Logo
Logo
×

শেষ পাতা

‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’য় লাখো মানুষ

নির্বাচনে ৩৩ ভাগ নারী রাখতে হবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’য় লাখো মানুষ

রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ কর্মসূচিতে শুক্রবার শামিল হয়েছিলেন লাখো মানুষ। জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্যদিয়ে অস্থায়ী লাল মঞ্চে টানা প্রতিবাদী গান, নাটিকা ও অভিনয় চলে। সমবেত সংগীতে সব বয়সিরা মেতে ওঠেন। তীরহারা ওই ঢেউয়ের সাগর, কারার ওই লৌহ কপাটসহ জাগরণী গান গাওয়া হয়। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো সঙগীত পরিবেশিত হয়। ‘সমতার দাবিতে আমরা’ স্লোগানের কর্মসূচিতে প্রগতিশীল নারী, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংস্কৃতিককর্মী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। দুপুর ১টা থেকে বিভিন্ন ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে তাদের কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির ৬৪টি সংগঠনের কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন নারী উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা এ কর্মসূচিতে সংহতি জানান। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, নারীমুক্তি কেন্দ্র, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, আদিবাসী ইউনিয়ন, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ নারী জোট, নারী সংহতি, ছাত্রফ্রন্ট (মার্কসবাদী), তীরন্দাজ, শ্রমিক অধিকার আন্দোলন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রভৃতি।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়-মূলত নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। নারীদের প্রতি অবহেলা, অবজ্ঞা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীপ্ত প্রতিবাদ জানাতে ৩১টি স্লোগানের তালিকা করেছেন আয়োজকরা। স্লোগানগুলোতে নারীর অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা, শ্রমিকের অধিকার, ফ্যাসিবাদের বিরোধিতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষেও স্লোগান রাখা হয়েছে।

বিকাল ৫টার দিকে মঞ্চ থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জুলাই আন্দোলনে শহিদ মামুন মিয়ার স্ত্রী শারমীন আক্তার, জয়ন্তী চাকমা ও সামসীয়ারা জামান। ঘোষণা পত্রে বলা হয়, আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ধর্ম কোনোটাই সরল নয়, সমরূপী নয়। জাতীয় ঐক্যের দোহাই দিয়ে নারী বা অন্য কোনো প্রান্তিক গোষ্ঠীর অধিকার, মর্যাদা ও সমাজে ন্যায্য অবস্থানের দাবিকে অস্বীকার করা যাবে না। আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই- কৃষকের ভূমির অধিকার থেকে শুরু করে পরিবেশগত ন্যায্যতা প্রতিটি নারীসংক্রান্ত বিষয় এবং নারীর অধিকার একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজের নির্ণায়ক। সমাজের সবচেয়ে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত না করে সবার জন্য মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করা যায় না।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার ও ভবিষ্যতের যেকোনো সরকারকে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই-নারী, শ্রমিক, জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষাগত সংখ্যালঘু, হিজড়া ও লিঙ্গীয় বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিচয়ের নাগরিকের রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কোনো শর্তাধীন নয়, হতে পারে না। এ মৌলিক বিষয়গুলো হুমকির মুখে রাখলে তা হবে অর্ধ শতকের নারী আন্দোলন এবং জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও ইনসাফের ধারণার পরিপন্থি। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, ছুটির অধিকার, নিরাপদ কর্ম পরিবেশ ও সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়-আমরা লড়ছি নারীর ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য; আমরা চাই-কৃষক হিসাবে তার পূর্ণ স্বীকৃতি। আমরা চাই-শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও বাসস্থানের অধিকার। চাই যৌন ও প্রজনন ক্ষেত্রে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার অধিকার, গোপনীয়তার অধিকার, রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় বিচারিক প্রক্রিয়ায় নির্ভয়ে অংশ নেওয়ার অধিকার। নিপীড়িত নারীর বিচার পাওয়ার, মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন ও সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার। আমাদের লক্ষ্য সম্পত্তিতে নারীর অধিকার ও সব অর্থে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। আমরা লড়ছি প্রতিবন্ধী ও দেশের সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। আমাদের লড়াই পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে, বিচারহীনতার বিরুদ্ধে, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্বের বিরুদ্ধে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, উল্লেখিত মৌলিক নীতিগুলোর অধিকাংশই নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন উপস্থাপন করেছে। ফলে এ কমিশন বিলুপ্ত করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত এবং কুৎসিত প্রচারাভিযান অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একই সঙ্গে সরকার গঠিত কমিশনের সদস্যদের ওপর আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্ট বার্তা দেয়-আমাদের সম্মিলিত অধিকারের একেবারে মৌলিক দাবিগুলোকেও ভয়ভীতি ও হুমকির মাধ্যমে দমন করা হবে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আমরা দেখছি-ঘৃণা-বিদ্বেষের রাজনীতি, হুমকি, সংঘবদ্ধ সহিংসতা অবাধে চলছে। আমাদের ন্যায্য দাবিকে দমন করার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা জানতে চাই-সরকার কাকে তোষণ করার চেষ্টা করছে সংখ্যাগরিষ্ঠের যে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও চরমপন্থা দুর্বলকে পিষে মারে এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজের সম্ভাবনাকে ভয় পায়, সেই অংশটিকে গণতন্ত্র ও সংস্কারের নামে যে প্রহসন কেবল বৈষম্যমূলক ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ন রাখতে চায়, তাকে এসব আমরা চলতে দেব না। অধিকার চেয়ে পাওয়া যায় না, তা আদায় করতে হয় এবং আমরা তা আদায়ে ভয় পাই না।

জাতীয় সংগীত নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম