Logo
Logo
×

শেষ পাতা

চুয়াডাঙ্গা-খাগড়াছড়ি-হবিগঞ্জ-মহেশপুর-কমলগঞ্জ

আরও ১৭৫ জনকে পুশইন বিএসএফের

পাটগ্রামে যুবককে পুশইনের চেষ্টা গ্রামবাসীর বাধায় ব্যর্থ

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আরও ১৭৫ জনকে পুশইন বিএসএফের

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও দামুড়হুদা, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, ঝিনাইদহের মহেশপুর ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আরও ১৭৫ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। শনি থেকে সোমবার গভীর রাত ও দিনের বিভিন্ন সময়ে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়। তাদের বাড়ি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বলে জানা গেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বসবাস করছিলেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের আটকের পর সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করেছে। পরিচয় নিশ্চিতের পর তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ তিন দফায় ৫৯ বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে। এদের মধ্যে পুরুষ ১৪ জন, নারী ২১ জন এবং শিশু রয়েছে ২৪ জন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার নোনাগঞ্জ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের পুশইন করে। দেশে প্রবেশের পর তাদের আটক করে বিজিবি। রোববার রাত সাড়ে ১১টায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন। আটকরা নড়াইল, খুলনা, ঝিনাইদহ ও কিশোরগঞ্জ জেলার অধিবাসী।

তারা বিজিবিকে জানিয়েছেন, ভারতের গুজরাট থেকে শনিবার বিকাল ৪টার দিকে তারা বিএসএফের হাতে আটক হন। পরে বিএসএফ শনিবার রাত আড়াইটার দিকে সীমান্তের ৬২নং মেইন পিলারের কাছে কাঁটাতারের গেট খুলে তাদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশইন করে। এ সময় বিজিবির কুসুমপুর বিওপির হাবিলদার শিশির হালদারের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করেন।

অপরদিকে রোববার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পৃথক আরেক অভিযানে জীবননগর উপজেলার হরিহরনগর সীমান্তের ৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নবদুর্গাপুর মাঠের মধ্য থেকে বেনীপুর ক্যাম্পের হাবিলদার রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে ৯ জনকে আটক করে। আটকদের মধ্যে ৩ জন পুরুষ, ৩ জন নারী এবং ৩ শিশু রয়েছে। আটকরা কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা। তারা বিজিবিকে জানিয়েছেন, হরিয়ানা পুলিশ তাদের ২৪ মে রাতে জীবননগর উপজেলার সীমান্তবর্তী বিএসএফ ক্যাম্পের সামনে নিয়ে আসে। এরপর বিএসএফের উপস্থিতিতে সীমান্তের ৬২নং পিলারের কাছের কাঁটাতারের গেট খুলে তাদের বাংলাদেশে জোরপূর্বক পুশইন করে। অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের বিজিবি সদস্যরা আটক করে। রোববার রাতে তাদের জীবননগর পাইলট হাইস্কুলের হলরুমে পুলিশি প্রহরায় রাখা হয়েছে।

আটকদের মধ্যে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের সুব্রত মল্লিকের ছেলে বাবুল মল্লিক জানান, তিনি ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদ ও হরিয়ানা শহরে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। কয়েকদিন আগে তাদের বাড়ি-ঘর ভেঙে দেওয়া হলে তারা গৃহহীন হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চলে আসেন এবং নোনাগঞ্জ বিএসএফ ক্যাম্পে আÍসমর্পণ করেন। বিএসএফ সদস্যরা রাত আড়াইটার দিকে গেট খুলে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করে।

অন্যদিকে রোববার সন্ধ্যায় দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা নিমতলী সীমান্তে বিজিবির হাতে ৫ নারী-পুরুষ আটক হন। তারা সবাই কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে পুশইন করার পর বিজিবি দর্শনা পৌরসভার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের পাকা রাস্তা থেকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে আটক করে। তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে পুশইন : খাগড়াছড়ির সীমান্ত দিয়ে নতুন করে ১৯ জনকে পুশইন করা হয়েছে। সোমবার ভোরের দিকে মাটিরাঙা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নের আচালং সীমান্ত দিয়ে তাদের পুশইন করেছে বিএসএফ। তাদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। তাদের ভারতের হরিয়ানা রাজ্য থেকে আটক করে মাটিরাঙা সীমান্ত দিয়ে পুশইন করা হয়। মাটিরাঙা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম জানান, তারা বর্তমানে বিজিবির হেফাজতে রয়েছে। তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই চলছে। এর আগে চলতি মাসে কয়েক দফায় খাগড়াছড়ির রামগড়, মাটিরাঙা, পানছড়ির লোগাং সীমান্ত দিয়ে ৭১ জনকে পুশইন করা হয়।

চুনারুঘাট সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে পুশইন : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সীমান্তের পাহাড়ি এলাকা কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ ১৯ নারী-পুরুষকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে। সোমবার ভোরে সীমান্তের রেমা কালেঙ্গা মধ্যবর্তী ৫৫-এর ৯ সাবপিলার এলাকা দিয়ে বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে পাঠায়। কালেঙ্গা বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার হাবিলদার জাকারিয়া আহমেদ বলেন, তাদের সবার বাড়ি বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায়। তারা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করত।

মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ৫৭ জনকে পুশইন : ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে শনি ও রোববার ৫৭ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। বিজিবি ৪২ জনের খবর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছে। বাকি ১৫ জনের বিষয়ে সরাসরি পুশইনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। মহেশপুর-৫৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ৩ জন পুরুষ, ১৩ জন নারী ও ১৭ শিশুসহ ৩৩ জনকে শনিবার বিকালে ভারতের গুজরাট থেকে বিএসএফ আটক করে। রোববার বেলা আড়াইটার দিকে বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। পরে বিজিবি তাদের আটক করে। এদের বাড়ি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। এর আগে শনিবার ৩ পুরুষ, ৩ নারী ও ৩ শিশুসহ ৯ বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতের হরিয়ানা পুলিশ শনিবার রাতে বাসযোগে জীবননগর সীমান্তবর্তী বিএসএফ ক্যাম্পের সামনে নিয়ে আসে। এরপর সীমান্ত গেট খুলে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।

কমলগঞ্জ সীমান্তে আটক ২১ : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অনুপ্রবেশের সময় নারী ও শিশুসহ ২১ জনকে আটক করেছে বিজিবি। তাদের পুশইন করেছে বিএসএফ। সোমবার সকালে মাধবপুর ইউনিয়নের মতেরবল সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় তাদের আটক করা হয়। বিজিবি জানায়, এরা সবাই কুড়িগ্রামের বাসিন্দা।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জিমনাল সীমান্তে সোমবার দুপুরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে পুশইনের চেষ্টা চালিয়েছে বিএসএফ। তবে বাংলাদেশি গ্রামবাসীর বাধায় ব্যর্থ হয়। পরে হাত-পা বাঁধা ওই যুবককে শূন্যরেখায় রেখে যায় বিএসএফ। এদিকে ফিরে যাওয়ার সময় বাংলাদেশিদের সাতটি গরু নিয়ে যায় তারা। পরে সন্ধ্যায় বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকের পর গরুগুলো ফেরত দিয়েছে।

পুশইন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম