জাতীয় পর্যায়ে নজরুলের জন্মবার্ষিকী উদযাপন
নজরুলের কবিতা-সংগীতজুড়েই অন্যায়ের প্রতিবাদ ও দেশপ্রেম-ফারুকী * নজরুল আমাদের জন্য সব সময় প্রাসঙ্গিক-আবদুল হাই শিকদার
কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, নজরুলের কবিতা-সংগীতজুড়েই রয়েছে অন্যায়ের প্রতিবাদ ও দেশপ্রেম। নজরুল স্বাধীনতার কবি। তার কবিতা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির প্রেরণা।
২০২৪ সালে নজরুলের চেতনা নিয়েই গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছে। এ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি শিক্ষার্থীর বুকে শহীদ আবরার ফাহাদের চেতনা ও দেশপ্রেম ছিল।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কুমিল্লায় আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠানের প্রথম দিন রোববার তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে যুগান্তর সম্পাদক বিশিষ্ট কবি ও প্রাবন্ধিক আবদুল হাই শিকদার শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, নজরুল আমাদের জন্য সব সময় প্রাসঙ্গিক।
অনুষ্ঠানের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’। রোববার বিকালে নগরীর শিল্পকলা একাডেমিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শুরুতে ‘চেতনায় নজরুল’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও আবদুল হাই শিকদার। এ সময় গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য বিশিষ্ট নজরুল গবেষক কবি আবদুল হাই শিকদার, ইসরাত জাহান শাহীন, সংগীতে রুমী আজনবী এবং আবৃত্তির জন্য নাসিম আহমেদকে নজরুল পদক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে ফারুকী জানান, অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশার সঙ্গে কুমিল্লা থেকেই তার প্রেম শুরু হয়। তিনি বলেন, কুমিল্লার সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক। কুমিল্লা থেকেই তিশার সঙ্গে আমার প্রেম শুরু। আমরা নজরুলের পদচারণার স্থানগুলো খুঁজে খুঁজে শুটিং করেছি।
ফারুকী আরও বলেন, সার্বভৌমত্ব ছাড়া কোনো দেশের স্বাধীনতাই সচল থাকতে পারে না। আমরা অল্প কয়দিনের সরকার। কিছুদিন পরেই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার আসবে। এতে যারাই ক্ষমতায় আসবে, বাংলাদেশকে এমন জায়গায় নেওয়া যাবে না যেখানে অন্যদেশ থেকে এসে প্রেসক্রিপশন দেবে। আমি প্রত্যাশা করি, আগামী দিনে এমন কোনো সরকার আসবে না, যে সরকারের আমলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে আবরার ফাহাদের মতো মেধাবী শিক্ষার্থীদের জীবন দিতে হয়।
আবদুল হাই শিকদার বলেন, কুমিল্লা হচ্ছে নজরুলের শহর। একপাশে নার্গিস, অপরপাশে প্রমীলা আর মাঝখানে নজরুলের সৃষ্টিশীলতার ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে গোমতী নদী। বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং কাজী নজরুল এসবই এক সূত্রে গাঁথা। বহু বছর পরও নজরুল আজ আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক। তিনি সব সময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক। কুমিল্লাকে নজরুলময় শহর বলা হয়। এখানে কবির প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। এ শহরেই তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। এ কুমিল্লাতেই তিনি সাম্যের কবি, দ্রোহের কবি, প্রেমের কবি হয়ে ওঠেন। নার্গিস-প্রমীলার স্মৃতিমাখা মাটিতে আজকের এই পুরস্কারের গুরুত্ব আমার কাছে অনেক বেশি। তিনি বলেন, কুমিল্লাবাসীকে অসংখ্য ধন্যবাদ তারা নজরুলের প্রতিটি স্মৃতিকে আগলে রেখেছেন।
বিশেষ অতিথি শিক্ষাবিদ সলিমুল্লাহ খান বলেন, কবি কাজী নজরুলের কবিতা এবং গান সব সময় জাতিকে জাগ্রত করে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। মুক্তিকামী মানুষকে পথ দেখায়। তিনি ছিলেন আলোর দিশারি। স্বৈরশাসকের কবল থেকে কীভাবে জাতিকে মুক্ত করা যায়, সে পথ তিনি দেখিয়েছেন। তার দেখানো পথেই যুগে যুগে জাতির মুক্তির পথ সুগম হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার, সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিদুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলী, পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান প্রমুখ। পরে বিশিষ্ট শিল্পী ফেরদৌস আরাসহ অন্য শিল্পীরা মনোজ্ঞ নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন।
