জ্বল মুখের বদলে তারা পেল তার ক্ষতবিক্ষত লাশ। তার পরিবারও দাবি করেছে, আব্বাসিকে পুলিশের হেফাজতে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জুয়া খেলার অভিযোগ ছিল। তাই বলে এর শাস্তি মৃত্যু? এমন প্রশ্ন তোলে তার পরিবার। ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় শীর্ষে ছিল। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ সালে উত্তরপ্রদেশে ৪৫১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। যা ২০২১-২২ সালে বেড়ে ৫০১-এ পৌঁছায়। এছাড়া ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে উত্তরপ্রদেশের বারাবাঙ্কি জেলার একটি ঘটনায় তিনজন হিন্দু মৌলবাদী দুই মুসলিম যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। যদিও তারা বেঁচে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন।
