সাক্ষাৎকার: মো. আব্দুল খালেক
ফ্যাসিবাদের দোসর সচিব ও বিতর্কিতদের অপসারণ চাই
বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক সচিব মো. আব্দুল খালেক।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শুরু থেকেই আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশাসন পরিচালনায় নানাভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা করে এসছি এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। তবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কিছু উপদেষ্টা এবং কর্মকর্তার অদূরদর্শিতার কারণে প্রশাসনে লেজেগোবর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসর সচিব ও চুক্তিভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবি করছি। একই সঙ্গে একজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছি। প্রশাসনে এমন অস্থিরতা অতীতের কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে হয়নি-বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক সচিব মো. আব্দুল খালেক একান্ত সাক্ষাৎকারে যুগান্তরকে এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার আমিরুল ইসলাম
যুগান্তর : বর্তমান প্রশাসনে সবচেয়ে বড় সমস্যা কি বলে আপনি মনে করছেন?
আব্দুল খালেক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রথম দিন থেকেই আমরা সরকারকে নানাভাবে সহায়তা করে এসেছি এবং এখনো করছি। বিশেষ করে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব সমস্যা রয়েছে তা নিরসনে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়েছি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ উপেক্ষা করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় বিরাজমান অস্থিরতা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়গুলোতেও নয়। প্রশাসনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো দাপটের সঙ্গে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব এবং গুরুত্বপূর্ণ ডেস্কে উপসচিব হিসাবে কর্মরত। মাঠ প্রশাসনেও রয়েছে ফ্যাসিবাদের সমর্থক কর্মকর্তাদের সুদৃঢ় অবস্থান। তাছাড়া প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত কিছু বিতর্কিত কর্মকর্তা রয়েছে। তারা সরকারকে নানা ধরনের কুপরামর্শ দিচ্ছে। তাছাড়া চুক্তিত্তিক নিয়োজিতরা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী। তারা স্বৈরাচারের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে নানাভাবে চেষ্টা করেছে। সুতরাং তারা এখন সরকারি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।
যুগান্তর : প্রশাসন গতিশীল করতে হলে আশু করণীয় সম্পর্কে কিছু বলুন।
আব্দুল খালেক : ফ্যাসিবাদের সমর্থক সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত বিতর্কিত কর্মকর্তাদের তালিকা সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে হস্তান্তর করেছি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে দিয়ে বলেছি-ফ্যাসিবাদের দোসর কর্মকর্তাদের অপসারণ এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করতে। তবে তারা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেনি। জুলাই ঐক্য নামে ৮১টি সংগঠণের একটি প্ল্যাটফর্ম থেকেও ফ্যাসিবাদের দোসর ৪১ সচিব ও ১২ ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করছি। তিনি তার পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। কারণ তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। তার ওই পদে থাকার নৈতিক কোনো অধিকার নেই।
তিনি আরও বলেন, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে পদোন্নতি ও পদায়নসংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি গঠন সরকারের রুলস অব বিজনেসের পরিপন্থি। আইন ও বিধি উপেক্ষা করে পদোন্নতি ও পদায়নে এ কমিটি গঠন করা হয়। আমরা বলেছি এই কমিটি বাতিল করতে হবে। আমরা বলেছি প্রশাসনে বিশৃঙ্খলার জন্য এই কমিটি অনেকাংশে দায়ী।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের তরফ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল ২২ মের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান করা হবে। ফ্যাসিবাদের সমর্থক সচিব ও চুক্তিভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করা হবে। কিন্তু গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম আমাদের দেওয়া ওয়াদা সচেতন ভাবে ভঙ্গ করা হয়েছে। আব্দুল খালেক আরও বলেন, আমরা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, তথ্য উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে দেখা করেছি। তারাও কথা রাখেননি।
যুগান্তর : আপনাদের সংগঠনের পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে কিছু বলুন।
আব্দুল খালেক : আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সরকারের দায়িত্বশীল উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের কাছে দাবিগুলো পেশ করেছি। কিন্তু তা অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষা করা হয়েছে। দেখা গেছে অভিন্ন দাবি নিয়ে কর্মচারীদের একাধিক সংগঠনও মাঠে রয়েছে। আমরা তাদের সব ন্যায্য দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি। আমরা জুলাই ঐক্য নামে যে সংগঠনটি ফ্যাসিবাদের দোসর ৪১ সচিব ও ১২ ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করেছে-তাদের দাবির সঙ্গে একমত। এছাড়া সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধন করে বিশেষ বিধান সংযোজনের প্রতিবাদে আন্দোলনরত কর্মচারীদের দাবিকে সমর্থন করছি।
আব্দুল খালেক আরও বলেন, উল্লিখিত দাবি আদায়ে আজ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। আজকের অবস্থান কর্মসূচি হচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চুক্তিভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। আর কোনো আশ্বাসে বিশ্বাস করি না। প্রজ্ঞাপন চাই প্রজ্ঞাপন।
যুগান্তর : আপনাকে ধন্যবাদ।
আব্দুল খালেক : আপনাকেও ধন্যবাদ।

