নির্বাচন কমিশন সভা
প্রার্থীর আচরণবিধি পাশ করেনি ইসি
ভোটকেন্দ্র নীতিমালার খসড়া নীতিগত অনুমোদন কেন্দ্র নির্ধারণে থাকবে না প্রশাসন-পুলিশ * আগে সংসদ না স্থানীয় সরকার নির্বাচন তা নির্ধারণ করবে সরকার
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার খসড়া অনুমোদন করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রধান আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন না হওয়ায় আচরণবিধি অনুমোদন হয়নি। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালার খসড়ায় কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসির সমন্বয়ে যে কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা ছিল তা তুলে দেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫ এর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিধিমালা ও নীতিমালা বিশদভাবে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কমিটি এ নিয়ে কাজ করে কমিশনের কাছে উপস্থাপন করবে। তবে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও অপরাপর সংশোধনীর বিষয় আছে। এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার জন্য হয়তো আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনার জানান, ইসির তত্ত্বাবধানে নির্বাচনি প্রচারণা, স্যোশাল মিডিয়া, দল ও প্রার্থীর প্রত্যয়নসহ নানা ধরনের নতুন বিষয় যুক্ত রয়েছে প্রস্তাবিত আচরণবিধিতে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে বুধবার নির্বাচন ভবনে কমিশনের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অপর চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কমিশনের এ সভা যখন চলছিল, তখন গেটের বাইরে ইসি পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। এ সময় কমিশনকে পক্ষপাতদুষ্ট বলেও অভিহিত করেন তারা।
এ বিষয়ে ইসির মন্তব্য জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আমরা কোনো মতামত দিতে চাই না। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে ও করে যাবে।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচনি সব ধরনের আইনবিধি পর্যালোচনা হয়েছে, তাতে ইসির পক্ষভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া অতীতেও ইসি এ ধরনের পক্ষভুক্ত হওয়ার নজির নেই।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মামলায় ইসি পক্ষভুক্ত না হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আমরা আইনের বলে কাজ করেছি। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের অনুচ্ছেদ ৫০, স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশন আইন, ২০০৯ ধারা ৫৪, স্থানীয় সরকার ও পৌরসভা বিধিমালার ধারা ৫৪, উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার ধারা ৫৬, স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন বিধিমালার ধারা ৫৪-এসবে বলা আছে নির্বাচন দরখাস্তে কাকে পক্ষভুক্ত করা যাবে। সেখানে নির্বাচন কমিশন কে কোনো পক্ষভুক্ত করার আইন নেই। তিনি বলেন, কিন্তু আমাদের দেশে যেটি হয়ে থাকে, যারা দরখাস্ত করেন তারা নির্বাচন কমিশনকে একটি পক্ষ বানান। আমরা ফাইল ঘেঁটে দেখেছি স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি, নির্বাচন কমিশন পক্ষভুক্ত হয়ে আবেদন করেছে কিনা, আপিল করেছে কিনা। আমরা এমন কোনো নথি পাইনি।
আচরণবিধি অনুমোদন করেনি ইসি : বৈঠক সূত্র জানায়, কমিশন সভায় অনুমোদনের জন্য রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার খসড়া উপস্থাপন করা হয়। খসড়ার ওপর আলোচনার একপর্যায়ে একজন বৈঠকে বলেন, আরপিওর অনুচ্ছেদ ৯১খ অনুযায়ী বিধিমালা প্রণয়ন ও সংশোধনের ক্ষমতা ইসির রয়েছে। যেহেতু আরপিও সংশোধন পর্যায়ে রয়েছে এবং কী ধরনের সংশোধনী আসবে তা এখন নিশ্চিত নয়, তাই আচরণবিধিমালা সংশোধন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আরেকজন বলেন, আইন মেনে চলার পরও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি উঠছে। আরপিও সংশোধনের আগে আচরণবিধিমালা সংশোধন করা হলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বৈঠকে এমন আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আচরণবিধিমালা অনুমোদন করেনি কমিশন।
